somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেইপার

০১ লা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পের নাম 'রেইপার', হ্রস্ব ই, অল্প উচ্চারণ হবে, পুরাটা হবে না। ফন্ট ছোট করতে পারলে বুঝাইতে পারতাম। ধরেন সবগুলা বারো ফন্টে আছে, শুধু 'ই' টা আট ফন্টে। সেইরকম করে উচ্চারণ করতে হবে। তেমন জটিল কিছু না। বরংচ রেইপারের কাজটা অনেক জটিল, সূক্ষ্ম আর ঘামঝরানোর। ইংরেজি অভিধানে এই শব্দ যে নাই, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। গুগুল মিঞা আমারে সেই নিশ্চয়তা দিছে। আপনাদেরও আমি নিশ্চিন্ত করতে পারি, এইটা একেবারে নতুন শব্দ, তবে নতুন গল্প কীনা জানি না। কারণ দুনিয়াতে কিছু ব্যাপার আছে খুবই উল্টাপাল্টা।

বুঝছি প্যাচগি লাগছে তো! আবার আপনেরা মনে মনে যা সন্দেহ করতেছেন, সেটাও ঠিক। তবে পুরা ঠিক না। রেপিস্ট আর রেইপারের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে, এই গল্পটা সেই পার্থক্য নিয়া না। শুধু এতটুকু কইতে পারি, যেমন ধরেন গিয়া - রেপিস্ট মানে ঘৃণ্য কোন মানুষ, কারণ এইটা একটা অন্যায়। কিন্তু রেইপার একটা পেশা, দুইজনেই একই কাজ করে কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন পেশা ঘৃণ্য হইলে সমস্যা আছে। কাজের বুয়ার পেশাও তো ঘৃণ্য। আপনি করবেন নাকি এই কাজ! করবেন না। এইরকম কইরা খুন করাও কারো পেশা। আমি খুন করলে দিবো ঝুলাইয়া, কিন্তু ধরেন যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী খুন করে, তখন? এই রেইপার বিষয়টা এমনই।

"কাজের বুয়ার পেশা ঠিক ঘৃণ্য না, অসম্মানের বলা যায়" - মানলাম এই কথা। তাতেও খুব একটা সমস্যা হইব না। মূল উদ্দেশ্য হইল গিয়া না বুইঝা কিছু করা আর বুইঝা কিছু করার পার্থক্য। জটিল কিছু না। তো আমি একজন পেশাদার 'রেইপার'। আমার কাগজপত্র আছে। আমি বছরে সর্বোচ্চ পনেরো, নিম্নে বারোটা কাজ করি। এই দিয়া আমার সংসার খরচ হইয়া যায়। আমার ছেলেমেয়েরা বেশ ভাল আছে। খুব ভাল আছে তা কইতে পারি না। তবে জামাকাপড়, লেখাপড়ায় ত্রুটি রাখি নাই। যাইহোক, এই গল্প শেষ করার আগে কিছু কিছু কথা জানানো দরকার। সব কথা জাইনা লাভ হয় না, তবে কিছু কিছু কথা জানলে বরংচ ভাল থাকা যায়।

অনেকগুলা ঘটনার মধ্যে ২০০৮ সালের মে মাসের ঘটনাটা আমার মনে আছে বেশি। নবনীতা নামের একটা মেয়েরে 'রেইপ' করতে আমারে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হয়। যেহেতু মেয়েটা হিন্দু ধর্মের, আর এইখানে সংখ্যালঘু, সেইহেতু রাষ্ট্রের একটা ব্যাপার চইলা আসে। কাজে কাজেই বিষয়টা জটিল আকার ধারণ করতে পারবে বইলা আমার আশঙ্কা হয়। আপনারা কইতে পারেন, আরে ব্যাটা রেইপ করবি, তাতে হিন্দু মুসলিম আবার কী! না ব্যাপার আছে। সাধারণত যারা 'রেইপ' করে, তারা হুজুগের মাথায়, দৈহিক উত্তেজনায় করে। সেইটা বাস্তবসম্মত বটে, কিন্তু আমরা যারা পেশা হিসেবে নিছি বিষয়টা আমাদের জন্য যৌক্তিক না। আমাদের ধরা পড়ার কোন সম্ভাবনা রাখা চলে না। কাকপক্ষিও যাতে টের না পায়, সেইভাবে আমাদের কাজ করা দুস্তর।

