বাসায় খাবার থাকা সত্ত্বেও আজ ঘরের ফেরার সময় বিশেষ এক কারণে হোটেলে ভাত খাচ্ছিলাম। এমন সময় চার পাঁচ বছরের সন্তান সমেত এক দম্পতি হোটেলে ঢুকলো খেতে। বেশভূষা ও কথা বার্তা জানান দিচ্ছিল তারা বেশ সচ্ছল ও শিক্ষিত। তাদের পুতুলের মতো বাচ্চাটা হোটেলে ঢোকার সময় থেকেই অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিল। বুঝলাম সে একটুও ধীর স্থির নয়, বেশ চঞ্চল। বাবা মা যখন হোটেলে ঢুকছিল সে তখন বলছিল, সে ঢুকবে না, সে চলে যাবে। আবার তারা যখন টেবিলে বসছিল ঠিক সেই সময় বাচ্চাটি বলছিল, 'খাবো না, খাবো না'। তাকে নিবৃত্ত করতে মা তাকে কোকের লোভ দেখালে সে নিজেই রেস্টুরেন্টের ফ্রিজ খুলতে উদ্যোত হল।
সেসময় দম্পতিটিকে খাবার পরিবেশনের জন্য হোটেলের কিশোর মেসিয়ারটি এলে ওকে দেখা মাত্রই বাচ্চাটি তোতাপাখির মতো বলতে লাগলো 'ওকে আমার ভাল লাগে না, ওকে আমার ভাল লাগে না'। কাকে ভাল লাগে না জানতে চাইতেই বাচ্চাটির মাকে বাচ্চাটি ছেলেটির দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিল। ছেলেটি তখন বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।
বাচ্চাটির মা এবার বাচ্চাটিকে যা বলে থামালো তা হলো, 'তুমি প্রতিদিন না ওর কাছে থেকে সকালে নাস্তা নাও! ' বাচ্চাটিকে তার মা একবারও বললো না 'এভাবে মুখের ওপর কাউকে এসব বলা ভাল না, সে মনে কষ্ট পায়। মানুষের মনে কষ্ট দেয়া ঠিক না।' অথচ এসব বলাই কিন্তু উচিত ছিল।
একটি শিশুর প্রথম ও অদ্বিতীয় পাঠশালা তার বাবা, মা। শ্রদ্ধাবোধ, মানবিকতা, মনুষ্যত্ব ও ভালবাসা গড়ে উঠে এখান থেকেই। আজ যে একটি প্রজন্ম স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও ভাষা দিবস গুলিয়ে ফেলছে, ৭১ 'র শহীদ বীরশ্রেষ্ঠদের ভাষা শহীদ বলছে তা কিন্তু পরিবার ও বাবা মায়ের অমনোযোগীতারই ফসল।
আপনার শিশুকে স্কুল ও হোম টিউটরের হাতে সপে দিয়ে নির্ভার না হয়ে তার প্রতি মনযোগ দিন। তার মেধা বিকাশের পাশাপাশি এসব বিষয় সম্পর্কেও বিস্তারিত শিক্ষা দিন। নইলে পস্তাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৬