somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইপত্রের মানুষগুলো....

০৯ ই এপ্রিল, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় ৬৫০পৃষ্ঠার ঢাউস এক বই, পড়ে শেষ করতে সময় লাগলো ১ মাসের মত। কিন্তু যে কয়দিন বইটা পড়লাম বইয়ের মানুষগুলো মাথার মধ্যে ঢুকে গেল। আমি যেন তাদের বহুবছর ধরে চিনি, তাদের সুখ-দু:খের সাথে একাকার হয়ে গেলাম। সব মহৎ সাহিত্যই বোধকরি এমন।

ভূমিকা শেষ। আসল কথা শুরু। বইয়ের নাম 'ওয়ার্ল্ড উইদাউট এন্ড' লেখকের নাম কেন ফলেট। ও হ্যাঁ, বলে নেয়া ভাল যে বইটা কিন্তু আরেকটা বইয়ের সিক্যুয়েল যার নাম 'পিলারস অব দ্যা ওয়ার্ল্ড'। কাহিনীর পটভূমি ১৪ শতকের ইংল্যান্ড। কিংসব্রিজ নামের একটি শহর যেখানে খুব বড় আর বিখ্যাত একটা ক্যাথেড্রাল আছে। সেখানে বাস করে এমন ৪ শিশুকে দিয়ে কাহিনী শুরু হয়। দুই ভাই মার্টিন আর Ralph, যাদের বাবা রাজার সেনাবাহিনীর বিখ্যাত নাইট স্যার জেরাল্ড ফিটজারেল্ড। শহরের বিখ্যাত উল (পশম) ব্যাবসায়ী এডমুন্ডের মেয়ে ক্যারিস আর পার্শবর্তী উইগলেহ গ্রামের মেয়ে গেনডা। তারা খেলতে খেলতে একটা জঙ্গলে চলে যায় আর সেখানে একটা হত্যাকান্ড সংঘটিত হতে দেখে।

পরবর্তীতে এই চারজনের জীবন বিভিন্ন দিকে আবর্তিত হয়। মার্টিন হয়ে ওঠে বিখ্যাত এক নির্মাতা যে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। Ralph পূরণ করে তার বাবার স্বপ্ন, রাজার সেনাবাহিনীতে স্থান করে নেয় নিজের সাহস আর বীরত্ব দেখিয়ে। ক্যারিস বাবার ব্যবসার হাল ধরে এবং পরে একটি হাসপাতালের প্রধাণ হয়ে হাজারো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়। আর গেনডা তার ভালবাসার মানুষ উলফ্রিককে পেতে দূর্লংঘ পথ পাড়ি দেয়। কিন্তু শৈশবে প্রত্যক্ষ করা সেই হত্যাকান্ড পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তাদের তাড়া করে ফেরে।

এতকিছুর মাঝেও ১৪ শতকের ইংল্যান্ডে ঘটে যাওয়া আরো দুটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমটা হলো ফ্রান্সের সাথে শতবর্ষ ব্যাপি যুদ্ধ যেখানে Ralph অংশগ্রহণ করে। আর দ্বিতীয়টা হলো তৎকালীন ইউরোপে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ প্লেগ, কিংসব্রিজ শহরের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ যাতে মৃত্যুবরণ করে।

বইয়ের চরিত্রগুলো এত ডিটেইলসে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে কিছুদূর পড়েই তাদের মধ্যে ডুবে যেতে হয়। বিশেষ করে ক্যারিস চরিত্রটি। ১৪ শতকের মেয়ে হয়েও সে চায় স্বাধীন ভাবে বাঁচতে। বিয়েকে সে মনে করে শৃংখল কিন্তু মার্টিনের ভালবাসাও সে অস্বীকার করতে পারেনা। মার্টিন একসময় অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে বিয়ে করে কিন্তু প্লেগে বউ মারা যাওয়ার পর আবার ফিরে আসে ক্যারিসের কাছে। কিন্তু ক্যারিসের তখন একদিকে বিশাল এক হাসপাতালের দায়িত্ব অন্যদিকে পুরনো প্রেমিক।

ধর্মীয় নেতাদের ভন্ডামীর স্বরূপ উম্মোচনও এই বইয়ের একটা অন্যতম দিক। ইউরোপে কিভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ এলো তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় এই কাহিনী থেকে। কিংসব্রিজ শহরের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো শহরের ক্যাথেড্রালের পাদ্রীরা। কিন্তু তাদের মান্ধাতা আমলের চিন্তা ভাবনার কারণে শহরটি দিন দিন পিছিয়ে পড়তে থাকে অন্য শহরগুলোর তুলনায়। বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ীরা মুখোমুখি হয় চার্চের এবং বহু সংগ্রামের পর চার্চের কতৃত্বমুক্ত হয়।

বইতে আরেকটা জিনিস আছে, সেটা হচ্ছে পলিটিক্স। আওয়ামী লীগ বিএনপির পলিটিক্স না, বরং নিজেদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে আমরা যেসব পলিটিক্স করি সেই পলিটিক্স। কিংসব্রিজ ক্যাথেড্রালের প্রধাণ হওয়ার জন্য পলিটিক্স করে গডউইন, পেছনে মদদ দেয় তার মা ধূর্ত পেট্রালিনা। মার্টিনের বিরুদ্ধে পলিটিক্স করে তারই শিক্ষক এলফ্রিক। Ralph পলিটিক্স করে রাজার বাহিনীতে নাইট হওয়ার জন্য। কুৎসিত গেনডা পলিটিক্স করে তার প্রিয় সুপুরুষ উলফ্রিককে পাবার জন্য। এতসব পলিটিক্সের জটিল জালের ইতিবৃত্ত পড়ার মনে হয় একটু সোজা সরল মানুষদের জন্য এই দুনিয়াটা আসলেই কঠিন!

বইয়ের শেষটা অবশ্য হতাশ করার মত কিছু নয়। বাংলা সিনেমার মত শেষে 'সত্যে'র জয় হয় আর ভিলেনরা সবাই কচুকাটা হয় (একজন ছাড়া)।

সবশেষে এটুকু বলতে পারি, বইটা পড়ে দেখুন। আচ্ছন্ন করা কিছু অনুভূতির মধ্য দিয়ে সময়টা ভালই কাটবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৯:০৪
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×