somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্সিটি লাইফের প্রথম দিন

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা বানাইবো ডাক্তার,আব্বায় বানাইব গণিতবিদ ৷আমি পড়লাম ফাঁপড়ে ৷কোনটা থুইয়া কোনটা হইমু ৷বড়ভাইরে ফোন দিয়া দুঃখের কথাটা জানাইলাম ৷ভাই নিজে কিছু কইলো না ৷ছাইড়া দিল ভাবীর উপর ৷ভাবী কইলো আমার যেইটা ভাল লাগে সেইটা নিয়াই যেন পড়ি ৷কথাটা মনে ধরলো ৷কিন্তু বিপদ আরেকখানে ৷আমার আসলে কী ভাল লাগে অথবা কোন বিষয়টায় আমার যোগ্যতা বেশী হেইডা আমি নিজেও জানি ৷আমাগো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বিগত ১২ বছরে সেইটা আমাকে জানতে দেয় নাই ৷এইদিকে সময়ও নাই ৷ইন্টার পরীক্ষা শেষ ৷এডমিশনের প্রস্তুতি নিতে হইব ৷অনেক কষ্টের পর বুঝবার পারলাম কম্পিউটার সাইন্স আমার জন্য পারফেক্ট ৷প্রস্তুতি নিলাম ইন্জিনিয়ারিং পড়ার ৷আবারও ঝামেলা লাগলো ৷আব্বায় কয় বুয়েটে চান্স পাইতে হইব ৷মা কয় ঢাবিতে চান্স পাইতে হইব ৷অনেক চিন্তাভাবনা কইরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমি সাস্টে পড়মু ৷পরীক্ষা দিলাম, লাইগাও গেল ৷ভর্তিও হইলাম ৷সমস্যা হইলো থাকমু কই?২৮ গুষ্টির মধ্যে ( বাপের ১৪ গুষ্টি + মায়ের ১৪ গুষ্টি ) কেউ সিলেটে থাকে না বা কেউ পরিচিত নাই ৷চিরুনি অভিযান চালাইয়া একজনরে পাইলাম ৷মাইলখানেক দূর দিয়া পরিচিত ৷তিনি আবার সাস্টেরই স্টুডেন্ট ৷বগুড়া থাইতা রাতে গাড়িতে উঠলাম ৷টার্গেট হইল পরের দিন সিলেট পৌঁছাইয়া ডাইরেক্ট ভার্সিটি যামু,ক্লাশ করমু তারপর বড় ভাইটার লগে দেখা করমু ৷৯টার সময় ক্যাম্পাসে পৌছাইলাম ৷দুইটা ক্লাশ করলাম ৷প্রথম ক্লাশেই ছোট খাটো অপমান হইলাম ৷আমার সাথে ইয়া বড় বড় দুইখান ব্যাগ দেইখা স্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন ৷যথাযথ উত্তর দিলাম ৷কয়েকজন মাইয়ারে দেখলাম আমার দিকে তাকাইয়া ফাসুর ফুসুর করতাছে আর হাসতাছে ৷আমারতো ব্যাপক লেভের অপমান লাগতাছে ৷( মাইয়াগো দিকে আমি ক্যান তাকাইছিলাম সেইটা জিজ্ঞাস কইরা অপমানটা আর বাড়াইয়েন না ) ৷ক্লাশ শেষ কইরা বড় ভাইরে ফোন দিলাম ৷হেতে আর ফোন ধরে না ৷আমারতো কান্দন কান্দন অবস্থা ৷পরে ভাবলাম,আমি কান্দি ক্যারে?প্রয়োজনে দুইদিন হোটেলে থাইকা বাসা খুজমু ৷ঘন্টাখানেক দেখি ৷ফোন রিসিভ না করলে হোটেলে উইঠা পরমু ৷এইটা ভাবার পর নিজেরে খুব সুখী মনে হইলো ৷একটু পর একখান পোলা আইসা আমার সাইডে দাঁড়াইলো ৷জিগাইলো ওয়ান ওয়ান নাকি ৷আমিও কইলাম হুম,ওয়ান ওয়ান ৷হেতে দেখি মিট মিট কইরা হাঁসে ৷মন চাইলো একখান থাপড়া দিয়া জিগাই,আরে ব্যাটা তুই কি মাইয়া মানুষ নাকি মিটমিট হাসতাছোস ? কিন্তু সাহস হইলো না ৷একটু পর জিগাইলো র্যাগ খাইছি কিনা ৷এইটা শোনারপর