somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাসাউফ - আত্মশুদ্ধির জ্ঞান

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগে অনেক অনর্থক তর্কাতর্কি দেখে মাঝে মাঝে অবাক লাগে। আরো খারাপ লাগে যখন কিছু অমানুষ ও মানবতাহীন ধর্মান্ধদের জন্য অনেকেই ইসলামের কুৎসারটনা করে। মুসলিম জনগোষ্ঠির এই দূর্গতির জন্য অবশ্য তারা নিজেরাই দায়ী। বিজ্ঞানীরা এখনো মন ও আত্মার ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। আত্মা হলো বিস্ময়কর একটা ধাঁধাঁ। যা দিয়ে স্রষ্টাকে বোঝা যায়। মুসলমানরা সেই আত্মাটাই খু্ইয়ে বসেছে। তারা হয়ে উঠছে বস্তুবাদীদের চেয়েও বস্তুবাদী। সুতরাং পরাজয় তো হবেই।

আত্মশুদ্ধির জন্য যে জ্ঞান সেটা হলো তাসাউফ। ইসলামের ফরয জ্ঞানকে বড়দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- ১. ঈমান সম্পর্কিত, ২. ফিকাহ ( বাহ্যিক আমল সম্পর্কিত) ৩. তাসাউফ (আত্মিক আমল সম্পর্কিত)। তাসাউফ আলাদা হলেও এটি আসলে বাকী দুটির প্রান।

একটা উদাহরন দিলে এর বিস্তৃতি বোঝা যাবে। হযরত আলী (রাঃ) একবার জিহাদের ময়দানে শত্রুকে কাবু করে ফেলেন। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী ইসলামের দাওয়াত দিলো। শত্রু হঠাৎ তার মুখে থুথু দেয়। হযরত আলী(রাঃ) তখন তাকে ছেড়ে দেয়। শত্রু তো অবাক। বলে, তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে কেন? আলী(রাঃ) তখন বলে, আমি আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করছিলাম। তুমি থুথু দেয়ায় আমার মধ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ তৈরী হয়েছে। কাজেই এটা আর জিহাদের মধ্যে থাকলো না। শত্রু তখনই ইসলাম কবুল করলো।

আমি জানি এর মধ্যেই পাঠক দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। তবে কেউ আবার তথাকথিত জিহাদী হয়ে মানুষ খুন করতে ঝাঁপিয়ে পরবেন না। সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে আত্মশুদ্ধি। সেটা করলে কাজে লাগবে। ইসলামে যুদ্ধের যে জিহাদ সেটার প্রেক্ষাপট আলাদা। বোমা মেরে ইসলামের বারোটা বাজানো ছাড়া কিছু হয়েছে বলে সুস্থ মানুষরা মনে করে না।

তাসাউফের মুল কথা হলো আত্মশুদ্ধি। আমরা যে যাই করি না কেন তার শুরু হলো মনে। সুতরাং মনকে শুদ্ধ করতে পারলে কাজও শুদ্ধ হবে। মানুষের দোষও আছে, গুনও আছে। দোষের মধ্যে যেমন অহংকার, হিংসা, সীমাতিরিক্ত রাগ, লোক দেখানো ধার্মিকতা ইত্যাদি। আবার গুনের মধ্যে তওবাহ (গুনাহ থেকে বিরত থাকার প্রতিজ্ঞা), সবর, শোকর, এখলাস (বিশুদ্ধ নিয়ত), আল্লাহর ভয়, বেহেশতের আশা, সর্বদা আল্লাহর স্মরন, মোরাকাবা (সৃষ্টিরহস্য নিয়ে চিন্তা), মোসাহাবা (আত্মবিশ্লেষন)।

তাসাউফের জ্ঞান ও আমল প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয। প্রতিটি আইটেমের চারটা জিনিস না জানা পর্যন্ত জ্ঞানপূর্ন হয় না- ১. শরীয়তের ভাষায় সংজ্ঞা ২. উৎস বা কারন ৩. দোষ বা গুনটি আছে কিনা বোঝার উপায় ৪. উন্নতি বা শুদ্ধির উপায়।

অহংকারের অনেক ধাপ। সর্বনিম্ন ধাপ হলো মানুষের সাথে অহংকার। তারপর হলো নবীরাসুলের সাথে, সর্বোচ্চ হলো আল্লাহতায়ালার সাথে।

