somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৃষ্টিবিম্ব

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট “ ।

সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে শাহাদাত হা করে একটা নিশ্বাস ছাড়ল । ইদানিং রেস্টুরেন্টগুলোর নাম পড়লে মনে হয় কত মোহাব্বত দিয়ে রাখা নাম কিন্তু আসলে আদৌতেই তাদের মধ্যে কোনও মিল নাই । এই ভাই ভাই রেস্টুরেন্ট এর মালিকের সাথে তার ভাইয়ের ঝগড়া অনেকদিনের । প্রায় মারমার কাট কাট টাইপের কিন্তু রেস্টুরেন্টের নাম শুনে যে কেউ ভাববে তাঁরা মাণিকজোড় । যাই হোক নামে কি আসে যায় , আমার ভাত খাওয়ার দরকার আমি ভাত খাবো । রেস্টুরেন্টে ঢুকার আগে শাহাদাত মাটির দিকে ঝুকে তাকালো , কিছুক্ষন চোখের পলক না ফেলে রুষ্ট নয়নে মাটিকে শাসিয়ে দিলো । মাটি বিকিরন ছড়ালো তাহাতে চোখ আধালাল শাহাজালাল রুপ ধারন করল । পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে তার মধ্যে ছোট্ট আয়নায় চোখটা একটু দেখে নিলো । হ্যা এবার হয়েছে , পুরাই গাঁজা খাওয়া চোখের মতন দেখাচ্ছে । হোটেল বয় গুলা বড্ড ত্যাদর , বাকিতে খায় বলে ভাল মন্দ ত দিবেই না উপরন্ত এক প্লেট ভাতের পর দ্বিতীয় প্লেট ভাত আসতে আসতে বাইরে গিয়ে বাদাম কিনে খেয়ে আবার বসা যাবে এত সময় নেয় তাঁরা । গাট্টামতন এক লোক একদিন রেস্টুরেন্টে ঢুকেই তাকালো বয় দের দিকে , চোখজোড়া লাল টকটক করছিলো । অর্ডার ও দেয়া লাগে নাই ২ প্লেট ভাত আর ডাল দিয়ে দিলো । এক প্লেট খাবার পর তারপর জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো “ স্যার কি খাইবেন ? গরু , খাসি , বট , বোয়াল মাছ , পাঙ্গাশ মাছ । পাঙ্গাশ নাম পুরোটাও বলতে পারেনি বেচারা তখন ই লোকটা সিনেমার ভিলেনের দৃশ্যের মতন “ হুহ “ বলে তাকালো । অগ্নিশর্মা নয়ন পানে তাকিয়ে পাঙ্গাশ এর পা বেড়িয়ে এলো “ঙ্গাশ” থেকে গেলো ভিতরে , তড়িঘড়ি করে বয় অর্ডার দিয়ে দিলো ঐ স্যারের লাইগ্যা একটা সইস্যা ইলিশ আর চিংড়ী ভুনা ল ।। ব্যাপারটা দেখে সেদিন হা হয়ে গিয়েছিলো শাহাদাত । তারপর থেকে শাহাদাত বুঝতে পারলো সব হল ভাবের দুনিয়া । কিন্তু তার চশমার নিচে চোখজোড়া এত ছোট লাগে সেখানে লাল করা দুঃসাধ্য এবং তার চেয়ে কঠিন হলো গাঁজা খাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব । এটা নিয়ে অনেক ভেবে শেষ মেষ এক বন্ধু বললো মাথা অনেকটা ঝুকে অপলক চেয়ে থাকবি মাটির দিকে দেখবি চোখ অনেকটা লাল হয়ে যাবে , হয়েছে ও তাই ।

ঐ ভাইয়ের টেবিলডা মুইছা দে , কি খাইবেন ভাইয়া ?