রেইপের ক্ষেত্রে দুইটা ব্যাপার ঘটে। একটা হইল ডাকাতি করতে গিয়া রেইপ করা, আর আরেকটা হইল টার্গেট কইরা রেইপ করা। এই দুইটার একটাও আমি করি না। আমি করি হইল গিয়া দেনদরবার মিটানোর রেইপ। ধরেন এলাকায় আপনার শক্তি কম, বাড়াইতে অইব। প্রতিপক্ষের একটা মেয়েরে রেইপ করে দেন, রেকর্ড রাখেন, তারপর দেখেন কী হয়! কিন্তু এক সমাজে বাস করতে হইলে আপনি তো আর রেইপ করতে পারবেন না। উপায় কী তাইলে? মুশকিলে আসান হইলাম আমরা। বুকিং দিবো, টাইম দিয়া দিবো, ফিফটি পার্সেন্ট অগ্রিম বাকিটা টাইমমতো শেষ করলে হাতে হাতে। কিন্তু আমরা তো আর হাজার হাজার না। আমরা হাতে গোণা কয়েকজন। কইতে পারেন এর চাইতে বেশি রেইপ হয় আপনাদের সংসারে, প্রতিদিন। আপনেরা কিন্তু রেইপার না। আপনেরা কেউ বাবা, কেউ ভাই, কেউ কাকা, কেউ স্বামী, কেউ বন্ধু আবার কেউবা শত্রু। আপনেরা প্রতিদিনই মনে মগজে, চিন্তায় ভাবনায় দেশরে রেইপ করেন, সমাজরে রেইপ করেন, মানুষরে রেইপ করেন, আপনেরা বিশ্বাসরেও রেইপ করেন। রেইপ মানে কী ভাই! একজনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তারে ভোগ করা, তাই না! তা যখন কোন আইন বানায় সংসদে সেইটা যদি দেশের জনগণের ক্ষতি করে, ভোগের বলি যদি সাধারণেরা হয়, সেইটা কী দেশরে, মানুষরে রেইপ করা না? যাক, এইসব কথা শুরু হইলে শেষ হইব না। বাদ দেই। নবনীতার কথা কই।

নবনীতারা মনিপুরী পাড়ায় থাকে। ওর বাবা সরকারি অফিসের কেরানি। বড় একটা থোক টাকার লেনদেনের ফাইল হের হাতে থাইকা বাইর করতে পারে নাই আমার কাস্টোমার। প্রথম প্রথম ফোনে হুমকি ধামকি দিছিল, কাজ হয় নাই। দুয়েকবার মারারও চেষ্টা করছে, তবুও নবনীতার বাপরে নোয়াইতে পারে নাই। শেষে আমারে কাজে লাগাইল।

আমাদের কাজ পাওনের নানারকম তরীকা আছে। ধরেন এতক্ষণ যে কেইসটার কথা বলতেছি, এইগুলা পেপারে বিজ্ঞাপন দিয়া জানাইত। না না সরাসরি কিছু লেখা থাকত না। কিছু নির্দিষ্ট পত্রিকাই ছিল যেখানে বিজ্ঞাপন দেখলে আমরা যোগাযোগ করতাম। জাতীয় দৈনিকই ছিল। আসলে কিছু কোড ইউজ করা হইত। যেমন ধরেন, 'মণিপুরী পাড়ায় অফিস-কাজের নিমিত্তে ছয়মাসের জন্য আকর্ষণীয় প্যাকেজে পার্টটাইম, বিএ পাশ নারী প্রার্থী প্রয়োজন।' এই বিজ্ঞাপনগুলা আমাদের জন্য দিতো। আমরা বুঝতাম ছয়মাসের মধ্যে একটা কেইস সেটেল করতে হইব। ফোন নাম্বার দেয়া থাকত, আমার পছন্দ হইলে ফোন করতাম। পছন্দ হইলে কেনো বলি তার কারণ আছে। গড়ে প্রতিমাসে একটা 'রেইপ' আমারে করতেই হইত সংসারের খরচ চালাইতে। কিন্তু বছরের শুরুতে বাচ্চার স্কুলের ফিস যোগাড় করতে গিয়া আর ঈদেচান্দের খরচ সামলাইতে আমারে দুইটা তিনটা 'রেইপ'ও করতে হইছে। বলতে পারেন অনেকটা বাধ্য হইয়াই করছি। টাকা তো লাগব। এইছাড়া আমার উপায় ছিল না। তো নবনীতার বিজ্ঞাপনটাও দেখি, সেই সন্ধ্যায় ফোনও করি।

