somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রামায়ণের সহজ গল্প-- অযোধ্যাকাণ্ড শেষ

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধীর পায়ে ভরত এল রামের পাতার কুটিরের সামনে।তাকে দেখেই রামের চোখে জল আসে।ভরত অভিমানে বলে,মেয়েদের বুদ্ধি কম ,এটা কি তুমি জানো না ?তাদের কথায় কেন তুমি রাজ্য ছেড়ে এলে।
রাম জানায়,আমি রাজ্য ছেড়েছি বাবার জন্য।তিনি যা কথা দিয়েছেন ,আমার প্রতি দুর্বলতায় যদি সেই কথা তিনি না রাখেন অযোধ্যার অপমান হত।সিংহাসন সামলানো সহজ কথা না।
ভরত জানায় যে সেই সত্য রক্ষায় বাবা যে অনেক কষ্ট পেল।এই বয়সে এত কষ্ট হলে কি আর কেউ বাঁচে? হয়ত সেই কারনেই তিনি সাত দিনের মাথায় মারা গেলেন।
রাম বাবার মৃত্যু খবর পেয়ে কাঁদতে লাগল।
ভরত জানায়,মরার কালে বাবার পাশে কোনও ছেলে ছিল না।তার দেহ তেলে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল।আমি মামাবাড়ি থেকে ফিরে অন্তেষ্টি করেছি।কিন্তু তুমি বড় ছেলে ,তোমারও কর্তব্য আছে।
তখন বশিষ্ট মুনির বিধানে চিত্রকূটের সব মুনিদের নেমন্তন্ন করে ফল্গু নদীর ধারে আবার দশরথের শ্রাদ্ধ করল রাম।ভরত টাকা পয়সা এনেছিল এই কারনেই।
এরপর দুই ভাইএ রাজনৈতিক আলোচনায় বসল।রাম ফিরে যেতে পারবে না।রাজা হয়ে সে ঘোষণা করেছে একবার,কিন্তু ভরতও রাজা হলে লোকে মানবে না।তখন রামই বুদ্ধি বার করল যে ভাই তুমি এক কাজ কর পাশেইনন্দীগ্রাম,সেখানে নতুন রাজধানী করো,করে দেশ চালাও।
ভরত বলে ঠিক আছে ,তোমার প্রতিক হিসাবে তোমার পাদুকা থাকবে অযোধ্যার সিংহাসনে।লোকে জানবে তুমিই রাজা,তাহলে আর সমস্যা হবে না।
ভরত রাজ্যে ফিরে স্বর্গের বিশ্বকর্মার মত শ্রেষ্ঠ কারিগরকে দিয়ে সুন্দর করে নতুন রাজধানী বানাল নন্দীগ্রামে।এবার কৌশল্যা ও কৈকেয়ী দুজনেই রাজমাতা হল।মহিলামহলের সমস্যা মিটল।
চিত্রকূটে সুন্দর পরিবেশে রাম থাকেন।মুনিরা আছে চারিদিকে।এক বছর কেটে গেল সেখানে ।দশরথের মৃত্যুর বর্ষপালন অনুষ্ঠান করা দরকার।রাম গেল সেই সব খোঁজ খবর নিতে।সীতা ফল্গুনদীর তীরে বালি নিয়ে খেলা করছে।পাশেই তুলসী গাছ।এক ব্রাহ্মণকে সাক্ষী রেখে সীতা নিজেই বালি দিয়ে প্রায় নিখরচায় দশরথের শ্রাদ্ধ করে ফেলে।রাম ফিরলে সীতা জানায়,যে শ্রাদ্ধ হয়ে গেছে,দশরথের আত্মা এসে পিণ্ড নিয়ে গেছে।কাজেই আর কোনও আয়োজন দরকার নাই।
রামের এই কথা বিশ্বাস হয় না।তখন সীতা ব্রাহ্মণকে সাক্ষী মানে।ব্রাহ্মন পালটি খেয়ে জানায় সে এসব কিছুই জানে না।কবে সীতা শ্রাদ্ধ করল,কবে তা দশরথ নিল—সে এসব দেখেনি।তখন সীতা তুলসীকে আর ফল্গু নদীকেও সাক্ষী মানে কিন্তু তারাও ব্রাহ্মণের পক্ষে ভোট দিল,কেউই এসব জানে না,রামের আবার শ্রাদ্ধ করা উচিত।বটগাছ এসে তখন রামকে বলে ,তুমি নিজেকে প্রশ্ন করো রাম।নিজেই ঠিক করে ভাবো কাকে বিশ্বাস করা উচিত তোমার।কে তোমার প্রকৃত কাছের লোক?
