somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাক্ষাৎ - ১

১৭ ই মে, ২০১৯ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






সোজাসুজিই বলি, একজন মানুষকে ভালবাসতাম। খুব বেশী ভালো বাসতাম। কীভাবে বললে বুঝবেন খুব, খুব এর গভীরতা কীভাবে বুঝাই? সবাই বলে প্রেমিকার চোখে গভীরতা থাকে, আমি নিজেকে আয়নায় দেখেছি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে, আমার চোখে কোনো গভীরতা নাই। চোখের পাপড়ি এলোমেলো, চোখ দেখলে কেউ প্রেমে পড়ত না।

তাহলে কীভাবে বুঝাই গভীরতা? এতটাই গভীর ছিল সে অনুভূতিগুলো যে আমি কখনোই তাকে ছুঁতে পারতাম না, যত ভাবতাম এই বুঝি ধরে ফেলেছি তার শব্দ, আওয়াজ- ঠিক তক্ষুনি সে চলে গেছে আরও আরও গভীরে, যেন একটা নোঙ্গর শিকল ছিঁড়ে ডুবে যাচ্ছে সমুদ্রে।
যখন প্রথম অমিতের চোখের দিকে তাকাই, কিছুক্ষণ তাকিয়েই ছিলাম। ওর ভালোবাসা যতটা গভীর ছিল, চোখ ততটাই সমতল ছিল। যেন গভীর থেকে উঠে আসা ঢেউ এসে এখানেই মিলিয়ে যাচ্ছে, এই বেলাভূমিতে।

চোখ সম্পর্কে অমিত বলতো, ‘মানুষের চোখের গভীরতা এমন হতে পারে যে, সেখানে এসে নোঙ্গর করতে পারে এথেন্স-গামী বাণিজ্য জাহাজ।’

অমিতের চোখ অতটা গভীর নয়, তবুও তাকিয়েছিলাম অমিতের ভাসা ভাসা চোখের দিকে, ওর চোখের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মুগ্ধকর বিষয় ছিল ওর চোখে যেন সবসময়য় এক ফোটা জল এসে চিকচিক করত। যেন সূর্যের আলো এসে এইমাত্র পবিত্রতায় ভরিয়ে দিয়ে গেল দুটি চোখ, এখন যা দেখবে সবই মনে হবে শুদ্ধ, সবই মনে হবে পবিত্র। পরে জেনেছিলাম, ওটা ওর চোখের অসুখ। ওর চোখ দিয়ে প্রায়ই জল পড়ত। কি জানি ওর ঐ অসুখটাই আমার কাছে সুখের কারণ হতে লাগলো।

ছেলেদের সাধারণত বেশী ফর্সা হতে নেই, বেশী ফর্সা হলে কেমন একটা গাধা টাইপের মনে হয়। অমিত ছিল এই গাধা লেভেল ফর্সার থেকে একটু উপরে। ওকে দেখে ঠিক গাধা টাইপ ফর্সা মনে হয়ত না। তবে কখনো ভাবিনি কোনো ফর্সা ছেলের সাথে প্রেম করবো। এমনিতে আমি নিজেই ফর্সা, তাই সবসময়েই একটু কালো ছেলেদের প্রতি আকর্ষণ ছিল। কিন্তু ওর চোখদুটো দেখে দেখতেই থাকলাম! অমিতের সব রহস্য যেন সব ওর চোখে। চোখের নিচ দিকটায় কালো কালো দাগ, ডার্ক সাইকেল। কতদিন ঘুমায়-নি এই মানুষটা? এত রাত সে কেন জাগে? তার কি অনেক দুঃখ? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতাম ওর চোখে।