ফোন একহাত দুইহাত তিনহাত হইয়া দায়িত্ববান একজনের কানে মুখে লাগল। লোকটা ঝানু মাল। নিজের পরিচয় দিলো না, আমার নামধামও কিছু জিগাইল না। শুধু কইল, অমুখ তারিখের মধ্যে যেন কাজটা শেষ করি। অর্ধেক টাকা আইজ রাইতেই দিয়া যাবে, সাথে বাকিসব কথা বলবে কেউ একজন। বায়োমেট্রিক করা সিম বদলায়া ফেললাম। একবার ভাবছিলাম এই পুরা অপারেশন কোন নেতা বা মন্ত্রীর নাম্বার দিয়াই সারি, পরে কী মনে কইরা এক মিশনে থাকা পুলিশ অফিসারের নাম্বার দিয়া কার্যক্রম শুরু করলাম। বায়োমেট্রিক জিনিসটা আমার খুব পছন্দ হইছে। ধরেন আপনেরে ফাঁসামু কোন কিছুতে, পাঁচ মিনিটের কাজ। মাইনষেরে বিপদে ফালানো যে এত সহজ কইরা দিছে সরকার, এইটা এখনও আমার মাথায় ঢোকে না। যাক দেশ জাহান্নামে গেলে আমার কী! সেই রাতে সমস্ত কথাবার্তা ফাইন্যাল করলাম। বাসায় জানায়া দিলাম, রাতে ফিরুম না। এই নিয়া বাসায় সমস্যা হয় না। হিন্দি সিরিয়াল আছে, খাওন দাওনের ব্যবস্থা আছে, বাচ্চাগো খেলাধুলার খেলনা, সরঞ্জাম সবই আছে। আমার এই নিয়া ভাবতে হয় না। তাছাড়া আমি কোনদিন বউ বাচ্চার লগে জোরে শব্দও করি নাই। তো ওরা ভাল আছে, আমিও ভাল আছি। পরিবার জানে আমি কঠিন পরিশ্রম কইরা চলি, দেশের কাজে মানুষের কাজে নিজেরে বিলায়া দিছি। তাই তারা আনন্দেই থাকে। তবে আমার একমাস কাজে গ্যাপ গেলে কিছুটা কষ্টই হয় চলতে ফিরতে। এই শহরে থাকতে গেলে অনেক টাকার দরকার হয়, অনেক টাকার। আর সেই অনেক টাকা ইনকাম করতে গেলে, নানাজনে নানা পথ ধরে, আমিও একটা ধরছি।

