somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলেন দেখে আসি প্রকৃতির রহস্যাবৃত এক ছন্দময়ী ঝরণা

১৫ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের “ঝর্ণা” কবিতাটি কমবেশি আমরা সবাই পড়েছি ছোটবেলায় বাংলা পাঠ্যবইতে।
“পাষাণের স্নেহধারা! তুষারের বিন্দু!
ডাকে তোরে চিত-লোল উতরোল সিন্ধু
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ..
এস তৃষার দেশে এস কলহাস্যে -
গিরি-দরী-বিহারিনী হরিনীর লাস্যে ”
...এই লাইনগুলো পড়ে চিত্ত চঞ্চল হয় না এমন বাঙ্গালী বোধহয় খুব কমই আছেন। এমনই এক পাষাণের স্নেহধারা'র কথা নিয়ে আমার এই ব্লগ।



কী এই ঝরণার রহস্য?
শীতল পানির পাহাড়ী একটা ঝরণা এটা। কিন্তু আর দশটা সাধারণ ঝরণার মত নিরবিচ্ছিন্ন নয় এর ধারা, কিছুক্ষণ বয়ে চলে তো আবার কিছুসময় ধরে বন্ধ থাকে পানির বিদারণ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই। আর উদ্গীরণের পূর্বে গড়গড় শব্দে জানান দেয় তার আগমন। সাধারণত অগাস্ট হতে মে মাস পর্যন্ত (মে থেকে অগাস্ট নয় কিন্তু) সময়টাতে এমনটা ঘটে থাকে। এর নাম দেওয়া হয়েছে Periodic Spring।



কোথায় অবস্থিত?
দেখতে হলে যেতে হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। Wyoming অঙ্গরাজ্যের স্টার ভ্যালিতে সুইফট ক্রীক নামক গভীর গিরিখাদে কলকল শব্দে বয়ে চলেছে এই ঝরণা, নৈসর্গিক প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে।



কিভাবে হল আবিষ্কার?
লোককথা অনুযায়ী রেড ইন্ডিয়ানরা প্রথম এই ঝরণা খুঁজে পায়। কিন্তু এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে অলিম্পিক সোনাজয়ী রুলন গার্ডনারের প্রপিতামহের পিতাকে। তিনি সেখানে কাঠ কাটতে গিয়ে ছোট্ট একটা জায়গায় পরিষ্কার পানি দেখতে পান এবং দৈবক্রমেই লক্ষ্য করেন ঝরণা বেয়ে পানির এই অদ্ভুত নিঃসরণ ছন্দ!



কেন এমন হয়?
এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদ হল সাইফন থিওরী। ভূগর্ভস্থ পানি এসে ভূ-অভ্যন্তরের একটি কুঠুরীতে জমা হয়, যেখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য আছে একটি সংকীর্ণ নালা। (চিত্র দ্রষ্টব্য) কুঠুরীর ভেতর যদি নালার উচ্চতা বরাবর পানি জমা হয় তখন পানি নালা হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে বাতাস ভেতরে প্রবেশ করে এবং পানির উচ্চতা কমে সাইফন থেমে যায়, থেমে যায় ঝরণার ধারা। পুনরায় পানি নালার উচ্চতায় পৌঁছালে পূর্বোক্ত প্রক্রিয়ায় পানি বের হয়ে আসে। এর সময়কাল মোটামুটি ৩-৩০ মিনিট স্থায়ী হয়।
পানির নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা নিঃসন্দেহ হন যে, পানিতে দ্রবীভূত বায়বীয় উপাদান ভূ-অভ্যন্তরস্থ কুঠুরীর, যা আপাতভাবে উপরোক্ত সাইফন থিওরীকেই সমর্থন করে। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অপেক্ষা হয়তো আর বেশি দিন করতে হবে না, এমনটাই আশাবাদ পানিবিজ্ঞানী (Hydrologist) অধ্যাপক কিপ সলোমনের। তিনি বলেন, “Yeah, I think that we're a step closer to the answer.”



যেতে চান নাকি?
যারা আমেরিকা প্রবাসী তারা হয়তো গিয়েছেন অথবা জানেন। আর যারা দেশে বা অন্যদেশে আছেন তারা কখনো যাবেন কি না তার তো কোন ঠিক ঠিকানা নেই! তারপরও পোস্টের কলেবর বাড়াতে সংক্ষেপে দিয়ে দিলাম যাত্রাপথের বিবরণ। প্রথমে যাবেন Afton, এখানে 2nd এভিন্যিউ এর ৮৯ হাইওয়ে থেকে মোটামুটি ৮ কিমি পূর্বে গেলে রাস্তা শেষ হবে একটা পার্কিং লটে। এরপর পায়ে হাঁটার পথ, গিরিখাদ ধরে ১ কিমি (প্রায়) হেঁটে গেলেই পেয়ে যাবেন এই কাংক্ষিত প্রস্রবণ। যেহেতু দর্শনীয় পর্যটনস্থান, পথে পথেই পাবেন নির্দেশনা আর মানুষের সহযোগীতা তো আছেই।





এরূপ ঝরণা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি?
এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়, পৃথিবীতে এমন আরো কিছু ঝরণা পাওয়া যায়, যেমন জেরুজালেমে Gihon ঝরণা, নেপালে Dhor Barahi, দক্ষিণ কোরিয়ায় Gyechon, ফ্রান্সে Fontaine de Fontestorbes এবং স্লোভেনিয়ায় Igla ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টা কিন্তু ওই Periodic Springই।







[চিত্র-তথ্য-উপাত্ত সব ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত]

::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::

[সারা রাত জুড়ে নেট কানেকশনের প্রচণ্ড ঝামেলার মধ্যে খুব কষ্টে মাথা ঠাণ্ডা রেখে পোস্ট সাজানোর চেষ্টা করেছি। ভুল-ত্রুটি হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সকলের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১২ সকাল ৯:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×