somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জাহিদুল হক শোভন
এই শহরে অনেক হাজার হাজার ছেলে আছে যারা চুপচাপ থাকে, কথা কম বলে। পৃথিবীতে তারা বোকা, লাজুক, হাঁদারাম নামে পরিচিত। আমাকে এর সাথে তুলনা করলে তেমন একটা ভুল হবে না। নিজের ব্যাপারে বলাটা অনেক কঠিন। তবে নিজেকে মাঝে মাঝে অনিকেত প্রান্তর ভাবি।

গল্প: মায়াজাল

২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটাকে বকা দেওয়ার কিছুক্ষন আগেও আমার মন ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এই ভাবে আমার ভিতরে খারাপ লাগা ছুয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। কিছুক্ষন আগে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য আমি যখন বাসে উঠি ঠিক তখন আমি ছেলেটাকে দেখতে পাই সে দৌড়ে দৌড়ে আসছিল।এদিকে বাসটা ছেড়ে দেয়। দৌড়াতে দৌড়াতে কোন রকম বাসে উঠে। বাসে উঠেই দ্রুত নিশ্বাস নিয়েই আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। আমি এই হাসির কারণ বুঝেও না বুঝার ভান করে চোখ সরিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানি এই হাসিটা কেন দিয়েছে। এই হাসিটার কারণ হলো এই বাসে সে উঠতে পেরেছে এবং আমার সাথেই যাচ্ছে।

ভার্সিটির কাছে এসে বাস থেকে যখন নেমে কিছুটা হেটে গেলাম ঠিক তখন ছেলেটাও আমার পিছন পিছন হাটতে লাগলো। আমার কেন যেন একটু অস্বস্তি লাগলো। আমি ওর দিকে ফিরে তাকাতেই ও আরও একটা হাসি দেয়। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে কোমড়ে এক হাত রেখে আর এক হাতে ইশারা করে ওকে ডাক দিয়ে বললাম “এই দিকে আসুন তো?” ছেলেটা এদিক ওদিক তাকিয়ে এমন একটা ভাব ধরে বললো “আমাকে বলছেন?” আমি মনে মনে বললাম হ্যাঁ তোমকে বলছি ফাজিল ছেলে।সামনে আসো তোমার গালে দুটো থাপ্পড় লাগাই। কিন্তু এটা না বলে আমিও একটা হাসি দিয়ে বললাম “জ্বি ভাইয়া আপনাকে বলছি।” সে আমার কাছে আসতেই আমি চোখের পাপড়ি কয়েকবার মিটি মিটি করে বললাম “কি চান আপনি? সমস্যাটা কি আপনার ভাইয়া? কিছু দিন আগে একটা উপকার করলেন বেশ ভালো কথা। মানুষ মানুষের জন্য উপকার করে। তাই বলে রোজ রোজ আপনি এই ভাবে আমাকে ফলো করবেন ভাইয়া? এটা কি ঠিক বলুন? এটা কি ভালো দেখায়? আপনাকে না আমি ভালো ছেলে মনে করি ভাইয়া। ভালো ছেলেরা কি এমন করে ভাইয়া?” সে কিছুক্ষন সময় নিয়ে বললো “আমি তো খারাপ কিছু করিনি। খারাপ কিছু কি করেছি? আমি তো ভালো কাজই করেছি।এই যে কথায় কথায় আমাকে ভাইয়া বলে ডাকেন সে হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না। আপনি ঠিক মত ভার্সিটিতে আসতে পেরেছেন কিনা।বাসে তো কত রকমের মানুষ উঠে। তাদের কাছে নিরাপদ কিনা এসব তদারকি করার জন্য এই ভাইয়ার একটা দায়িত্ব আছে তো। আমি কি ভুল বললাম?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না।বেশ খানিকটা অবাক হলাম। তারপর বললাম “আপনাকে না কষ্ট করে আমার দায়িত্ব নিতে হবে না। আমার দায়িত্ব আমি নিজে নিতে পারি ভাইয়া।” সে একটা হাসি দিয়ে বললো “সব ভাইয়ায়ায়ার বোনেরা এমন করেই বলে। কিন্তু তাই বলে কি ভাইয়ায়ারা বোনের খোঁজ রাখবে না তা তো হয় না।” আমার মেজাজটা একটু খারাপ হলো। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম “আপনি ভাইয়া শব্দটাকে এমন করে বলছেন কেন? ভাইয়ায়া।