হুহ ! করে শাহাদাত তার জলন্ত জলিল দৃষ্টি নিক্ষেপ করল লেদুর দিকে । লেদু “ভাই ভাই রেস্টুরেন্টে” সেই অল্প বয়স থেকেই চাকুরী করছে , বেচারা যা বেতন পায় তা পুরোটাই বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় । থাকা খাওয়া সব এখানেই হয়ে যায় । শাহাদাত তাকে খুব পছন্দ করে কারন একটাই ডালের মধ্যে মাঝে মাঝে গোল একটা ছোট পোড়া মরিচ তাকে দেয় সবসমই । পড়ালেখা ততটুকু করেনি তবে যতটুকুই করেছে এটাই নাকি তার কাছে বেশি আর বাকি টুকটাক কাস্টমারদের কাছ থেকে শিখে নিবে । তারই কথা এগুলো । চারুকলার ছাত্র আসলে অঙ্কন এর টিপস শিখবে , সাংবাদিক আসলে সাংবাদিকতার টিপস খুজবে আর বেকার রা আসলে নিজেকে উচ্চমরগিয় ভাবে তুলে ফেলবে । শাহাদাত হল শেষের কাতারের ছেলে , লেদু মাঝে মধ্যেই তার কাছে ভাব তোলে । ব্যাটা এমন নচ্ছার যেনো হোটেলের চাকুরী সে বিনে সার্টিফিকেটে পেয়েছে আর অভিশাপ বেকার সার্টিফাইড হয়ে ও তার কাছে নগন্যের পাত্র । সেদিন চারুকলার এক ছাত্রের কাছে সে টিপস চাচ্ছে – ভাইয়া টাক মাথার পিছে চুল আইক্ক্যাম কেমনে ? সামনে টাক পিছে চুল এই দুজ্ঞা এইগুইন আইক্কাম কেম্নে ? চারুকলার ছাত্রটির চেহারা হইছিলো দেখার মতন । সে অপলক দৃষ্টিতে ভাই ভাই রেস্টুরেন্টের ক্যাশিয়ারে বসা বড় ভাইয়ের দিকে তাকালো । ক্যাশিয়ারে বসা ভাই ভাই এর বড় ভাই মাথা থেকে টুপি সরিয়ে টাক মাথায় হাত বুলিয়ে আবার টুপি পড়ায় ব্যাস্ত ।

ভাইয়া ও ভাইয়া কি ভাবতেছেন , কি খাইবেন কননা ক্যারে ?
লেদুর ডাকাডাকিতে সে আবার ফিরে এলো বাস্তবে । শাহাদাত ভেবেছিলো বলা লাগবে না ভাত চলে আসবে ২ই প্লেট কিন্তু হায় এখন ও ১ প্লেট ও এলো না । সে বিমর্ষ মুখে বললো “ ভাত ল আগে “
- চিকনডা না মোডাডা
- তুই জানস না আমি কোনটা খাই
- না জাআআনি কিন্তু আইজকা চিকন্ডা শেষ এল্লেইগা জিগাইলাম , মোডাডা দিয়া খান আইজ
- এত বড় রেস্টুরেন্ট আর ভাতই শেষ , এইডা কিছু হইলো । যা ল । মোডাডাই ল
- ঐ ভাইয়েরে একটা মোডা দে । ভাইয়া লগে কি খাইবেন ? কলিজা ভুনা আছে ফ্রেশ দিমু !
- না ওইসব তেল খেয়ে গ্যাস্টিক বেড়েছে , মাছের মধ্যে কি আছে
- তেলাপিয়া , রুই আর টেংড়া মাছে আছে
- কোনটা ভাল হইছে তুই বল
শিট ম্যান ! এই কথাটা বলা একদম ই উচিত হয়নি শাহাদাতের । এসব বেয়ারাদের উপর যেটা ভাল হবে বললে অনেক সময় উল্টোটাও হয় । সবচেয়ে খারাপ টাই নিয়ে আসবে , আসলে ওদের অইটা ফেবারিট কিন্তু আমার ত নাও হতে পারে নাকি । ভুলে একদিন লেদুর পছন্দ অনুযায়ী একটা আইটেম বলাতে সে মুরগীর গিলা কলিজা নিয়ে এসেছিলো । শাহাদাত জানে যে কাওরান বাজারের আশেপাশ থেকেই এসব মুরগীর ছাল বাকলা নিয়ে আসে , কয়েকটার আবার লোমকূপ দেখা যাচ্ছিলো । তরকারির দিকে চেয়ে লেদুর দিকে তাকাতেই সে ৪ হলুদ দাঁত সহ বলতে লাগল – ভাইয়া হেব্বি টেস্ট আমি খাইয়া দেখছি । এখন বেয়ারাদের প্রিয় খাবার ও খেতে হবে । গা ঝাড়া দিয়ে শাহাদাত বলে উঠল
- না না থাক তোর পছন্দ না , তুই বরং রুই মাছ নিয়ে আয় ঠিক আছে
শাহাদাত রুই মাছ দিয়ে খাচ্ছে , খাওয়া শেষের দিকে কিন্তু এখন ও লেদুর স্পেশাল ডালপোড়ামরিচ ভার্সন এলো না । শাহাদাত মৃদু স্বরে লেদুকে বলল – কিরে ডাল দিবি না ? লেদু একবার তার দিকে তাকালো তারপর কাউকে কিছু না বলে লেদু নিজে গিয়ে কিচেনে ঢুকে ২ পেয়ালা ডাল নিয়ে এলো । একটা মাশকলাইয়ের ডাল আরেকটা প্রতিদিনের সেই ডালপোড়ামরিচের ডাল । মাশকলাই ! উফফ অনেকদিন খাওয়া হয় না । কিছুক্ষন তাকিয়ে লেদুকে বলতেই যাচ্ছিলো লেদু বলে ফেললো – ভাইয়া আর দুগগা ভাত দিই , মাশকলাইয়ের ডাইলডা দিয়ে খাইয়া দেহেন । শাহাদাত হাসি দিয়ে শুধু বলল – দে । খেতে খেতে শাহাদাত যেনো গ্রামে চলে গেলো । গ্রামে মায়ের মাশকলাইয়ের ডাল , আহা ।

