ঘরের মেঝেতে এখানে ওখানে ছড়ানো টিস্যু পেপার। গতকালকের কান্না ভেজা নোনা টিস্যু। বিছানার সাদা চাদরে নীলচে ছোপ। কান্না ভেজা নীল ওড়নাটার রঙ লেগেছে চাদরে। পিলোকভারের ভাঁজে ভাঁজে চোখের আর নাকের জলের শুকনো দাগ।
কতটুকু অশ্রু থাকে একটা মানুষের শরীরে? সকালবেলার ফোলা চোখ নিয়ে আয়না দেখতে দেখতে ভাবছিল সে। ভাবতে ভাবতে ল্যাপটপ খুলে গুগলে সার্চ দিয়ে দেয়। খানিক পরে দেখবনা দেখবনা করেও চ্যাটবক্সটা ওপেন করেই ফেলে।
At the end of the day who will ask you "how do u feel?"
নিজের চোখকে বিশ্বাস হয়না! ঠিক এই লাইনটা..., ঠিক এই কথাটা ভেবেই কাল রাতের এত অশ্রুপাত, হাই ভলিউমে মিউজিক ছেড়ে হাত-পা ছুঁড়ে কান্না! শেষমেশ গাদাখানিক স্লিপিং পিল গিলে নিস্তেজ হয়ে এলিয়ে পড়া... গোটা পৃথিবীটা যখন দুলতে দুলতে এগিয়ে আসছিল নাকের ওপর তখনো মনে মনে হাতড়ে ফিরছিল-
"Who is there for u?"
কে আছে? কোথায় আছে একটু ছাড়? আছে না কি কিছু ডিস্কাউন্ট আমার জন্য? নির্ভেজাল ভালবাসা নামে কোনো বস্তু আছে কি?
নেই? কে জানে! আবার চোখ দিল মেসেজে-
...শোনো, পৃথিবীতে ছাড় বলতে কিচ্ছু নেই। সবাই যেভাবে পারবে আদায় করে নেবে তোমাকে। কড়ি কড়ি হিসেব করে কিনে নেবে, বুঝে নেবে পাওনামত। তাই এসব পাগলামী ভুলে যাও।
এই যে আমি, আমি কি তোমার সেই ডিস্কাউন্ট শপ? মূল্যছাড়ে পাবে বুঝি আদর, আহ্লাদ, প্রেম, ইচ্ছেমত ভালবাসা উপহার? পাবেনা। মনে রেখো, সবাই খুব যত্ন করবে তোমায়। রাখবে প্রিয়জনের তালিকায়। তবু তা নিঃস্বার্থ নয় কখনই। শুধু অভিনয় করবে, কেউ কম কেউ বেশি। তাতে খাদ মেশানো থাকবে বটেই। কারো ১৮ ক্যারেট, কারো ২৩ বা ২৪ ক্যারেট সোনার মত।
তোমাকে যা করতে হবে তা হল, শুধু মুখোশ পরে নাম ভূমিকায় অভিনয়। পাকা অভিনেতার মত, দক্ষভাবে তোমার রোল প্লে করে যাও। শান দিয়ে যাও বুকের পাঁজরের কোনো ১টা হাড়ে। তারপর সুযোগ বুঝে হাড়ের তীক্ষ্ম ফলাটা বিঁধিয়ে দাও আরেক মুখোশ পরা ছায়ামূর্তির বুকে। এভাবে যখন সবকটা কলের পুতুল কে হত্যা করে ফিরিয়ে আনতে পারবে তাদের আসলরূপে, তখনি মিলবে তোমার মুক্তি।
জেনে যাবে তুমি, "At the end of the day who will be there for u"
(মেসেজ টা কার, কে দিল এই ফুস-মন্তর আবেগী আনকোড়া মেয়েটাকে এসব প্রশ্ন অবান্তর। প্রয়োজনীয় কথাটা হল, স্বার্থপর এ সমাজে প্রায় অচল সেই মেয়েটা তারপর থেকে যেন আমূল পাল্টে গেল। সবাই দেখল সে আর ফুঁপিয়ে কাঁদে না, আয়না ভাঙেনা, ল্যাপটপের পর্দায় কফি ছুঁড়ে মারে না। মেকি ভালবাসা পেলে রেগে যায় না, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে রক্ত বইয়ে দেবার স্বভাবটাও আর নেই। এখন ছদ্মবেশী বন্ধু, প্রেমিক, আত্মীয় সবার সাথে খাতির হয়েছে তার। তাল মিলিয়ে পা ফেলতে শিখেছে সবার সাথে!
কেউ তো জানেনা, সবার মুখোশহীন নগ্ন রূপটা সে এখন খোলা চোখে দেখে নেয়। মুচকি হেসে ভেংচি কাটে, আর খুব গোপনে শান দেয় বুকের পাঁজরের একেকটা হাড়। সতর্ক পাহারায় অপেক্ষা করে সুযোগের। শিকারীর মত একদিন সব মুখোশওয়ালাকে হত্যা করে নতুন জীবন দেবে সে ।
স্বচ্ছ, সাদা নিরেট জীবন।
নো ভান, নো ভনিতা, নো ভেজাল... )