এই ভাইয়া ডাকার কারনেই তো সমস্যা তাই না? আচ্ছা ঠিকাছে আমি আপনাকে ভাইয়া বলে ডাকবো না আর। আমার খেয়াল রাখতে হবে না।আপনি আমাকে এইভাবে রোজ রোজ ফলো না করলে আমি খুব খুশি হবো।” সে কি যেন একটু ভাবলো। আমি কি সে সে বা ছেলেটা করে যাচ্ছি তার নাম জাহেদ। প্রথম যেদিন তিনি আমার উপকার করেছিল নিজে থেকেই উনার নামটা বলেছিল। তিনি বললেন “আচ্ছা ঠিকাছে। সত্য বলতে কি এই ভাইয়া ডাকটা আমার কাছে ভালো লাগছিল না। তবে ভাইয়া হিসেবে খোঁজ না রাখলেও আপনার প্রতিবেশি হিসেবে তো খোঁজ রাখতেই পারি কি বলুন।কিছুক্ষন আগেই তো বললেন মানুষ মানুষের জন্য। আমি তো বেশি দুরের মানুষ না। আপনার পাশের এলাকার মানুষ। সবাই এমন দায়িত্ব নিতে চায় না। একমাত্র আমিই নিয়েছি।ভেবে দেখুন কি একটা ভালো কাজ করেছি তাই না? আমাকে এখন আপনার একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার।” আমার সত্যি মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হয়ে গিয়েছিল।একটু রেগে বললাম “আপনার দু গালে আমি দুটো ঠাস ঠাস করে চড় লাগাবো। মজা করেন আমার সাথে? ফাজলামো করেন? আর ফের যদি আমাকে ফলো করতে দেখি বা আমার পিছন পিছন দেখি খুব খারাপ হয়ে যাবে।” জাহেদ যখন কিছু বলতে চাচ্ছিল আমি ওকে চুপ করে দিয়ে বললাম “চুপ একদম চুপ। আর একটা কথা না বলে সোজা হাটা দিবেন। আর তা না হলে আমি এখন লোক ডাকবো। কথা কানে গিয়েছে?” তারপর সে একটু তাকিয়ে হাটতে থাকে। আমার এমন কথায় ওর চেহারাটা মুহুর্তেই কেমন যেন হয়ে গেলো। এমন করে বলাতে আমি স্বস্তি পাচ্ছিলাম। হাটতে হাটতেই সে বার বার ফিরে তাকিয়েছিল।আর আশ্চর্যের ব্যাপার এখন ভার্সিটির একটা ক্লাস করতেই ওর চেহারাটা বার বার আমার চোখে ভাসছে। কি মায়া মায়া মুখ নিয়ে আমার দিকে বার বার ফিরে তাকিয়েছিল। কিন্তু এমন কেন হচ্ছে? কেন আমার খারাপ লাগবে? আমি তো ঠিক কাজই করেছি। জাহেদকে বকা দেওয়া আমার কি ঠিক হয়েছে? এমন করে তো না ও বলতে পারতাম।তবু আমি এই মন খারাপ নিয়ে ক্লাস করতে লাগলাম।

ক্লাস শেষ করতেই নিলি আমাকে বললো “জেনিয়া আজকে যাবি বই মেলায়? তুই তো সেদিন গেলি না।” আমি একটু ইতস্তত হয়ে বললাম “দোস্ত আজকে সত্যি আমার মন ভালো নেই। তোদের তো বলেছি জাহেদ ছেলেটা আমাকে প্রতিদিন ফলো করে।কিন্তু আজকে মুখের উপর ইচ্ছামত বলে দিয়েছি।চেহারাটা না ঠিক এত্তোটুকু করে ফেলেছে। এমন করে আমার বলা উচিৎ হয়নি।” নিলি আর সায়রা আমার কথায় একটু অবাক হয়ে ঝিম মেরে থাকলো।আমি আবার বললাম “ধুর এমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? তোরা যা।” এটা বলেই আমি ওদের পাশ থেকে চলে আসি। হাটতে হাটতে যখন ভার্সিটির বাহিরে এসে আকাশের দিকে তাকালাম দেখলাম আকাশটা কেমন যেন রুপ পরিবর্তন করেছে। সকাল বেলাও আকাশটা এমন ছিল না। একটা রোদমাখানো সকাল ছিল।আমি অনুধাবন করি আকাশ আর আমাকে নিয়ে। আকাশটাও আমার মনের মত এমন করে পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।