আপনেরা যারা নদীতে নামছেন, গোসল করছেন তারা টের পাইছেন যে একটু গভীরে গেলে মনে হয় কেউ যেন টাইনা নিতেছে। আবার কোন সময় দেখা যায় উপরে এক স্রোত, নিচে আরেক স্রোত। এইরকম আমাদের সমাজেও আছে। উপর দিয়া দেখতেছেনে সবাই শাহবাগে যাইতেছে বিপ্লব করতে, ভিতরে ভিতরে ঠিক হইতেছে কারে লাইমলাইটে আনব, কারে আনব না। কথাটা বললাম, এই কারণে - রাইত হইলে আপনেরা যেমন বাসায় ফিরেন, বউয়ের আঁচল ধইরা ঘুমায়া পড়েন, ঠিক একই রকম না হইলেও আরেকটা শ্রেণি আছে যারা রাইতে এখানে সেখানে যায়া কাটায়, বিয়া করা বউ না থাকলেও কোন অংশে কম সেবা তারা পায় না। সাথে পরিমাণ মতো মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবার ব্যবস্থা থাকে। একটা সভ্য শিক্ষিত দেশে এইগুলা না থাকলে মানুষ চলবে কেমনে! তো আমি এমন অনেকগুলা ঠেকে যাই। বলতে পারেন প্রায় প্রতিটা জেলায় জেলায়, থানায় থানায় এইরকম ঠেক থাকে।

এইসব ঠেকে নানারকম লেনদেন হয়। এক কাজে আইসা আরেক কাজে জড়াইয়া পড়াও অস্বাভাবিক না। তো আমি আমার মতো ঠেকের এক জায়গায় বইসা হাত পা নাড়াইতাছি, মোবাইল টিপতাছি, নানারকমের ভাবনা চিন্তা করতেছি। এইবারের কাজে লাভের পরিমাণ বেশি দেইখা, চিন্তা বেশি করতে হইতেছে। অনেক সময় অপেক্ষা করার পরে একজনরে পাইলাম, যারে দিয়া এই কাজ করা যাইব। সে কন্ট্রাক্টরি করে। ক্যান্টনমেন্টেও মাল সাপ্লাই দেয়। আর তার কাজের সাইটও শহরের বাইরে। শুধু নবনীতারে কলেজ থেকে ফিরার সময় তুইলা নিয়া ঢাকা পার করলেই হয়। যাইহোক কথা কইলাম, নগদে হাতে কিছু টাকা দিলাম। সারারাইত গল্পগুজব শেষে সিদ্ধান্তে আইলাম নবনীতারে নবনীতার ইচ্ছায় ঢাকা ছাড়া করুম। একবার ভাবছিলাম ওর বাপেরে কিডন্যাপ করুম, পরে ফোন কইরা মেয়েরে আসতে কমু। তারপর ভাবলাম না, এমন না কইরা হাতে যেহেতু সময় আছে, তাইলে অন্যভাবে একটা ট্রাই দেই।

আমি নেশা করি না, মদ গাঁজা খাইতেও অরুচি লাগে। খাই নাই তা বলি না, কিন্তু এইগুলা সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু না। তবুও অনেকদিন পর তিন পেগ হুইস্কি নিলাম, সাথে মাংস ছিল, আর সালাদ। এই সালাদটা আবার এই ঠেকে একজন বানায়া দিতে পারে। কিসের ফাইভ স্টার, কিসের রেস্তোরাঁ, এই ঠেকে একবার খাইলে জীবন স্বার্থক। তবে সারারাত এমনি এমনি থাকি নাই। কাজে আসলাম, যা চাইছিলাম পায়া গেলাম। সন্দীপ নামে একটা ছেলেরে পাইলাম। ভিটেমাটি ছাড়া, কোনমতে ঢাকা আসছে। নদী নাকি সব কাইড়া নিছে। একটা ছোট বোন আছে, সাথে আছে আন্ধা মা। আশ্রয় চায়, কাজ চায়, বাঁচতে চায়। ছেলেটা দেখতে সুন্দর। যার খোঁজে আসছিলাম, তারে কোন এক রুম থাইকা বাইর করলাম আবার। তখন ভোর হইব হইব লাগে। দুই বড়ি ইয়াবার ধোঁয়া নিয়া সে আমার কথা শুনতে বসল। ভাইঙ্গা কইলাম আমার প্ল্যান। সন্দীপ নতুন আসছে ঢাকায়। গায়ে গতরে সুন্দর, তাগড়া জোয়ান ছেলে। আপাতত তারে সহকারি হিসেবে কাজে নিয়া নিতে বললাম। আর ফার্মগেটে একটা ফটোকপির দোকানে বসাইয়া দেয়ার কথা ফাইন্যাল কইরা আমি উঠলাম। বাকি থাকল নবনীতার সাথে সন্দীপের প্রেমের নাটক। এইটার ছক কষতাছি পরে। হিন্দু ফ্যামিলির মেয়েরে বিয়ে দিতে অনেক খরচ, সন্দীপ টোপ হিসেবে খারাপ হইব না।