আমার শরীরে ভুমিকম্প শুরু হইয়া গেল ৷আমার মনেই ছিল না র্যাগের কথা ৷ভয় পাইয়া গেলাম ৷মাথা ঝাকাইয়া কইলাম খাই নাই ৷হেতে দেখি আরও হাসে ৷আসলে সে আমার চেহারা দেইখা ভাবছে আমি র্যাগ খাইছি ৷যাইহোক,একসময় সে চইলা গেল ৷বড় ভাইরে আবার ফোন দিলাম ৷এবার সে রিসিভ করলো ৷জানাইলো সে ক্লাশে ছিল তাই ফোন রিসিভ করতে পারে নাই ৷আরেকটা ক্লাশ আছে সেইটা শেষ কইরা আমার সাথে দেখা করব ৷ফোন কাইটা দিলাম ৷এইসময় খেয়াল করলাম পিছন থাইকা একটা মাইয়া কন্ঠ লাড্ডু কইয়া কারে যেন ডাকতাছে ৷পিছনে তাকাইয়া দেখি তিনটা ভাইয়া আর দুইটা আপু দাঁড়াইয়া আছে ৷একটা আপু হাত দিয়া ইশারা কইরা আমারে ডাক দিল ৷বুঝলাম লাড্ডু আর কেউ না,আমিই ৷কাছে যাইতেই এক ভাই দিল একখান থাপ্পর ৷আমিতো চোদনা হইয়া গেলাম ৷হা কইরা থাপ্পরদাতার দিক তাকাইয়া আছি ৷একজন কইলো,আমরা এইখানে সবাই সিনিয়র আর তুই সালাম দিলি না ক্যান?এক আপু কইলো,মাফ কইরা দে ৷ছোট মানুষ তাই বুঝতে পারে নাই ৷আরেক আপু কইলো এইবার সালাম দে ৷কি আর করার,সালাম দিলাম ৷আবারও ভুল ধরলো ৷উচ্চারণ নাকি ঠিক হয় নাই ৷আবার উচ্চারণ ঠিক করে সালাম দিলাম ৷কাম হইলো না ৷বারবার তাদের সাথে উচ্চারণের প্র্যাকটিস কইরাও উচ্চারণ ঠিক হইলো না ৷আর ঐ সিচুএশনে উচ্চারণ ক্যামনে ঠিক করমু আপনেরাই কন ৷একপর্যায়ে সালাম পর্ব শেষ হইলো ৷এইবার জাতীয় সংগীত গাওয়ার পালা ৷দুই লাইনের বেশী কইতে পারলাম না ৷একজন কইলো,এই মেধা নিয়া সাস্টে চান্স পাইলি ক্যামনে?আমি মনে মনে কইলাম,এই চরিত্র নিয়া তোমরা চান্স পাইলা ক্যামনে?জাতীয় সংগীতের পালা শেষ ৷এইবার ড্যান্স দিতে হবে ৷এইটা শুইনা আমি পুরাই শেষ ৷মনে হইতেছিল একটু পর আর চোখের পানি আটকাইতে পারমু না ৷ড্যান্সের ক্ষেত্রে ঘোরতর আপত্তি জানাইলাম ৷একজন কইলো,ড্যান্স না দিলে সিগারেট খাওয়া লাগব ৷কোনটা করবি সিদ্ধান্ত নে ৷মহাফাঁপড়ে পইরা গেলাম ৷পরিশেষে কইলাম সিগারেট খামু ৷একজন একটা সিগারেট বাইর কইরা দিল ৷বুঝতে পারলাম তারা চরম মজা নিতেছে ৷বাতাসের কারণে আর সিগারেট ধরাইতে পারি না ৷একজন ধরাইয়া দিল ৷পয়লা টান দিতে না দিতেই দ্বিতীয় থাপ্পর খাইলাম ৷অপরাধ,তাদের সামনে সিগারেট খাইছি ৷এইবার কাইন্দা ফালাইলাম ৷যখন কাইন্দা ফালাইছি তখন তারা আমায় রেহাই দিল ৷এরপরেও দুইবার র্যাগ খাইছিলাম ৷অপরাধ হিসেবে যেটা বুঝবার পারছিলাম সেইটা হল আমার চেহারা একটু বোকা বোকা ৷

সবারই স্কুলের প্রথম দিন,কলেজের প্রথম দিন এবং ভার্সিটির প্রথম দিন হয় আনন্দের আর উপভোগ্য ৷কিন্তু আমার ভার্সিটির প্রথমদিন ছিল সম্পূর্ণ এসবের বিপরীত ৷এখনও সেইদিনের কথা মনে হইলে শিউরে উঠি ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৬
১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×