মেঘময় আকাশটা কেমন করে যেন কয়েকটা ডাক দিল। ডাক দিয়ে আকাশের বুক থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি নামিয়ে দিল। এই বৃষ্টির শব্দটা আমার ভিতরটাকে নাড়িয়ে দেয়। আমি কোন রকম তড়িগড়ি করে একটা দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। দোকানের টিনের চালে যখন বৃষ্টি ঝড়ঝড় করে পড়ছে তখন এই শব্দের আওয়াজটা আমার ভালো লাগলো। এমন শব্দ শুনলে আমার ভিতরে বোকা বোকা ইচ্ছে তৈরি হয়। ইচ্ছে হয় শহরের বুকে বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পরতে। টিনের চাল থেকে বৃষ্টির পানি পরার মাঝে আমি হাত দিয়ে ছুয়ে দিতেই জাহেদ হঠাৎ করে কোথা থেকে ছাতা মাথায় দিয়ে আমার সামনে এসে বললো “আমি জানতাম ঝামেলায় পরবেন। তাই বাসা থেকে দুটো ছাতা নিয়ে বের হয়ে পরেছি। দায়িত্ব বলে কথা বুঝলেন।” আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। এই সকাল বেলাই ওকে বকা দিলাম। আর এখন এমন ভাবে কথা বলছে যেন ওর সাথে আমার কোন কথাই হয়নি। আমার চুপ থাকা দেখে ও আবার বললো “আকাশের অবস্থা যখন দেখলাম সুবিধার না তখন আপনার কথা মনে পড়েছে।আমি কি সঠিক সময়ে এসেছি?” আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না। আচ্ছা এই ছেলেটাকে এখন আবার খুব করে বকা দেওয়া দরকার? আমি বললাম “আপনার কি লজ্জা করে না?” সে একটা হাসি দিয়ে বললো “লজ্জা কেন লাগবে? দায়িত্ব পালন করতে আবার লজ্জা কিসের?” আমার কেন যেন একটু হাসি পেল। কিন্তু আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখলাম। শহরটা বৃষ্টির টপটপ ফোটায় ভিজে একটা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।এই স্নিগ্ধতা কখন কিভাবে ছুয়ে দেয় আামার জানা নেই। সে বললো “কি দাঁড়িয়ে থাকবেন? যাবেন না?” আমার এই মুহুর্তে ওকে ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। বা একটা রিকশা করে চলে যাওয়া দরকার। বাসে যেতে সমস্যাই হবে। কিন্তু আমি কি মনে করে ওর থেকে ছাতাটা নিয়ে একসাথে হাটতে লাগলাম। আমি জানি না ওর সাথে হাটা ঠিক হচ্ছে কিনা।কেন হাটছি ওর সাথে? যখন ওর থেকে ছাতাটা নিলাম আমি বেশ বুঝতে পেরেছি ও একটু খুশি হয়েছে।

আমি ভাবি সেদিনের কথা। সেদিন সায়রার সাথে তার প্রাক্তনের ব্রেক আপ পালন করার তারিখ ছিল।মানুষ যে এতো অদ্ভুত হয় আমার জানা ছিল না।ওদের ব্রেকআপ হয়েছে দু বছর হয়ে গিয়েছিল। সেই ব্রেকআপের তারিখ অনুযায়ী ব্রেক আপ পালন করতে আসছিলাম ওর সাথে।কি সুন্দর করে দুজন কান্নাকাটি করলো।ওর প্রাক্তন যখন বললো “তুমি আমাকে মিস করো না? সত্যি করে বলবে?” সায়রা কান্না করলে ওর নাক দিয়ে পানি পরে। আমি একটা টিস্যু ব্যাগ থেকে বের করে দিয়ে বললাম “আগে নাকের পানি মুছে নে দোস্ত।” সায়রা আমার দিকে তাকিয়ে টিস্যুটা নিয়ে ওর প্রাক্তনকে বললো “তোমার কি উচিৎ ছিল না টিস্যু তোমার দেওয়ার? তুমি জানো আমি কান্না করলে নাকের পানি পরে।যে আমার খেয়াল রাখে না, আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা ভুলে যায় তাকে কেন আমি মিস করবো? কোন দুঃখে?” আমি ওর কথা শুনে ভিতরে ভিতরে হাসছিলাম। আর ভাবছিলাম এ কেমন বান্ধবী আমার। তারপর ওর প্রাক্তন আমার দিকে তাকিয়ে বললো “টিস্যুটা আমাকে দিলে কি হতো আপু? আমি ওকে দিতাম।ছেলেদের কাছে কি টিস্যু থাকে?” আমি আর থাকতে পারছিলাম না ওখানে।আমার প্রচন্ড হাসি আসছিল।সাথে সাথেই আমি ওখান থেকে চলে আসি। ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্র্রেক আপ হওয়ার কাহিনী মনে পড়লে আমি এখনো ঠিক থাকি না।ফেসবুকে একটা মেয়ের ছবিতে সামান্য একটা লাভ রিয়েক্ট দেওয়াতে এই নিয়ে ঝগড়া করে ব্রেক আপ করেছিল।

