কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের “ঝর্ণা” কবিতাটি কমবেশি আমরা সবাই পড়েছি ছোটবেলায় বাংলা পাঠ্যবইতে।
“পাষাণের স্নেহধারা! তুষারের বিন্দু!
ডাকে তোরে চিত-লোল উতরোল সিন্ধু
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ..
এস তৃষার দেশে এস কলহাস্যে -
গিরি-দরী-বিহারিনী হরিনীর লাস্যে ” ...এই লাইনগুলো পড়ে চিত্ত চঞ্চল হয় না এমন বাঙ্গালী বোধহয় খুব কমই আছেন। এমনই এক পাষাণের স্নেহধারা'র কথা নিয়ে আমার এই ব্লগ।
কী এই ঝরণার রহস্য?
শীতল পানির পাহাড়ী একটা ঝরণা এটা। কিন্তু আর দশটা সাধারণ ঝরণার মত নিরবিচ্ছিন্ন নয় এর ধারা, কিছুক্ষণ বয়ে চলে তো আবার কিছুসময় ধরে বন্ধ থাকে পানির বিদারণ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই। আর উদ্গীরণের পূর্বে গড়গড় শব্দে জানান দেয় তার আগমন। সাধারণত অগাস্ট হতে মে মাস পর্যন্ত (মে থেকে অগাস্ট নয় কিন্তু) সময়টাতে এমনটা ঘটে থাকে। এর নাম দেওয়া হয়েছে Periodic Spring।
কোথায় অবস্থিত?
দেখতে হলে যেতে হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। Wyoming অঙ্গরাজ্যের স্টার ভ্যালিতে সুইফট ক্রীক নামক গভীর গিরিখাদে কলকল শব্দে বয়ে চলেছে এই ঝরণা, নৈসর্গিক প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে।
কিভাবে হল আবিষ্কার?
লোককথা অনুযায়ী রেড ইন্ডিয়ানরা প্রথম এই ঝরণা খুঁজে পায়। কিন্তু এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে অলিম্পিক সোনাজয়ী রুলন গার্ডনারের প্রপিতামহের পিতাকে। তিনি সেখানে কাঠ কাটতে গিয়ে ছোট্ট একটা জায়গায় পরিষ্কার পানি দেখতে পান এবং দৈবক্রমেই লক্ষ্য করেন ঝরণা বেয়ে পানির এই অদ্ভুত নিঃসরণ ছন্দ!
কেন এমন হয়?
এখন পর্যন্ত কোন সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদ হল সাইফন থিওরী। ভূগর্ভস্থ পানি এসে ভূ-অভ্যন্তরের একটি কুঠুরীতে জমা হয়, যেখান থেকে বের হয়ে আসার জন্য আছে একটি সংকীর্ণ নালা। (চিত্র দ্রষ্টব্য) কুঠুরীর ভেতর যদি নালার উচ্চতা বরাবর পানি জমা হয় তখন পানি নালা হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফলশ্রুতিতে বাতাস ভেতরে প্রবেশ করে এবং পানির উচ্চতা কমে সাইফন থেমে যায়, থেমে যায় ঝরণার ধারা। পুনরায় পানি নালার উচ্চতায় পৌঁছালে পূর্বোক্ত প্রক্রিয়ায় পানি বের হয়ে আসে। এর সময়কাল মোটামুটি ৩-৩০ মিনিট স্থায়ী হয়।
পানির নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা নিঃসন্দেহ হন যে, পানিতে দ্রবীভূত বায়বীয় উপাদান ভূ-অভ্যন্তরস্থ কুঠুরীর, যা আপাতভাবে উপরোক্ত সাইফন থিওরীকেই সমর্থন করে। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অপেক্ষা হয়তো আর বেশি দিন করতে হবে না, এমনটাই আশাবাদ পানিবিজ্ঞানী (Hydrologist) অধ্যাপক কিপ সলোমনের। তিনি বলেন, “Yeah, I think that we're a step closer to the answer.”
যেতে চান নাকি?
যারা আমেরিকা প্রবাসী তারা হয়তো গিয়েছেন অথবা জানেন। আর যারা দেশে বা অন্যদেশে আছেন তারা কখনো যাবেন কি না তার তো কোন ঠিক ঠিকানা নেই! তারপরও পোস্টের কলেবর বাড়াতে সংক্ষেপে দিয়ে দিলাম যাত্রাপথের বিবরণ। প্রথমে যাবেন Afton, এখানে 2nd এভিন্যিউ এর ৮৯ হাইওয়ে থেকে মোটামুটি ৮ কিমি পূর্বে গেলে রাস্তা শেষ হবে একটা পার্কিং লটে। এরপর পায়ে হাঁটার পথ, গিরিখাদ ধরে ১ কিমি (প্রায়) হেঁটে গেলেই পেয়ে যাবেন এই কাংক্ষিত প্রস্রবণ। যেহেতু দর্শনীয় পর্যটনস্থান, পথে পথেই পাবেন নির্দেশনা আর মানুষের সহযোগীতা তো আছেই।
এরূপ ঝরণা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি?
এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়, পৃথিবীতে এমন আরো কিছু ঝরণা পাওয়া যায়, যেমন জেরুজালেমে Gihon ঝরণা, নেপালে Dhor Barahi, দক্ষিণ কোরিয়ায় Gyechon, ফ্রান্সে Fontaine de Fontestorbes এবং স্লোভেনিয়ায় Igla ইত্যাদি। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টা কিন্তু ওই Periodic Springই।
[চিত্র-তথ্য-উপাত্ত সব ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত]
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
[সারা রাত জুড়ে নেট কানেকশনের প্রচণ্ড ঝামেলার মধ্যে খুব কষ্টে মাথা ঠাণ্ডা রেখে পোস্ট সাজানোর চেষ্টা করেছি। ভুল-ত্রুটি হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সকলের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি কামনা করছি]