জীবন নিয়ে আমার অনেক পলায়নবাদীতা আছে। সুযোগ পেলেই আমি বাস্তবতা থেকে পালাই, সব কিছু ছাপিয়ে কাপুরুষ হিসাবে আমার পরিচয় ছড়িয়ে পড়ে। সমাজে কিছু কিছু ভূমিকা নেওয়ার কথা ভাবলেই আমার সারা শরীর হিম হয়ে আসে, মাথা কাজ করে না। আর তখন আমার হাটু কাপে। স্বীকার করি আমি যথেষ্ট সাহসী নই।
জীবনে আমি কখনও শিক্ষক হতে চাই নি, কিংবা বিচারক... খুব সৌভাগ্যবান মনে হয় নিজেকে যে চাপে পড়ে হোক কিংবা দৈবের বশে- আমাকে এই পেশায় যেতে হয় নি। শিক্ষকের ভুমিকায় কিংবা বিচারক- নিজকে কল্পনা করলেই আমার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। বুঝতে পারি, আমার হিম্মত অনেক কম।
এ সমাজে যারা শিক্ষক কিংবা বিচারক তাদের আমি মুগ্ধতার দৃষ্টি নিয়ে দেখি। তাদের আমি আলাদা ভাবে সম্মান করি। তারা অবশ্যই দুঃসাহসী, শিক্ষকতা করা কিংবা বিচারক হওয়া নিঃসন্দেহে সাহসের বিষয়। এটা একটা সুখের ব্যপার- দুনিয়ায় সাহসী মানুষের অভাব হয় নাই, দুনিয়ায় শিক্ষক কিংবা বিচারকের আকালও পড়ে নাই। কিন্তু নিজের কথা ভাবলেই আমি স্পষ্ট বুঝি- কত দুর্বল, মানুষ হিসাবে আমার চরিত্র!!! আমি কাউকে কিছু শিখাচ্ছি, কোথাও আমার ভুমিকা শিক্ষকের- আমার সুদুরতম স্বপ্নেও আমি এটা চিন্তা করতে পারি না। আমার শুধু মনে হয়, বিপুলা এ ধরনীর কতটুকু জানি? কাউকে কিছু শেখানোর স্পর্ধা আমি কি ভাবে দেখাতে পারি। কি এমন আমার জ্ঞান, যে কাউকে সেটা দান করতে যাবো? দুইদিন পরেই তো আমার জারিজুরি সব ফাঁস হয়ে যাবে। লোকে আঙ্গুল তুলে বলবে- দ্যাখো, অপদার্থটা কি সব ভুল ভাল শিখিয়ে গেছে... ভয়ে সত্যিই আমার হাঁটু কাঁপে এবং আমি জীবন থেকে পালাই।
কখনও বিচারকের আসনে নিজেকে দেখার কথা ভাবি নাই। আমি তো জানি মানুষ হিসাবে আমি কত কনফিউজড। সব কিছু নিয়ে আমার দ্বিধা কত বেশি। আসলে জগতের অনেকেই বেঁচে গেছে- আমার বিচারের রায়, তাদের দেখতে হয় নাই। আমি তো জানি বিচারকের আসনে বসলে নাদানের মতো সব কিছু কিভাবে আমি গুবলেট করে দিতাম। যা দেখতাম যা শুনতাম তাতেই সায় দিয়ে ফেলতাম। কখনও মনে হতো এটা ঠিক, কখনও মনে হতো ওটা। আর আমার অপরিপক্ক অপটু হাতে এই সব বালখিল্য কান্ড দেখে- ইতিহাস রাগ করে আমার কান ধরে...
অথচ দ্যাখো, শিক্ষক কিংবা বিচারক না হতে হয়েও আমি কেমন দিব্যি বেঁচেবর্তে দিন কাটাচ্ছি। আল্লার কাছে শুকরিয়া, আমার পলায়নবাদীতা, আমার হাঁটু কেঁপে ওঠা, আমার কাপুরুষত্ব ইতিহাস এখনও টের পায় নাই।