সেখান থেকে যখন চলে আসছিলাম তখনি আমার ব্যাগ ছিনতাইকারী ছিনতাই করে পালাতে লাগলো।আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি চিৎকার করতে লাগলাম। তার পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলাম। আর ঠিক তখন জাহেদ ছিনতাইকারীকে ধরে একটা থাপ্পড় দিয়ে আমার ব্যাগটা আমাকে দিয়ে দেয়। আমি দৌড়ে আসাতে একটু হাপাচ্ছিলাম। ছিনতাইকারী বলতে লাগলো “ভাই মাফ কইরা দেন।দুদিন কিছু খাই নাই।” আমি বললাম “আর একটা মারেন তো। সব মিথ্যে কথা। এই ব্যাগটা যদি না পেতাম তাহলে আমার কি যে হতো জানেন?” তারপর সে কিছুক্ষন আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থেকে ছিনতাইকারীকে ছেড়ে দিয়ে বললো “আর যদি এই এলাকায় দেখছি তো খবর আছে।” আমি চুল গুলো কানে গুজে বললাম “আপনি ছেড়ে দিলেন কেন?” সে তারপরও আমার দিকে তাকিয়ে চুপ করে থাকলো।একটু সময় নিয়ে বললো “এই ব্যাগ না পেলে কি হতো?” আমি বললাম “ব্যাগে তো একশত টাকা আর একটা লিপস্টিক ছাড়া কিছু নেই। মোবাইল তো আমার হাতে। লিপস্টিকটা আমার বান্ধবীর। টাকাটা বড় বিষয় না। বড় বিষয় হচ্ছে ওর লিপস্টিক। ও ব্র্রেক আপ পালন করছে। ওর থেকে লিপস্টিকটা নিয়ে ছিলাম। আসলে আমার বান্ধবী অন্য রকমের, সহজ সরল।” সে আমার কথা শুনে হাসছিল।হাসতে হাসতেই বললো “আপনি থাকেন কোথায়?” আমি কি উত্তর দিব বুঝতে ভাবছিলাম। বুঝতে পারছিলাম না অপরিচিত মানুষকে বলা কি ঠিক? আমি বললাম “বাসায় থাকি।আপনাকে ধন্যবাদ। যাই কেমন?” সে আমার কথা শুনে আবার হাসি দেয়। আমি আর কিছু না বলে চলে আসছিলাম। কিন্তু সে যে আমার পিছন নিবে আমি বুঝতে পারিনি। আমার এলাকা অব্দি চলে আসছিল।আমার সামনে এসে বললো “আমার নামটা তো বলা হয়নি। ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ওয়েলকামটা নিবেন না? এটা জানানোর জন্য আসছি। আমি জাহেদ।” আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম এমন কান্ড দেখে। আর সেদিনের পর থেকে রোজ আমাকে ফলো করতে লাগলো।দু মাস হয়ে গেলো সে আমার পিছন পিছন ঘুরছে। আর এখন আমার সাথে বৃষ্টির মাঝে হাটছে। এই হাটার মাঝে সে কি উপলব্দি করছে আমি জানি না। বিধাতার কি চমৎকার এক সৃষ্টি এই বৃষ্টি।পুরো পৃথিবীটাকে শান্ত বা তার ছায়ার আছোতে জড়িযে নিতে পারে।আবছা অন্ধকারের রুপ প্রদান করে দিনের আলোটাকে সন্ধ্যার রুপ কি ভয়ংকর ভাবে চারপাশে ছড়িয়ে দেয়।আমি হাটতে হাটতেই বললাম “শুনোন, আমি যে সকাল বেলা আপনাকে বকা দিলাম আপনার খারাপ লাগেনি?” সে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো “সেটা অজানা থাক।কিন্তু আমার কি মনে হচ্ছে জানেন? আমার মনে হচ্ছে আমাকে বকা দিয়ে আপনার নিজেরই খারাপ লেগেছে। আমি কি ঠিক বলেছি?” এই ছেলেটা কি করে এটা বুঝতে পারলো? যে মানুষগুলো অন্যের ভিতরের কথা অনুভব করতে পারে, বুঝতে পারে স্বপ্নের আঁকা রং গুলোকে আমি মনে করি তাদের ভিতরের অনুভূতি গুলো আর দশটা সাধারণ মানুষের মত না। আমি তার কথার ঠিকঠাক প্রত্যুত্তর না দিয়ে বললাম “আপনি কেন আমার পিছন পিছন ঘুরেন আমি বুঝতে পেরেছি। আপনার সম্পর্কেও আমি জেনেছি।পড়াশোনা করছেন পাশাপাশি টিউশনিও করেন। কিন্তু আপনি যেটা চাচ্ছেন সেটা সম্ভব না। এই মায়াবী ভালোলাগার মাঝে আমি জড়াতে চাই না।দয়া করে আমার সাথে আর দেখা করবেন না এবং আমাকে ফলো করবেন না। একটাই অনুরোধ আপনার কাছে।খুব ভালো থাকুন।” হঠাৎ করেই বৃষ্টিটা থামতে শুরু করেছে। এই থামার মাঝে চারপাশে যেন একটা থমথমে পরিবেশ তৈরি হলো। আমি আর কিছু না ভেবে তাকে তার ছাতা দিয়ে চলে আসি। সে ছাতা হাতে নিয়ে চুপ করেই আমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো আমি বেশ বুঝতে পেরেছি।