সত্যি বলতে ভালোবাসা, প্রেম এই শব্দগুলোর সাথে আমার কখনোই কোনো বিরোধ ছিল না। আমার কাছে ভালোবাসা মানে খারাপ কিছু না। যখন যে আমাকে ভালবেসেছে আমিও তখন চেষ্টা করেছি তাকে তার প্রাপ্যটুকু বুঝিয়ে দিতে। ভালোবাসা একটা অদ্ভুত মাদকতা, অনেক প্রশ্নের উত্তর দেয় আপনা আপনিই।
এমন কোনো মহৎ ভালোবাসার অপেক্ষায় কখনো থাকিনি যা এসে আমাকে কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়ে যাবে। মনে হত, জীবনে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য খেতে হয় ভালোবাসাও তেমন পেতে হয়, দিতে হয়। কখনো কখনো দুঃখ পেতে হয়, আবার দুঃখ দিতেও হয়। হৃদয়ের এই দাবীকে কখনোই অস্বীকার করতে পারিনি।

অমিতের সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল একটা খোলা রাস্তায়। এমন না যে সে’ই আমাদের প্রথম পরিচয়। পরিচয় হয়েছিল অনেক আগেই। আমাদের কথা হত টেলিফোনে, চিঠিতে ভাবের আদান প্রদান হয়ত। অমিত বলত, ‘ওর কোনো ভাব নেই, আছে কেবল অভাব।’ অমিতের সবগুলো কথাকে আমি নোট করতাম, যেগুলো মনে হয়ত টুকে রাখা দরকার, টুকে রাখতাম। জন্মদিন, বিশেষ বিশেষ দিন তারিখ, বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত সবকিছুই টুকে রাখতাম।

রাস্তা থেকে আমরা চলে গেলাম পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে অমিতের ধারণা তেমন ছিল না। আমারও তেমন ভালো জানাশোনা কোনো রেস্তোরা ছিল না। তাই অমিত যেখানে নিয়ে যায় সেখানেই যাব বলে স্থির করলাম। অমিত যা যা অর্ডার করবে সেগুলোই তৃপ্তি নিয়ে খাব, আমি আজ শুধু অমিতের কথা শুনব; মোটামুটি কোনো অতিরিক্ত আশা রাখব না, কোনো প্রত্যাশা রাখব না- বাসা থেকে বের হবার সময় এমনভাবেই নিজেকেই মাইন্ড সেটআপ করে বের হয়েছি।

যদিও কথাবার্তায়, চিঠিতে খুব ভদ্র ও মার্জিত, তবুও হয়ত মানুষ চিঠিতে এক রকম আর বাস্তবিক আরেক রকম। অমিত’কে তাই বেশী মানবীয় ভাবতে ইচ্ছে করছে না। অমিত’কে ভাবছি নিজের জানাশোনা মানুষদের দিয়েই। তাদের দিয়েই অমিতের মানসিকতা মাপছি। অথচ চেয়েছিলাম কোনো মাপজোক করব না, একদম বিচারবুদ্ধি সব বাসায় রেখে বের হব। কিন্তু পারছি কই?

রেস্টুরেন্টে যখন পৌঁছলাম, সন্ধ্যা প্রায় হবে হবে। অমিতের কাছে শুনেছি সন্ধ্যা সময়টা বেশ পবিত্র। রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে সে কাচের দরজার হাতল ধরে দরজা খুলে, আমাকে সম্ভাষণের মত করে হাত বাড়িয়ে কুর্নিশ করে আগে যেতে বইলো। আমি ভেতরে যাওয়া মাত্র একটা টেবিল বেছে নিয়ে টেবিলের থেকে চেয়ারটা টেনে আমাকে বসতে বললো। তারপর আমার থেকে সামনে গিয়ে চেয়ারের হাতল ধরে আমার দিকে তাকিয়ে বেশ নম্র স্বরে জানতে চাইলো,
- মে আই হ্যাভ এ সিট?
আমি এই অদ্ভুত আতিথেয়তার কি উত্তর দেব ভেবে পাচ্ছিলাম না, ফিক করে হেসে দিলাম।




(চলবে )
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৯ দুপুর ২:০৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×