somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি খোলা চিঠি (সংগৃহীত)

০২ রা মার্চ, ২০১২ দুপুর ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধু মিজান,

কেমন আছিস রে?
মনে হচ্ছে ভালোই আছিস। প্রায়ই তোকে পত্রিকার পাতায় দেখি, বুকটা ভরে উঠে তোকে দেখলে। সবাইকে ডেকে দেখাই, এই আমার বন্ধু আজ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। স্কুলে পড়ার সময় বড় হয়ে তুই কি হবি জিজ্ঞেস করলে বলতি, ডাক্তার হবো। এসএসসি পরীক্ষায় আমার পাশেই পড়লো তোর সিট। গনিত আর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষায় আমার খাতা থেকে টুকে তুই লেটার মার্ক্স পেয়েছিলি। ইন্টারমিডিয়েটে আমি চলে গেলাম অন্যশহরে, তোর সাথে যোগাযোগ কমে গেলো। অন্যদের কাছে শুনলাম, তুই আইনবিভাগে পড়াশুনো করছিস। তারপর বহুদিন পর মাস কয়েক আগে তোকে দেখলাম পত্রিকার পাতায়। আজ তুই রুই কাতলা হয়েছিস, আর আমি তোর ভাষায় রক্তচোষা অমানুষ।

বন্ধু, সকালে আজ পত্রিকা খুলে বিশ্বাস করতে পারিনি, তুই বলেছিস এ কথা। ডাক্তার হতে পারিসনি বলে কি তুই এখনো রাগ পুষে রেখেছিস সকল ডাক্তারদের প্রতি? নাকি রুই কাতলাদের পত্রিকার শিরোনাম হতে হলে এমন অশ্লীল আচরন করতে হয়, তা আমার জানা নেই। কিন্তু ওই কথাগুলো বলার আগে কি তোর আমার কথা একবার ও মনে হলো না? একবার ও ভাবলি না তোর এই বাল্যবন্ধুটিকেও তুই অমানুষ বলে ফেলেছিস?

বন্ধু, তুই কি জানিস না কতোটা কষ্ট করে একজন ছাত্রকে ডাক্তার হতে হয়? ডাক্তার হওয়ার পর ১০,০০০ টাকায় ইন্টার্নশিপ, এরপর খুব ভাগ্যবান হলে ২০,০০০ টাকা বেতনে সরকারি চাকুরী জুটে, এটাও নিশ্চয়ই তোর অজানা নয়। আর ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে বিনাবেতনে অনারারী পোস্টে হাসপাতালে বিনাবেতনে কাজ করে যেতে হয় ট্রেনিং এর নামে। বন্ধু, তুই কি তোর এই জীবনে একদিনের জন্যও বিনা বেতনে চাকরি করেছিস? সরকারি চাকরি পেয়ে গ্রামে ২ বছর কাটিয়েছিস স্ত্রী- পরিজনকে শহরে ফেলে রেখে? মুড়ির টিন, নৌকা, চাদের গাড়িতে চেপে কোনদিন কাজে গিয়েছিস তুই? বাসায় পাড়া প্রতিবেশিদের ফ্রি চিকিৎসা, পথে বের হলে চেনা মানুষগুলো শুরু করে তাদের নানা সমস্যার কথা বলে পথ্য চাওয়া, চেম্বারে লাউ, কুমড়া এর বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা এসব তো আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে, তুই কি কোনদিন প্রতিবেশী/ আত্মীয় স্বজন/ চেনা মানুষদের জন্য বিনামুল্যে কিছু করেছিস কিনা মনে করে দেখ কষ্ট করে। রক্তচোষা আমরা কিন্তু বিনামুল্যে প্রতিদিনই একজনকে হলেও বিনামুল্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

বন্ধু, শহরের ৫/৭ জন নামি ডাক্তারের উপার্জন দেখে তোর হিংসে হচ্ছে হয়তো, কিন্তু ভেবে দেখেছিস এর বাইরে ৯৫% ডাক্তার আছে যারা হাসপাতাল/ চেম্বারে ১২ ঘন্টা ছুটাছুটি করেও স্ত্রী-সন্তানের ভরন পোষণের খরচ তুলতে না পেরে হতাশায় দিন যাপন করছে, না হয় দেশ ছেড়ে পরবাসী হয়েছে।