আমার রুমের বারান্দা থেকে সামনের বিল্ডিং এর বাগানের কাঠগোলাপ ফুলগুলোকে স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়।সাদা রঙ এর মাঝে পাঁচটা পাপড়ির ফুলের চারপাশে হলদে আবছায়া কিংবা গোলাপী ও লাল রঙের হলুদের ফোটা দেওয়া এই কাঠগোলাপ ফুল। আমি প্রায় অনুধাবন করি এই ফুলটাকে কেন কাঠগোলাপ নাম রাখা হয়েছে।কিন্তু কি চমৎকার একটা সৌন্দর্য্য চোখে বেধে দেয়।এই ফুল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। আমেরিকায় “প্লুমেরিয়া” আর অস্ট্রেলিয়ায় “ফ্র্যাঞ্জিপেনি” নামে ডাকা হয়। কিন্তু আমি মনে করি আমাদের এই দেশে এই কাঠগোলাপ নামটার থেকে আর সুন্দর কোন নাম হতেই পারে না। আমি ফুলের দিকে তাকিয়েই একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।ইদানিং আমার মাথাটা প্রায় ঝিম মেরে যায়। কেন এমন হয় আমি বুঝতে পারি না। একটু আগে আমার ছোট ভাই আয়মান এসে বললো “আপু একশত টাকা দেতো।” আমি ভ্রু কুচকে বললাম “টাকা নেই। এমনি মাথা ধরেছে সামনে থেকে যা।কোন টাকা পয়সা নেই।তুই এই টাকা দিয়ে কি করবি আমি খুব ভালো করেই জানি।” সে একটা হাসি দিয়ে বললো “জানিস যখন উদ্ধার করনা টাকা দিয়ে।” আমি একটু রেগে বললাম “তোর লজ্জা করে না আমার থেকে টাকা নিয়ে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে? সবে মাত্র ইন্টারে উঠছিস।আর এই বয়সে প্র্রেম করা শুরু করে দিছিস।বাবাকে বলবো?” আমার ভাই কেমন একটা লুক দিয়ে বললো “তুই সব সময় আমাকে বাবার ভয় দেখাস কেন? অন্যান্য ভাই বোনদের দেখ।তারা তাদের ভাইকে কত আদর করে। যা চায় তাই দেয়। আমি তোর থেকে টাকা চাইবো না তো কে চাইবে? তোর থেকে যত টাকা নিছি সব হিসেব করে রাখছি চিন্তা করিস না। যেদিন চাকরি করবো তোর সব টাকা সুদ করে দিব। এখন একশ টাকা দে না।” আমি কোমড়ে দু হাত রেখে বললাম “তুই গেলি আমার সামনে থেকে।” সে দরজার কাছে গিয়ে বললো “তুই আমার বোন না। বোন হলে টাকা দিতি।এই জন্যই তোর প্রেম হয় না।” এটা বলার সাথে সাথেই আমি ওকে দৌড়ানি দেই।সে নাকি টাকা হিসেব করে রাখছে। হারামজাদা। আমি খুব ভালো করেই জানি এই হারামজাদাটা ঠিকি কিছুক্ষন পর আমার কাছে আসবে।

ট্রেনে জানালার পাশে বসে হাওয়া খাওয়ার মাঝে ভিতরে একটা শিতল কিছু বয়ে যায়। যদিও আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি না। কিন্তু শাটল ট্রেন চড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার মাঝে একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়।আমার মন যখন ভালো থাকে না কিংবা কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে তখন নিলিকে আর সায়রাকে নিয়ে শাটল ট্রেনে চড়ে বেড়াই। এই ট্রেনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা প্রাণ বলা হয়। আমি যখন এই ট্র্রেনে চড়ি তখন চারপাশের মানুষ জনকে দেখি। দেখি ট্রেনের বগিতে স্টুডেন্টদের চোখ গুলোকে। সে চোখের আড়ালে প্রিয় জনকে উঁকি ঝুকি দিয়ে দেখার গল্পগুলোকে। রাস্তার দুপাশে সাদা রঙ এর কাশবন। সবুজে সবুজে চারপাশে যেন ছেয়ে যায়। আমি হাত বাড়িয়ে দিয়ে সেই সবুজকে ছুয়ে দেই।