২১ বছর বন্দীত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে অং সান সুচি যেদিন প্রথম বাসা থেকে বের হলেন সেদিন ছিল ১৩ই নভেম্বর ২০১০ সাল। বিবিসির কল্যানে সুচির মুক্তির ক্ষনটি আমার লাইভ দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেদিন তিনি বাসা থেকে বের হয়ে গ্রিলের উপর দাঁড়িয়ে উপস্থিত উৎফুল্ল জনতা এবং সাংবাদিকদের বললেন - নাউ, আই এম ফ্রি।
সেদিন বিশ্বের অগনিত মানুষের মত আমিও আশা করেছিলাম - গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর দিকে এগিয়ে যাবে সামরিক জান্তার নিয়ন্ত্রনাধীন মায়ানমার সরকার। তারপর আস্তে আস্তে ২০১২ সালে উপনির্বাচনের মাধ্যমে সুচির পার্লামেন্টের সদস্য হওয়া এবং ২০১৫ সালের নির্বাচনে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সাধারন নির্বাচনে বিপুল বিজয় বিশ্বকে আশা জাগিয়েছে।
কিন্তু সব আশায় গুড়েবালি যখন ২০১৬ সালে সুচির সরকারের প্রথম বছরেই রোহিঙ্গাদের উপর সামরিক বাহিনীর নির্মম নির্যাতন যার ফলে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির বাংলাদেশে আগমন এবং সর্বশেষ গত দুই সপ্তাহে প্রায় তিন লক্ষাধিক লোকের আমাদের দেশে আগমন।
যে লোকগুলো আসছে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য খুবই লোমহর্ষক। শিশু এবং নারীদের সাথে যে রকম আচরন করা হচ্ছে - তা শুধু গনহত্যাই নয়, মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিরল, নৃশংস, বেদনাদায়ক এবং মর্মান্তিক। গ্রামের পর গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং সেই আগুনেই পুড়িয়ে মারা হচ্ছে শিশুদের, নারীদের করা হচ্ছে ধর্ষন আর যুবক বা তরুনদের পৈশাচিক নির্যাতন করে হত্যা। কোন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে রাখাইন প্রদেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছেনা অথচ আইনশৃংখলা বাহিনীর বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে - রোহিঙ্গারা নিজেদের ঘর নিজেরা আগুন দিয়ে দেশত্যাগ করছে।
এত কিছুর পরও, শান্তির নোবেল বিজয়ী যখন বলেন - এগুলো সবই মিথ্যা, বানোয়াট বা মিডিয়ার অপপ্রচার। তখন শান্তি বেগমের জন্য করুনা করা ছাড়া আর কিই বা আছে করার। ধিক তোমার জ্ঞানে, ধিক তোমার নোবেল জয়ে, ধিক তোমার মনুষ্যত্বে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা, তোমাকেও না। শুধু অপেক্ষা সময়ের।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৭