খাওয়া শেষে বাইরে দারিয়ে দাঁত খিলি দিচ্ছিল শাহাদাত , মৃদু পায়ে লেদু পাশে এসে দাড়ালো কখন টেরই পাইনি । নরম করে লেদু বলে উঠলো “ভাইয়া “ । ফিরে তাকিয়ে তার প্রশ্নবোধক মুখ দেখে বলল “ কিরে কিছু বলবি “ ?
- জী ভাইয়া মানে অভয় দিলে একটা কতা কইত্যাম
- কি কথা বল , কোন ও সমস্যা হইছে ? মালেক ভাই কিছু কইছে ( ভাই ভাই রেস্টুরেন্টের বড় ভাই) ।
- না না ভাইয়া আমার কুনোউ সমস্যা নাই , নু ফবলেম । খালি আম্নেরে একটা কতা কইতাম
- অ আচ্ছা তা ভয়ের কি আছে লেদু , বলে ফেল
- না মানে ভাইজান আপ্নে ইয়্যানে আহেন অনেকদিন ধইর‍্যাই । আমি আম্নেরে কয়েকদিন ধরে খেয়াল করতাছি, বিশয়ডা জিগামু কিন্তু সাহসে কুলায় না
- কি হয়েছে সরাসরি বল
- না মানে আম্নের চোখ ......
- আমার চোখ ? কি হয়েছে চোখে আবার
- কইদিন ধইর‍্যা দেকতাছি অনেক লাল থাহে , আম্নেরে কি কেউ মাইচ্চে টাইচ্চে নাহী ।
- কি সব জাতা বলছিস মারবে ক্যান
- তাইলে কি ভাই ছ্যাঁক খাইছেন নাকি , অনেক কান্নাকাটি কইল্ল্যে এর‍্যাম অয় । আমি ও ভাই কানলে এমন অয়
- কি কছ না কছ । যাহ্‌ ভাগ । যত্তসব আউল ফাউল কথা । আমার মাথা ব্যাথা উঠলে এরকম হয় বুজেছিস
লেদু কি বুঝলো জানি না শুধু “অ” বলে ঘাড় ঘুরিয়ে চলে গেলো । শাহাদাত ভাবতে লাগলো । নাহ আসলে জোরজবরদস্তি করে পৃথিবীতে কিছু পাওয়া যায় না । মাটিতে তাকিয়ে চোখ লাল করার দিন শেষ , যা করতে হবে মাথা উচু করে । যা চাইতে হবে ভালবেসে । আজকের মাশকলাইয়ের ব্যাপারটাই ত একটা উদাহরন । শাহাদাত মাথা উচু করে আকাশের দিকে তাকালো , চোখের রক্ত নিচে নেমে আসতে লাগল । পকেট থেকে মানিব্যাগে থাকা আয়নাটা বের করে দেখলো চোখের আয়নায় আকাশের নীল রঙ ধারন করেছে ।



[ কিছু কথা - আমি নতুন লেখুয়ে । চেস্টা করছি তাই ভুল ত্রুটি মার্জনীয় । গল্পের চেয়ে কবিতা লেখা আমার কাছে অনেক সহজ মনে হয় । গল্প লেখায় যে ৩টি মোস্ট ইম্পরট্যান্ট সমস্যায় পড়ছি তা হচ্ছে -
1/ গল্পের নাম নির্ধারণ
২/ চরিত্র নির্ধারণ
৩/ গল্প লিখি একটা মাঝে এসে ঘুরপাক খেয়ে চলে যায় অন্যদিকে

এগুলো সমাধান হলে কিছুটা সিথিলতা আসবে বলে মনে হয় আমার মনে ]

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৮
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×