আকাশে তাকাই। সে আকাশে এক ঝাক পাখি উড়ে যায়। অনুধাবন করি পুরো মাস জুড়ে এই শাটল ট্রেনে মানুষের জীবনযাত্রা গুলো কেমন হয়।কনকনে শীত, গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে বা বর্ষার ঝড়ঝড় বৃষ্টির মাঝে জীবনটা কেমন রঙিন হয়? কিন্তু এই শাটল ট্রেনে চড়ার পরও আমার মনে কেন বিষণ্নতা ছুয়ে আছে? সেদিন জাহেদকে এমন করে বলার পর সে একটা বারও আমার পিছন পিছন ঘুরেনি।দশ বারো দিন যখন পার হলো তখন আমার কাছে মনে হতে লাগলো আমার জীবন থেকে কিছু একটা হারিয়ে গেছে।তবে কি হারিয়ে গেছে আমি উপলব্দি করতে পারছিলাম না।আর কেনই বা আমার এমন মনে হতে লাগলো আমি বুঝতে পারছিলাম না। বাসে উঠার আগে আমার চোখ গুলো ছটফট করতো। হেল্পারকে বলতাম ভাইয়া আর একটু ওয়েট করেন একজন এখনি আসবে। যাকেই এই কথাটা বলেছি তারা প্রত্যেকে আমার কথাটা কি মনে করেছে আমার জানা নেই।কিন্তু তার দেখা পেতাম না। বাসের ভিতরের মানুষ গুলো আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো।আমার ভিতরটা তখন কেমন করে যেন উঠতো।

কিভাবে তিনটা মাস পার হয়ে যায়। যতটা দিনের আলো পার হয়ে রাতের আলোর সাথে সাক্ষাৎ করেছি ঠিক ততবার আমার ভিতরে একটা অজানা বিষণ্নতা প্রবেশ করেছে। এবং একটা সময় বুঝতে পারলাম এই বিষণ্নতার কারণ। একটা মানুষ যখন একটা মানুষের চারপাশে বেশ কয়েকদিন ঘুরে বা বলা যায় তার অনুভূতি বা ভালো লাগার কারণ গুলো মুখে না বললেও অন্য ভাবে প্রকাশ করে, বুঝানোর চেষ্টা করে তাকে কতটা চায় সেই মানুষটাই যদি একটা সময় হারিয়ে যায় অপর মানুষটা একটা সময় হলেও এই চাওয়ার হিসেবকে অনুভব করবে। তাকে ভাবাবে সেই চাওয়া গুলোকে নিয়ে। যেমনটা আমার সাথে হচ্ছে। সায়রা আমাকে বললো “তুই কেমন জানি হয়ে গেছিস দোস্ত।ঐ ছেলে কি তোরে ছ্যাকা দিয়ে ভাগছে?” আমি কিছু বলি না। জানালা দিয়ে শো শো বাতাস আমার মুখে এসে পড়ছে। আমার চুপ থাকা দেখে সায়রা বললো “কোন সমস্যা নেই দোস্ত।সব রোগের ঔষধ প্যারাসিটামল।প্যারাসিটামল দুবেলা চালাই যা।পেট ক্লিয়ারের সাথে ছ্যাকাগুলোও বের হয়ে যাবে।” নিলি হাসতে থাকে। আমি পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে ওদের সাথে হেসে দিয়ে বললাম “তোরে এই কথা গুলো কে শিখাইছে? তোর প্রাক্তন? আচ্ছা আমি বুঝি না ওর সাথে কি তুই আসলে ব্রেক আপ করছিস? ঠিকি তো দুজনে প্রতিদিন কথা বলিস, ঝগড়া করিস। আসার সময়ও দেখলাম তোর প্রাক্তনকে বলতেছিস তোর দুইদিন ধরে হাগু আসে না এটা নিয়ে কথা বলতে। এটা কোন ধরনের প্রেম তোদের?” আমার কথা শুনে সায়রা ভদ্র মেয়ের লুক নিয়ে চুপ হয়ে যায়। নিলি হাসি দিয়ে কথার প্রসঙ্গ বদলে আমাকে বললো “জেনিয়া, জাহেদ ছেলেটার কি খবররে? আর কি দেখা হয়েছে? চল ছেলেটার সাথে একবার দেখা করি। তুই তো ওর ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছিলি।” আমি বাহিরের দিকে তাকিয়েই বললাম “তার আর দরকার নেই।” আমি ভাবতে লাগলাম কেনই বা দেখা করবো আমি? আচ্ছা সত্যি আমার কি একবার দেখা করা উচিৎ?