বটের কথায় রাম মেনে নেয় যে সীতার শ্রাদ্ধ বৈধ।সীতা ব্রাহ্মণকে অভিশাপ দেয় যে,তুমি সমাজের মাথা হয়ে আছ ঠিকই কিন্তু জানবে তোমার কষ্ট যাবে না।চিরকাল ব্রাহ্মণ জাত ভিখারি হয়ে থাকবে এই পৃথিবীতে।
তুলসীকে সীতা অভিশাপ দেয় যে সে ছোট ঝোপ হয়ে থাকবে,আর যত শেয়াল-কুকুর তাকে দেখেই প্রস্রাব করবে তার গায়ে।আর ফল্গু নদীকে অভিশাপ দিল যে ফল্গু বালিচাপা পড়বে।লোকে জানবেও না যে নীচে ফল্গু নদী আছে ,সবাই এমনকি পশুরাও তার বুকের ওপর দিয়ে হেঁটে যাবে।
রাম লক্ষ্মন সীতা চিতকূটে ভালোই ছিলেন।অনেক প্রতিবেশী। কিছুদিন পরে চিত্রকূটে খড় ও দূষণ নামে রাক্ষসদের অত্যাচার বাড়ল।তারা লঙ্কার রাজা রাবণের আত্মীয়।মুনিরা ভয়ে সিদ্ধান্ত নিল সেই পাহাড়ী গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করবে।তারা এসে রামকে জানাল,তারা চলে যাবে রাক্ষসের ভয়ে।
রামও ঠিক করল আরও দক্ষিনে রওনা দেবে।মুনিরা না থাকলে সীতার নিরাপত্তা থাকবে না।তাছাড়া অনেক বছর পেরিয়েই গেল এভাবে।দেশ যা দেখার দেখে নিতে হবে।সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে আসমুদ্র হিমাচল সবার সঙ্গে।নানা মুনির কাছে নানা অস্ত্র পেয়ে ইতিমধ্যেই রাম শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন অনেক।নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যতদূর যাওয়া যায়,মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়,দেশ দেখা যায় ততই ভালো।

চিত্রকূট পাহাড় থেকে তারা এল গয়ায়।সেখানে এসে জানা গেল পিতৃপুরুষের পিণ্ডদান করতে হয় গয়ায়।সীতা জানতে চায় রামের কাছে,এই জায়গাটায়ই কেন পিণ্ডদান করা হয়?শ্রাদ্ধ তো আগেই সবাই করে।
রাম জানায় গয়ায় গয়াসুর নামে এক মহাবীর রাক্ষস বাস করত।সে বার বার অশ্বমেধ ইত্যাদি যজ্ঞ করে স্বর্গ-মর্ত্য জয় করে ফেলেছিল।দেবতারা ভয় পেয়ে ব্রহ্মার কাছে আর্জি জানায় গয়াসুরকে মারতে হবে নইলে সে সব দখল নেবে।ব্রহ্মা এসে গয়াসুরকে বলে তোমার দেহের উপরে যজ্ঞ হবে,এটাই আদেশ।ব্রহ্মাকে গয়া শ্রদ্ধা করত,সে আত্মবিশ্বাসীও ছিল, গয়াসুর মেনে নেয়।সমস্ত মাল পত্র নিয়ে তার দেহ ঢেকে ,অনেক ঘি ঢেলে আগুন জ্বেলে যজ্ঞ হওয়ার পরে সকলে গয়াসুরের মৃত্যুর জন্য আনন্দ করছে কিন্তু গয়াসুর যজ্ঞশেষে উঠে দাঁড়ল।তখন আর উপায় নেই দেবতাদের বাঁচানোর দেখে ব্রহ্মা তাকে মাথায় পা দিয়ে মেরে ফেলল।কিন্তু সেই গয়াসুরের নামে জায়গাটার নামকরন করল আর ব্রহ্মার বরে সব লোককে একবার অন্তত এই গয়াসুরের দেশে আসতেই হয় বাবা-মা এর পিণ্ড দিতে ও জানতে হয় গয়াসুরের নাম।গয়ায় এসে পিণ্ডদান না করলে কোনও আত্মার মুক্তি নেই অর্থাৎ গয়া বিখ্যাত হয়ে গেল মৃত্যুর বা জীবনের বদলে।
গল্প শেষে রাম ও লক্ষ্মণ গয়ায় পিণ্ডদান করল মৃতপিতার আত্মার উদ্দেশ্যে তারপরে রওনা দিল দক্ষিন দেশের দিকে।চিত্রকূট ছেড়ে আরও দক্ষিনে ।(অযোধ্যাকান্ড সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×