আমি এমনিতেও সকালে উঠি। আজকে অবশ্য না ঘুমাইয়া সকাল দেখতে বার হইলাম। পৃথিবীটা এত সুন্দর, কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে ভোগ করতে পারতেছি না দেইখা মনটা খারাপ হয়া গেলো। কতক্ষণ হাটাহাটি কইরা, একটা লোকাল বাসে উঠলাম। মাথাটা কাত করে ঘুমায়া গেলাম। কতক্ষণ ঘুমাইছি খেয়াল করি নাই। কন্টাক্টরের চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভাঙ্গল। সকাল বেলা যে এত মানুষ বাইর হয়া আসে আগে খেয়াল করি নাই। অবশ্য আমি যে এলাকায় থাকি সেইখানে মানুষেরা আরেকটু পরে, বেলা করে বাইর হয়। ঘুমে কাজ দিল। মাথায় বুদ্ধি খেলল। সন্দীপের বইন আর আন্ধা মায়েরে গাজীপুর আমার এক পরিচিত জায়গায় পাঠায়া দেয়ার বন্দোবস্ত করলাম, আর সন্দীপরে বললাম বিকেলে যেন একবার ফোন দেয়। ঘটনাটা খুব একটা ভাল দিকে মোড় নিবো না, মনে হইতেছিল। সন্দীপের মুখ বন্ধ করতে হইলে হের মা বইনেরে আমার জিম্মায় রাখা ছাড়া উপায় থাকল না। আর চিন্তা করতেছিলাম, সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার যদি ঘটে তবে কী হইতে পারে! সেখান থেকে কী পরিমাণ টাকা কামানো যায় সেই ফন্দি করতে থাকলাম।

বেলা দশটায় বাসায় ফিরা আসলাম। গোসল সেরে ছেলেমেয়ের খোঁজ খবর নিলাম, স্কুলে গেছে। বউয়ের কোমর জড়ায়া ধইরা ঠোঁটে দুইটা চাকুসচুকুস চুমা দিলাম। তারপর এক কাপ চা নিয়া পত্রিকার উপর ঝাপায়া পড়লাম। এক এগারোর পরে পরিস্থিতি প্রতিদিনই তখন পাল্টাইতেছিল। ধরপাকড়, লুটপাট চলতেছিল পর্দার আড়ালে। আইজকা আপনাদেরকে একটা কথা বলি। এক এগারোর পরবর্তী দিনগুলাতে মানুষ খুব শান্তিতে আছিল এইটা হয়ত মোটামুটি সত্য। কিন্তু ঘটনার ভিতরে যে আরো ঘটনা আছে সেইটা কিন্তু আপনেরা অনেকেই ভাবেন নাই। এইটা এমন কিছু ভাবনা না যে সবাইরে ভাবতে হইব! তবে আমি ভাবতাম, ভাবতে আমার ভাল লাগে। যাইহোক, কথা হইল - ১/১১ এর পরপর ধীরে ধীরে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে লাগল - না খুব বেশি বাড়ল, না একেবারে সমান থাকল। সারাদেশে নতুন নতুন মার্কেট গজাইল। সরকারই বানায়া দিল। আর অলিখিত নিয়ম হইল প্রতি কেজিতে দুইটাকা সরকার নিয়া নিবে। সব সরকারের পোষা বাহিনী আছে, ১/১১ সরকারেরও তাই ছিল। আপনারা যে ২০০৭ থাইকা ২০০৯ পর্যন্ত শান্তিতে ছিলেন, সেই শান্তি মিশনের দায়িত্বে যারা আছিল তারা প্রতি কেজিতে দুই টাকা নিয়া ২৪,০০০ কোটি টাকা পকেটে পুরাইয়া আপনাদের শান্তিতে রাখল। ধূর আবার বকবক শুরু করছি। আসল কথায় আসি।