প্রতিদিন ভার্সিটি থেকে বাসায় আসার পরই আমার চোখে কোথা থেকে যেন ঘুম চলে আসে। আমি সেই ঘুমের সাথে ভাব জমাই। সবুজ রঙ্গা প্রজাপতিরা ছোটাছুটি করে। আমি ধরতে চাই। কিন্তু পারি না। কেন তারা আমার কাছে ধরা দেয় না বা কেন আমার প্রতি তাদের এতো অভিমান সেটা আমার জানা নেই।কিন্তু আজ আমি ঘুমাইনি।সত্যি বলতে কি ঘুম আসেনি।এই চোখে কেমন করে ঘুম আসবে? আজকে ভার্সিটি থেকে আসার সময় জাহেদ এর সাথে দেখা হয়েছে। সে আমাকে দেখে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে চলে গিয়েছিল। আমার খুব খারাপ লাগলো ওর এমন আচরনে। একবার ভেবে ছিলাম ওর সামনে যাই। কথা বলি, তাকে জিজ্ঞেস করি কেন আমাকে সব সময় ভাবাচ্ছেন? আমার যে খারাপ লাগে অনেক খারাপ লাগে। কিন্তু নিজেকে শান্তনা দিলাম। তার সামনে যাওয়া হয়নি। আমার ভিতরটার মাঝে কি যেন হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারলাম কেনই বা সবুজ রঙ্গা প্রজাপতি আমার কাছে আসে না। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি বিশাল দীর্ঘশ্বাস। এক একটা দীর্ঘশ্বাস আমাকে জানিয়ে দেয় এই শহরের মেঘ গুলো আমার জন্য না।

ইদানিং আমি বেশ লক্ষ্য করেছি কাঠগোলাপ ফুল গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। কত ভাব বিনিময় হয় এই ফুলগুলোর সাথে। ফুলকে বলা হয় প্রকৃতির হাসি অথবা ঋতুর দূত।আর এই ফুলই যদি এমন শুকিয়ে যায় এই প্র্রকৃতি কেমন করে হাসবে কেমন করে রঙিন হবে? এই ফুল গুলোর জন্য হঠাৎ করে আমার মায়া হয়। আমার মত সাধারণ একটা মেয়ের মাঝে কিংবা আমার ভিতরে যে ধমকা বাতাসটা বয়ে যায় সেই বাতাসের সাথে আমি কোন কালেই পরিচিত না। আমি শুধু ভাবি এই বাতাসের ছোয়া কেন আমাকে এমন মন খারাপের মাঝে আচ্ছন্ন করে। এসব ভাবতে ভাবতে রুমে আসতেই আয়মান এসে বললো “আপু তোর জন্য একটা জিনিস আনছিরে” আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে ভালো করে তাকালাম তারপর বললাম “মশকরা করবি না। তুই আমাকে কিছু দিবি এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছিস?” ও একটা হাসি দিয়ে বললো “না মানে আমি না, আমার গার্লফ্রেন্ড তোকে দিয়েছে। আমার গার্লফ্রেন্ড দেওয়া মানে আমি দেওয়া এক তাই না? তোর জন্য সাঁজগোজের কি সব পাঠাইছে। আমার গার্লফ্রেন্ড অনেক ভালো বুঝছিস।” এটা বলেই দাঁত গুলা দেখিয়ে একটা হাসি দেয়। আমি বললাম “ছাগলের মত হাসবিনা। আমাকে এই গুলা দিয়ে হাতে রাখতে চাচ্ছিস এটা মনে করছিস আমি বুঝি না।” ও একটা বিরক্তকর শব্দ করে বললো “আমি জানতাম তুই নিবি না।এই জন্য তোরে কিছু দিতে চাই না। ওরে বলছিলাম গাধীটারে দিয়ে লাভ নেই। থাক না নিলে নাই।” এটা বলেই ও যখন চলে যাচ্ছিল আমি ডাক দিয়ে বললাম ”তোরে থাপড়াইতে থাপড়াইতে আমি লম্বা বানাই ফেলবো গাধী কাকে বলিস? আর শোন না কারো জন্য কিছু কিনলে সেটা দিতে হয়। এটাকে ভদ্রতা বলে। আমি তো জানি আমার ভাই অভদ্র না। তুই কি অভদ্র বল?” আমার ভাই আমার কথা শুনে হাসে। তারপর হাসতে হাসতে এটা দিয়ে চলে যায়। ছোট বেলা থেকেই সাঁজতে আমি ভীষণ পছন্দ করি। তবে অতটা সাঁজিনা। ছাগলটা নিশ্চয় ওর গার্লফ্রেন্ডকে আমার কথা বলেছে। ইন্টারে পড়াকালীন সময়ে ইচ্ছা করেই মুখে অনেক মেকাপ করে মানে ছেলেরা যাকে আটা ময়দা বলে সেরকম সেঁজে আয়নায় নিজেই নিজেরে দেখছিলাম তখন আম্মু হঠাৎ পিছন থেকে এসে বলেছিল “ভুত,পেত্নিই সাঁজতে পারবা। আর কিছু পারবা না। একটু আগে যে আমাকে চা দিয়ে আসছিস সেটা চা না সরবত বানাইছিস?” আমি কিছুই বলিনি। আম্মুর এমন বকা খেয়ে আমি আর ওমন করে সাঁজিনি। যদিও আমি সবার সাথে একটু ভালো ভাবে বা হেসে কথা বলছি কিন্তু আমার মনের ভিতর কি চলছে একমাত্রই আমিই বুঝতেছি।

