somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"পিসিমার ডায়েরি", পর্ব-৩”

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে টাউট সিদ্দেকের খুঁজ পাওয়া গেলো। সিদ্দিকেরা সাত ভাই। তারা সাত ভাই মিলেই বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী ভারতে পাচারের কাজ করছে। শুনেছি তারা খুবই প্রভাবশালী। অনেকেই তাদের ভয় পায়। সে প্রমাণ অবশ্য আমরা পরে পেয়েছি। আমাদের সাথে থাকা পুরুষেরা সিদ্দিকের সাথে আলোচনা করলেন। এবং জনপ্রতি ১০০ টাকা হারে নির্ধারিত হলো আমাদের ভারত যাত্রা। আমরা ভারতের লাতু শরণার্থী শিবিরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা মোট ছিলাম ৫১ জন। এই ৫১ জন আমরা রাতের আঁধারে বড়লেখার উদ্দেশ্যে প্রথমে যাত্রা শুরু করি। কিছু হেঁটে কিছু নৌকায় পারি দিয়ে আমরা প্রায় দুই রাতে বড়লেখা পৌঁছাই। বড়লেখায় এক পরিত্যক্ত হিন্দু বাড়িতে দিনের বেলা লুকিয়ে বসে থাকার জন্য আমাদেরকে রেখে, অন্য একটি কাজে চলে যায় সিদ্দিক। অবশ্য আমাদের পুরুষদের জানিয়ে যায় যে, সমস্যা হলে তাকে কোনদিকে খুঁজলে পাওয়া যাবে। তবে সমস্যায় পরলে আগে যেন বলি “আমরা সিদ্দিকের লোক”। আমরা নীরব বসে থাকি ঘরের ভেতর।

পাশের আরেকটি ঘরে আরেক টাউটারের আরও কিছু শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। হঠাৎ আমরা চিৎকার শুনি, পাশের ওই পরিত্যক্ত ঘরে। আমাদের পুরুষেরা দরজা খুলে বেড় হলে, আমাদের কাছে ধেয়ে আসে কিছু লোক। এদের মধ্যে যুবক থেকে বেশ বয়স্ক লোকও ছিল। এদের ধেয়ে আসা বুঝতে বাকী রইলোনা আমাদের। আমার স্বামী ছিলেন খুবই সাহসী। তিনি সাহস নিয়ে বলেন “আমরা সিদ্দিকের লোক”। তখন লোকগুলো আমাদের দরজা থেকে চলে যায়। আমরা তখন সাহস ফিরে পাই। এবং বারান্দায় কেউ কেউ চলে আসি। আমি সব সময়ই ছিলাম একটু কৌতূহলী। পাশের ঘরে কি হচ্ছে দেখার জন্য, আমিও বারান্দায় চলে আসি। দেখলাম, তারা লুটপাট চালিয়েছে। এবং তা ভয়ংকর ভাবে। মানুষগুলো তাদের শেষ সম্বল টাকা, গয়না না দেয়াতে এলোপাতারী দা’ দিয়ে কোপাচ্ছে! দেখলাম, একটি ছোট ছেলেকে বয়স আনুমানিক ১২/১৩ বছর হবে, তার গলায় দা’ দিয়ে কোপ মেরে প্রায় অর্ধেকটা কেটে দেয়। বাচ্চাটা মাটিতে লুটিয়ে পরে কাতরাতে থাকলো। তার মা-বাবা আহাজারি করছে। ভয়ে অন্য লোকগুলো নড়তেই পারছেনা। রক্তে উঠোন ভেসে যাচ্ছে! তখন ভয়ে আমরা আমাদের ঘরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেই। কিছুক্ষণ পর, ওরা চলে যাওয়ার পরে, দরজা খুলে এসে দেখতে পাই, কিছু লোকের মারাত্মক জখম হয়েছে। আর লাশ হয়ে ওই ছেলেটির নিথর দেহ পরে আছে। তার মা-বাবা অজ্ঞ্যান হয়ে তার কাছে পরে আছে। সবাই কাঁদছে। আমরাও কাঁদছি। আমরা আবারও দরজা লাগিয়ে ঘরের ভেতর বসে থাকলাম।

............................................. চলবে......

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×