আমরা ডাক্তাররা সত্যি অমানুষ, না হলে-
হাসপাতালে বেড নাই কেন? দোষ ডাক্তারদের।
হাসপাতাল নোংরা কেনো? দোষ ডাক্তারদের।
ওয়ার্ডে আয়া, দারোয়ান, ওয়ার্ডবয় টাকা নেয় কেনো? দোষ ডাক্তারদের। রুগির জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ সাপ্লাই নেই কেন? দোষ ডাক্তারের।
ক্লিনিকে ৩ রাত থেকে ১,৫০,০০০ টাকা বিল দিতে হয় কেন? দোষ ডাক্তারদের। প্যাথলজি ল্যাবগুলো এতো পয়সা নেয় কেন? দোষ ডাক্তারদের।
হাসপাতালের এক্স রে মেশিন নষ্ট কেনো, দোষ ডাক্তারদের।

বন্ধু, তোদের মতো রুই কাতলারা সর্দি হলে ব্যাংককে ছুটিস, জানবি কি করে, কত গরীবদের একমাত্র আশ্রয়স্থল আমরা এই অমানুষ, রক্তচোষারা। জানি কি করে গ্রামে রাস্তা নেই, ইলেক্ট্রিসিটি নেই, বাচ্চাদের পড়ানোর স্কুল নেই। হাসপাতালে বেড নেই, ওষুধ সাপ্লাই নেই, অপারেশন থিয়েটার নেই, নেই এর লিস্ট এতো বড় যে, কি আছে সেটা লিখাই বরং সহজ। এসি অফিসে বসে, এসি গাড়িতে চড়ে, ৫ তারকা হোটেলে সেমিনার, সেমিনার এর পর ভদকা/ হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বিফ স্টেক চিবুতে চিবুতে আমাদের অমানুষ আর রক্তচোষা বলে পত্রিকার প্রথম পাতায় কিভাবে ছবি ছাপানো যায় সেই পরিকল্পনা করা তোদেরই মানায়।

বন্ধু, পত্রিকায় তোর কথাগুলো পড়ে প্রথমেই বাবার কথা মনে পড়ে গেলো। সারাজীবন সরকারি চাকুরে করেও যিনি গাড়ি চড়তে পারেননি, দাদার দেয়া জমিতে পেনশনের সাথে ব্যাঙ্ক লোন মিলিয়ে মাথা গোজার একটা জায়গাই উনার সম্বল। সাথে উনার গর্ব ছিলো ২ ছেলে আর ১ মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানো। পেশাটাকে শ্রদ্ধা করতেন বলে পুত্রবধূ ও মেয়ের জামাই পর্যন্ত ডাক্তার বেঁছে নিয়েছিলেন। বেচারা বাবা এখন ৭০ ঊর্ধ্ব বয়সে তোর বয়ান শুনে নিশ্চয় আফসোস করছেন এতো কষ্ট করে 'অমানুষ আর রক্তচোষা' বানানোর জন্য।

অনেক কিছুই আরও লিখার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু কি হবে লিখে, আমার লিখা তো তোর মতো পত্রিকার পাতায় যাবে না। বড় জোর ৪০/৫০ জন পড়বে এখানে। একটাই আফসোস এখন, তোর মতো বন্ধু যার কাজ মানবাধিকার রক্ষা করা, তার হাতেই ডাক্তারদের অমানুষ সার্টিফিকেট পেতে দেখে। ডাক্তাররা যেহেতু মানুষ নয়, তাদের মানবাধিকারও নেই। ২০১০এ দক্ষিন এশিয়ার সেরা আইনের শিক্ষক পুরস্কার পাওয়া একজন যখন এই সার্টিফিকেট দেয়, তখন আমাদের মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কি?

ভালো থাকিস বন্ধু। দোয়া রইলো নিয়মিত জাতীয় পত্রিকার পাতায় তোর ছবি ও ফতোয়া ছাপা হোক।

ইতি,

প্রবাসে থাকার কারনে 'অমানুষ ও রক্তচোষা' তালিকা থেকে বাদ পড়া একজন।

(মধ্যরাতে ১০২ ডিগ্রি জ্বর আর সর্দি কাশি নিয়ে লিখা,মাখনলালের চিঠি পড়ে অনুপ্রাণিত)

[collected]
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×