তিনদিন পর ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় জাহেদ এর সাথে আমার আবার একটা ঝকঝকে সকাল বেলা দেখা হয়ে গেলো। আমাকে দেখেই সে যথারীথি না দেখার ভান করলো। তারপর অন্যপাশে চলে যাচ্ছিল। সত্য বলতে কি আমার প্রচন্ড রকমের মেজাজ খারাপ হলো। আমি বেহাইয়ার মত একটু দ্রুত হেটে ওর সামনে গিয়ে কাধের ব্যাগটা একটু ঠিক করে বললাম “আমাকে দেখেও এভাবে চলে যাচ্ছেন কেন?” সে মাথার চুল চুলকিয়ে বললো “চলে যাওয়াটা কি ঠিক হয়নি? তাছাড়া আপনি আমার কে? কেনই বা চলে যাবো না?” আমি একটু সময় নিয়ে বললাম “আমার কে মানে? আমার ভাইয়ায়ায়া। আপনার না অনেক দায়িত্ব? এই আপনার দায়িত্ব পালন করা? আপনি জানেন রাস্তায় বের হলে আমার চোখ দুটো বার বার একজনকে খুজতো। আপনার নামে মামলা করা উচিৎ এইভাবে কষ্ট দেওয়াতে।” আমার কথা শুনে সে এমন একটা লুক দিল যেন আকাশ থেকে পড়লো। কিন্তু আমি নিজেও অবাক হয়েছি এই কথা আমি কি করে বললাম? সে বললো “আমি কারো ভাইয়ায়া না। বিশেষ করে আপনার।” আমি বললাম “মেয়েদের মত এতো ঢং করেন কেন? আমি বললেই আপনি আপনার দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন? আপনি যখন আর আমাকে ফলো করতেন না বা আমার চারপাশে আপনার ছায়া দেখতাম না একটা সময় এই বিষয়টা আমাকে ভীষন ভাবাতে লাগলো। আমি জানি এই রকম করে কোন মেয়েই এইভাবে নির্লজ্জের মত কথা বলতে আসতো না। কিন্তু আমি এসে বলছি। কেন বলছি আমি জানি না। আপনি আমাকে নিয়ে এখন কি ভাবছেন তাও জানি না।” সে আমার কথা শুনে কিছুই না বলে চলে যায়। আমি নিশ্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখলাম। জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে আকাশের দিকে তাকাই। পুরো আকাশ জুড়ে ঝকঝকে রোদ আর সাদা মেঘের ভেলা থাকলেও আমার মনের আকাশে কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। সেই মেঘ বুকের ভিতর বৃষ্টি ঝড়ায়। বিষণ্নতার বৃষ্টি। এই বৃষ্টির শ্বদ কেউ শুনে না শুধু আমিই বুঝতে পারছি এই বৃষ্টির ধুকধুক শব্দ। আচ্ছা মনের বৃষ্টির শব্দগুলো এমন কেন? হঠাৎ করেই আমার মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগলো। আমি ভার্সিটিতে না গিয়ে বাসার দিকে ফিরে যেতে লাগলাম। কিছুটা হেটে যেতেই হঠাৎ করে পাশ থেকে একজন বললো “কি খারাপ লাগছে?” আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি জাহেদ। আমার এমন তাকানো দেখে সে আবার বললো “এই রকম খারাপ কিন্তু আমারও লেগেছিল বুঝলেন? আর আড়াল করবেন? তাড়িয়ে দিবেন আর? আমার বিশ্বাস ছিল আপনি আমাকে মিস করবেন। ইচ্ছা করেই আপনাকে দুদিন দেখা দিলাম। এই সকাল বেলা আমার এখানে কি কাজ বলেন? কোন কাজ নেই। আপনাকে দেখা দিয়েছি এই জন্য দেখতে চেয়েছি আপনি কেমন করে জ্বলেন।” এটা বলেই সে হাসতে লাগলো। আমার চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। আমি কিছুই না বলে ছলোছলো চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। সেও আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর ইতস্তত হয়ে গভীর ভাবে বললো “আমি লুতুপুতু প্রেমে জড়াতে চাই না। প্রেম বিষয়টা অনেক ঝামেলা। আমি চাই জেনিয়া মেয়েটার দায়িত্ব নিতে। কি দিবেন এই দায়িত্বটা?” আমার কি বলা উচিৎ আমি বুঝতে পারলাম না। আমার চোখ দিয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পরলো। আমি ওর কথার প্রত্যুত্তর না দিয়ে বললাম “আমার সামনে থেকে যান। না হয় আপনাকে আমি অনেক মারবো। আমাকে আপনি কাঁদিয়েছেন।” সে একটু ঝিম মেরে থেকে বললো “চলে যাবো?” আমি ঢং করা মেয়েদের মত বললাম “একবার গিয়েই দেখেন না?” সে হাসতে লাগলো আমার কথা শুনে। আমি এই হাসির দিকে তাকিয়ে থাকি আর অনুধাবন করি এই শহরটার মাঝে মায়াজালে ঘেরা। একেক জন এক এক মায়াজালের ভালোবাসায় আটকে পড়ে যায়। আমি না হয় এই মায়াজালে আটকে পড়ে বাকি পথটা কাটিয়ে দিব…
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৫৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×