somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাবিলার প্রশ্ন ll রাফিউজ্জামান রাফি

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট নাবিলা মায়ের কাছে বসে পড়ছে। নাবিলার মা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সারাদিন বাইরের ব্যাস্ততার কারণে মেয়ের সাথে সময় কাটানো হয় না তার। বাইরে থেকে বাসায় এসেও বসতে হয় ঘরের কাজ নিয়ে। বুয়া থাকলেও বুয়ার ওপর নাবিলার মা সবটা ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারে না। তাই বাসায় এসেও বুয়ার কাজের দেখভাল করতে গিয়ে নিজেকেও কাজে হাত লাগাতে হয়। এই যেমন বুয়া ভাত রান্না করলেও তরকারিটা নাবিলার মা নিজ হাতেই রান্না করে। বুয়ার হাতের তরকারীতে সে নিজেও স্বাদ পায় না আর বর, বাচ্চাকেও বুয়ার হাতের রান্না খাওয়াতে মন চায় না তার। আর তাই বাসায় এসে এসব করতে করতে কোনদিকে দিয়ে সন্ধ্যাটা বয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। এরপর যেটুকু অবসর সে পায় সেটুকু সে বরাদ্দ রাখে নাবিলার জন্য। তবে সেটা শুধু হেসে খেলে কাটানোর মাধ্যমে না। এই সময়টাতে সে নাবিলাকে নিজের কাছের পড়তে বসায়। হোমটিউটর কি পড়ালো, স্কুলের হোমটাস্কগুলো হোমটিউটর করালো কি না, স্কুলের ডায়রিতে নাবিলার রিপোর্টগুলো কি সেসবই হচ্ছে মা, মায়ের এই একসাথে সময় কাটানোর মূল কাজ। তবে এর মধ্যে শুধু যে পড়াই থাকে তা কিন্তু না। নাবিলা মেয়েটা প্রচুর গল্প করতে পারে। আর এই সময়টাতে মায়ের সামনে তার সারাদিনের জমিয়ে রাখা গল্পের ঝুড়ি খুলে বসে। তার স্কুলে কি হয়েছে, তার কোন ফ্রেন্ড কি করেছে, রাস্তায় সে স্কুল থেকে আসার সময় কি দেখেছে সেসবই থাকে তার প্রতিদিনের গল্পের তালিকায়। প্রতিদিনের মতো আজও যখন তেমনি পড়া ও গল্পের আসর চলছিল ঠিক তখন কলিংবেল বেজে উঠতেই নতুন নতুন দরজা খুলতে শেখা নাবিলা দাড়াও আমি খুলছি, আমি খুলছি বলতে বলতে দৌড়ে গেলো। দরজা খুলতেই ওর বাবা ঢুকলো। অধিকাংশ সময়ই বাবাকে এত তাড়াতাড়ি না পাওয়া নাবিলা আজ এত তাড়াতাড়ি বাবাকে বাসায় ফিরতে দেখে নাবিলার খুশি যেন আর ধরে না। বাবা চেন্জ করছে সে সব এগিয়ে দিচ্ছে, বাবা চশমা খুলছে সে আর সে সেটা রেখে আসছে। বাবাকে দেখে খুশিতে টইটম্বুর হওয়া নাবিলাকে দেখে মা বুঝতে পারলেন সে আজ আর পড়বে না। আর তাই নাবিলার উদ্দেশ্যে মা বললেন নাবিল এসো, আজ আর বেশি পড়তে হবে না৷ শুধু যেটুকু বাকি আছে ওটুকু শেষ করে রেখে দাও যাও। নাবিলার মনের ইচ্ছায় মায়ের মৃদু সম্মতি পেয়ে আহ্লাদে সে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো, আম্মু ওটুকু কাল পড়বোনে, আজ আর না পড়লাম!

