বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কি? নিশ্চয়ই অনেকে ভুলে গেছেন। ভুলারই কথা। শহরে তো দূরের কথা, গ্রামে গঞ্জে, কোথাও এখন আর হাডুডু বা কাবাডি খেলা দেখা যায়না। অনেকটা জাতীয় ফুল শাপলার মতো অবস্থা। শাপলা এখন দেখা যায় শুধুমাত্র এক টাকা, দুই টাকার কয়েন বা সরকারী অফিসিয়াল প্যাডে।
জাতির সকল দূর্যোগের সময় যেমন আলোকবর্তিকা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপস্থিত হয়, ঠিক তেমনি ভুলে যেতে বসা এই জাতিকে আবার জাগ্রত করলো সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তাও যেনতেন কোন কাজে নয়, একেবারে ভুলে যাওয়া জাতিকে জাতির জাতীয় খেলা স্মরন করে দেয়ার মত পবিত্র কাজে। তাও কাজে কলমে নয়, একেবারে ঘটনার পরিক্রমায় প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দান করে, অনেকটা উদাহরনসহ সংজ্ঞার মতো।
১০৫ সদস্য বিশিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, যাকে একসময় বলা হতো দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট। যেখানে প্রতি বছর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাশ হয় এবং চার বছর পর পর মনোনয়ন বা নির্বাচিত করা হয় তিন সদস্যের ভিসি প্যানেল। সেখানে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ও ছাত্র প্রতিনিধিদের জন্য বরাদ্দকৃত আসন ৫০ খালি রেখে বাকী ৫৫ জন সদস্য নিয়ে তড়িঘড়ি করে যে সিনেট অধিবেশন ডাকা হয়েছে, তাতে আবার সর্বসাকুল্যে উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৭ জন। শতকরা হিসেবে যা মোট সদস্যের মাত্র ৪৫%।
অধিকাংশ মেম্বার বাদ দিয়ে মাত্র ৪৫% সদস্যের উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশন ডাকা বা আগামী চার বছরের জন্য ভিসি প্যানেলের মনোনয়ন দেয়া কতটুকু গনতান্ত্রিক বা কতটুকু নৈতিক, তা নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদগ্ধজন বলবেন। আমার প্রশ্ন হলো, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া সিনেট অধিবেশন ডাকা ছাত্র-ছাত্রীরা মানতে বাধ্য কিনা বা ছাত্র-ছাত্রীরা সিনেটে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য দাবী কি জানাতে পারবেন কিনা???
৫২, ৬২, ৬৫, ৬৯, ৭১, ৯০, ২০০৭ সহ সকল গনতান্ত্রিক বা স্বাধিকার আন্দোলনে ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবোজ্বল ভূমিকা বা আত্মত্যাগের মহান ইতিহাস। অথচ আজকে দেখলাম কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর দাবীকেও বিশ্ববিদ্যালয় গনতান্ত্রিকভাবে মোকাবেলা না করে তাদেরই ছাত্র-ছাত্রীদের উপর বীর দর্পে ঝাঁপিয়ে পড়লেন আর আমাদেরকে স্মরন করিয়ে দিলেন - শিক্ষক বা অভিভাবক যে হই না কেন, জাতীয় খেলা হাডুডুতে ধুক্কু ধস্তাধস্তিতে কেহ কারোই ছাড়ি না তো সমানে সমানে।
আজকে এই ধস্তাধস্তি দেখার পর ইন্টারনেট সার্চ করেও প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সালের ওয়ার্ল্ড রাঙ্কিং এ পজিশন জানতে পারলামনা, এশিয়ার শীর্ষ ২৯৮টি বিশ্ববিদ্যলয়ের নাম কয়েকবার পড়েও আশাহত হলাম। কারন আমাদের এক একটি জেলার সমান দেশ বা জেলার জনসংখ্যার সমান দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামও আছে, শুধু নাই আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এর কারন কি, আমরা কি শিক্ষার মানোন্নয়নের গবেষনায় মনোযোগ না দিয়ে ধস্তাধস্তিতে বেশী মনোযোগ দিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজন ভেবে দেখবেন আশা করি, না হলে ভবিষ্যতে দক্ষিন এশিয়ার রাঙ্কিংও হয়তবা আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
মোঃ শওকত হোসেন বিপু
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:৩৯