এই ১/১১ এর সময় দুই চাইরটা জায়গায় সমস্যা হইতে ছিল। সেই সমস্যার একটা জায়গায় না জাইনা না বুইঝা নবনীতার বাপ হাত দিয়া ফেলছিল। বিষয়টা এমন এক জায়গায় আসছিল যে না তারে সরানো যায়, না রাজি করা যায়। আমি এই সুযোগটাই কাজে লাগাইলাম। আসলে আমি এক ঢিলে তিন পাখি মারলাম। আমার কাস্টোমারের কাজ কইরা দিলাম, আবার কাস্টোমাররে নবনীতার বাপের কাছ থাইকা ফাইল ছিনায়া ১/১১ সরকারের কাছে ধরায়া দিলাম, আর নারী রক্ষা সমিতির সেক্রেটারি হিসাবে ঘটনাটা ধর্মীয় দিকে চালায়া দিলাম, যদিও মুখ বন্ধ রাখার লাইগা এখনও এই কেইস থাইকা টাকা পয়সা পাইতাছি।

এর পরের কাহিনী সরল। কলেজের পাশে ফটোর দোকান, সেইখান থেকে বাসায় যাওয়া, কয়দিন পরে ভালবাসার শুরু আর মে মাসের ২৭ তারিখ ঘুরতে যাওনের নাম কইরা নবনীতারে মেঘনা ঘাটে নিয়া আসল সন্দীপ। তারপরে যা হবার তাই হইল। নবনীতার বাপে ফাইল দিয়া দিল, পুলিশ নবনীতারে 'রেইপ' করার লাইগা মামলা দিল ওই এলাকার একটা গ্রুপের নামে, আমার কাস্টোমার ধরা খাইল ১/১১ সরকারের হাতে, কাজ পাইল ঠেকে যেই কন্ট্রাক্টরের সাথে কথা কইছিলাম সে, আর আমরা মানবাধিকার কর্মীরা, জাতীয় নারী রক্ষা সমিতির ব্যানারে পুরা ব্যাপারটারে হিন্দু-মুসলিম রেষারেষির দিকে ঠেলতে থাকলাম। নবনীতারে পরে যেইলোক নদী থাইকা কিনারে ভাইসা আসার পরে খুঁইজা পাইছিল, পুলিশ হেরে ধইরা জেলে দিলো।

আপনেরা যারা এতক্ষণ ভাবতেছিলেন সিনেমার মতো আমি যাইয়া লাফাইয়া পড়ুম নবনীতার উপরে, জামাকাপড় ছিঁড়া ফালামু, তারপর টপ টু বটম বর্ণনা দিমু যেমন দেয় স্বীকারোক্তির সময়, তারা ঠিকই ভাবছেন। সেইটাই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমার তো বাইচা থাকার অবলম্বন এইটা, এইটা আমার পেশা। কাজের সময় আবেগের জায়গা নাই। এই ব্যাপারে আমি আপোষ করি না। যদিও সমাজে আমার একটা পরিচয় আছে, কিন্তু অনেকগুলা বছর ধরে এই কাজ করতে করতে আমার একটা বিশেষ দক্ষতা আসছে। আমার পরিচয় আমি একজন 'রেইপার'। হ্রস্ব ই, অল্প উচ্চারণ হবে, পুরাটা হবে না। ফন্ট ছোট করতে পারলে বুঝাইতে পারতাম। ধরেন সবগুলা বারো ফন্টে আছে, শুধু 'ই' টা আট ফন্টে। সেইরকম করে উচ্চারণ করতে হবে। তেমন জটিল কিছু না। বরংচ রেইপারের কাজটা অনেক জটিল, সূক্ষ্ম আর ঘামঝরানোর।

#raiper_31072017_JK
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×