- না, নাবিল, হাতের কাজ সবসময়ই শেষ করে উঠতে হয়। কখনোই কালকের জন্য কাজ জমিয়ে রাখতে নেই। নাও, নাও, এসো, শেষ করো।
- মামনি, কালকের জন্য কাজ জমিয়ে রাখতে হয় না কেন?
কৌতুহলী নাবিলা বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
- কারণ কালকের জন্য কাজ জমিয়ে রাখা খারাপ।
- কেন খারাপ মামনি?
আবারও মাকে প্রশ্ন করে নাবিলা।
কারণ, ধরো তুমি আজকের কাজটুকু কালকের জন্য জমিয়ে রাখলে। তারপর কাল যখন তুমি কালকের কাজটুকু শেষ করবে তখন আজকের এই ফেলে রাখা কাজটুকু অতিরিক্ত মনে হবে। তখন মনে হবে আজ থাক কাল এটা শেষ করবো। তারপর কালকেও আবার তোমার মনে হবে আজ থাক, আরেকদিন করবো। আর এভাবে দেখা যাবে অন্যকোনোদিনের কাজও কিছুটা ঐ কাজের মতো জমিয়ে রেখে ভাববে কাল সব কাজ একসাথে শেষ করবো। কিন্তু তোমার জমিয়ে রাখা কাজগুলো কখনোই শেষ হবে না। আর ওদিকে তোমার ফেলে রাখা কাজগুলো জমতে জমতে একদিন পাহাড় সমান হয়ে যাবে। আর তখন? তখন কি মনে হবে তোমার?
- এত কাজ? আমি কিভাবে করবো?
- হ্যা, ঠিক তাই। পরে তোমার আর কিছুই করা হবে না। সো, এখন ফেলে রাখা কাজটুকু কি কালকের জন্য ফেলে রাখবে?
নাবিলার দিকে তাকি মা প্রশ্ন করতেই নাবিলার ঝটপট উত্তর - না, না, শেষে এত পড়া জমে যাবে।
বলেই পড়তে শুরু করলো নাবিলা।

নাবিলা ওর বাবা, মা'র সাথে অনেক্ষন ধরে জ্যামে আটকে আছে। নাবিলা অবশ্য এই জ্যামের সাথে পরিচিত। কেননা প্রতিদিনই স্কুলে যেতে আসতে জ্যামের সাথে ওদের দেখা হয়। নাবিলা আর ওর বাবা মা রোজ সকালে একসাথেই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। প্রথমে ওর বাবা মা নাবিলাকে স্কুলের সামনে নামিয়ে দেয়, এরপর ওর বাবা ওর মাকে অফিসে ছেড়ে নিজের অফিসের দিকে ছোটে। রোজকার মতো আজও তারা একসাথেই বেরিয়েছে। রোজ রোজ জ্যামে বসে কার ভাল লাগে? তাও এই ধুলো ময়লার শহরে! আজ এমন একটা জায়গায় ওদের গাড়িটা জ্যামে বসে আছে, যেখানে রাস্তার দুই পাশে ময়লার স্তুপ, খোলা ডাস্টবিন, কাক, কুকুর ও টোকাইরা সেই ময়লা ঘাটাঘাটি করছে। গাড়ির গ্লাসটা খুলে যে একটু নিঃশ্বাস নিবে সে উপায়ও নেই। গ্লাস খুললেই পেটের ভিতরে ভুরভুর করে ময়লার গন্ধ ঢুকে যায়। নাবিলা ওর ছোট্ট হাতঘড়িটা বার বার দেখছে আর বলছে- বাবা জ্যাম ছাড়ে না কেন? স্কুলে দেরী হয়ে গেলোতো!
নাবিলার বাবাও বেশ বিরক্ত। আজ তার সকাল সকাল অফিসে পৌঁছানোটা খুব দরকার। একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। এমনিতেই বের হতে আজ দেরী হয়ে গিয়েছে, তার ওপর এই জ্যাম। ওর মা অবশেষে বিরক্ত হয়ে প্রতিদিনের মতো বলতে শুরু করলো, এই জ্যাম আর এই শহর থেকে যাবে না, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই এই জ্যাম দেখছি। অসহ্য! এটাকি কোনো সুস্থ মানুষের উপযুক্ত শহর? গ্লাসটা খুলে যে একটু নিঃশ্বাস নিবো সে উপায়ও নেই, ধুলো, ময়লা, দুর্গন্ধে ভরপুর। পেট গুলিয়ে যায়। সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে এখানে। কারো কোনো নজর নেই এদিকে। কবে যে এসব ঠিক হবে! কোনো কাজ দেখলাম না ঠিকমতো হতে।
মায়ের কথা শেষ হতেই নাবিলা মাকে বলে বসলো, ওরা মনে হয় কাজ কালকে জন্য ফেলে রাখে তাই না মামনি?
নাবিলার মা নাবিলাকে কি বলবে তা ভাবতে ভাবতেই সিগন্যাল পড়ে যায়, গাড়িগুলো আবার ছুটতে থাকে। নাবিলাও ব্যাস্ত হয়ে পড়ে, ওকে তাড়াতাড়ি স্কুলে যেতে হবে, ওর আজ দেরী হয়ে গিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৩৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×