এবার আসি অহংকার কিভাবে কিভাবে উৎপত্তি হয়। এক নম্বরেই হলো জ্ঞান। এরপরে ধনসম্পদ, ভালো চেহারা, লোকবল। আসলে আমরা সবাই ই যেহেতু সাধারন মানুষ, আর বেশী বলার দরকার নাই।

এবার আসি চিকিৎসায়। দুইভাবে হতে পারে - জ্ঞানগত, আমলগত। যেমন জ্ঞানের অহংকার দূর করার জ্ঞানগত চিকিৎসা হলো ফিকির করা আমি নিজেকে যে এত জ্ঞানী ভাবছি, আরো তো অনেক জ্ঞানী আছেন। তারচেয়েও বড় কথা হলো সব বিষয়ের জ্ঞানী হওয়া এক জন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। আর ইসলাম যেহেতু আখেরাতমুখী, জ্ঞানানুসারে আমল না করলে তো বেশী শাস্তি পেতে হবে। এইভাবে চিন্তাফিকির করলে আস্তে আস্তে অহংকার কমে আসবে। তবে জ্ঞানের অহংকার দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আরো জ্ঞানী মানুষের সাহচর্যে যাওয়া। এই কারনেই আল্লাহ হযরত মুসা(আঃ) কে হযরত খিজির (আঃ) র সাথে যাওয়ার ব্যবস্হা করেছিলেন।

এই জামানায় আল্লাহতায়ালা মানবজাতির জন্য ইসলামকে ধর্ম হিসেবে মনোনীত করেছেন, সেখানে দ্বিধাদ্বন্ধের অবকাশ ইসলামে নেই। কিন্তু তাই বলে সাম্প্রদায়িকতার স্থান আবার নেই। কুরআন হাদীসের কোথাও সেটা নেই। এটা ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রচারিত না থাকার ফসল।

আবারো তাসাউফের মাধ্যমেই বিষয়টাকে একটু খোলসা করি। যেমন একজন মুসলমানের সাথে অন্যধর্মের এক লোকের দেখা হলো। মুসলমান লোকটির কোনভাবেই অহংকার করার অধিকার নেই যে অন্যলোকটা তার চেয়ে খারাপ। এখানে অহংকার দমন করার উপায় হলো এই চিন্তা করা যে, আল্লাহ চাহে ত এই লোকটা ইসলাম গ্রহন করতে পারে এবং পাপ করার আগেই মৃত্যুবরন করতে পারে। সুতরাং এই লোকটার অবস্থা আমার চেয়ে ভালো।

এই হলো আসল ইসলাম। নামাজ রোজার সাথে বাইরের জিনিসমাত্র। সেটাও ফরয। কিন্তু পূর্নতা ও সৌন্দর্য হলো এখানে। আত্মশুদ্ধির সাথে নামাজ রোজা করা হলে সেটার মর্যাদা রক্ষা হয়। না হলে নামযও পড়বে, ঘুষও খাবে। তখন ইসলাম নিয়ে লোকজন তো হাসবেই। আর ইসলাম না বুঝে নিজেকে শুদ্ধ না করে বোমা মেরে আর মানুষ খুন করে যে ইসলাম, সেটা শয়তানের ধোঁকাখাওয়া মানুষদের ইসলাম।

তাসাউফ সম্পর্কে আরো জানার জন্য পড়ুন - হযরত ইমাম গাজ্জালী (রঃ) র 'আরবাঈনে'র বাংলা অনুবাদ 'তবলীগে দ্বীন' (এটা তবলীগ জামাতের বই না), কিমিয়ায়ে সায়াদাদ। দ্বিতীয়টা বেশি উচ্চমার্গীয়। সহজভাবে আস্তে আস্তে এগুনোই ভালো।

পাঠকবর্গ, আস্তিকতা নাস্তিকতার তর্ক না তুললেই ভালো হয়। একটি পূর্ণ জীবন দেয়া হয়েছে একেকজনকে। তাই বাকবিতন্ডার চাইতে নিজের জিজ্ঞাসাগুলোকে নিজের কাছে সৎ থেকে জানার উদ্দেশ্যে গবেষনা করুন। উত্তর পেয়ে যাবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×