নয়েজিং শহরে এখন মহাড়ম্বরে সভা চলছে। এক বক্তা বলে চলেছেন, "বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার একচ্ছত্র অধিপতি আমরা মশকদল। সারা বিশ্ব জুড়ে আমাদের ওয়ার্কশপ। পৃথিবীর এমন কোন প্রান্ত নেই যেখানটা আমাদের নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে। অলওয়েজ হোস্ট ইজ রিচেবল। ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে ভাসতে থাকলেও আমদের গৌরবময় উপস্থিতি মনুষ্য মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবে ইনশাল্লাহ্। সকাল হতে রাত্রি পর্যন্ত আমরা বিনে পয়সায় মানুষের ব্লাড টেস্ট করে থাকি। আমাদের ক্ষমতা যে কোন মন্ত্রী-মিনিস্টারের চেয়েও কয়েক মিলিয়ন গুন বেশি। আমরা ইচ্ছে করলেই যে কোন মন্ত্রীকে কুপোকাত করতে পারি। নাকে-মুখে-চোখে হুল ফুটিয়ে কলাগোছে পরিণত করতে পারি। মুক্তিযদ্ধে আমরা যে ভূমিকা পালন করেছি তার জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পাওয়ার দাবীদার। কত কত পাকসেনাদের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ঢুকিয়ে ভবলীলা সাঙ্গ করে দিয়েছি তার কোন ইয়ত্তা নেই। আজ জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে 'মসকুইটো দ্যা গ্রেট'দের মহাসেনানিবাস।'
' বন্ধুরা, আমাদের আহার হচ্ছে মানুষ আর জীবজন্তুর রক্ত। কিন্তু মানুষ বড়ই নির্দয়, বড়ই নিষ্ঠুর। তারা আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের সামান্য রক্ত শোষণের বিনিময়ে আমরা বেঁচে যাই। কিন্তু তারা আমাদের সাথে খুবই রূঢ় ব্যবহার করে। এই মানুষ নামের অমানুষেরা একে অপরকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে, জবাই করে অথচ আমাদের মত ক্ষুদ্র প্রাণীর সামান্য রক্তশোষণ সহ্য করতে পারে না। আমরা তাদের এই হীনমন্যতার প্রতিবাদে সারা পৃথিবীব্যাপী জোর আন্দোলন চালাচ্ছি। তাই বন্ধুরা, আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন- আপনারা সবাই এর প্রতিবাদ করুন, জেগে উঠুন, কামড়ে কামড়ে ওদের জর্জরিত করে বুঝিয়ে দিন আমরা হলাম- মসকুইটো দ্যা গ্রেট।"
এবার দ্বিতীয় বক্তার পালা। শুরু হলো তার কোকিলকন্ঠী কর্ণছেদী ভাষণ। বন্ধুরা- মানুষ অর্থাৎ জনসাধারণ যতই নির্দয় হোক না কেন, আমাদের মেয়র সাহেব এবং সিটি কর্পোরেশনের কর্তা ব্যক্তিরা বড়ই সদয়। তারা বড়ই মহান । কর্পোরেশনের লোকজনের 2 নম্বর ওষুধ ছিটানোর বদৌলতে আমরা এখনো বহাল তবিয়তে বেঁচে আছি। সাধারণ মানুষের মশক নিধনের হীনমন্য চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে তিনি আমাদের প্রতি যে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন সেজন্য তাকে জানাই প্লাজমোডিয়াম শুভেচ্ছা। (একটু থেমে)- আরেকটি বিষয়- স্কুল-কলেজ কতৃপক্ষ ও বড়ই দয়ালু। তাদের বদান্যতায় আমরা বিশেষ করে ল্যাবরোটরিতে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মশার কামড় সম্পর্কে প্র্যাকটিক্যাল ধারণা দেয়ার সুযোগ পাই। তাই বন্ধুরা, আপনারা এসব মহানুভব ব্যক্তিদের কামড়ানো থেকে বিরত থাকুন। তবে যারা সপ্রে ছিটিয়ে কিংবা হাত দিয়ে ঠাস্ ঠাস্ করে আমাদের নিধনযজ্ঞে প্রবৃত্ত হয় তাদের কপালের মাঝ বরাবর হুল ফুটিয়ে সুপারি করে দিনে কিংবা ম্যালেরিয়ার-ফাইলেরিয়া-ডেঙ্গুর জীবাণু ঢুকিয়ে দিয়ে শয্যাশায়ী করে দিন আর এই অভিনব প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে ওদের বুঝিয়ে দিনে আমরা হলাম- মসকুইটো দ্যা গ্রেট।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যখন গাছের আড়াল থেকে বক্তব্য শুনছিলাম তখন এক বেয়াদব মশা সেমিনারে যোগ না দিয়ে নাকের সামনে বদ মতলব নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। গালে বসতেই সজোরে করলাম চপেটাঘাত। এ কি! সাথে সাথে সেমিনারের সব মশারা দলবেঁেধ ছুটে আসতে লাগলো আমার দিকে। উপায়ন্তর না দেখে দিলাম ভোঁ-দৌড়। তারাও ছুটল পেছন পেছন। সামনে পড়ল পঁচা ডোবা। উপায়ান্তর না দেখে তাতেই 'r ' ব্যাসার্ধের লম্ফ দিয়ে পড়লাম। দেখি- মশাগুলো পানির উপড়ে ঘুরপাক খেতে লাগলো। যেই মুখ তুলি অমনি সম্মিলিত এট্যাক।
জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালের বিছানায়। বিকট কিম্ভুতকিমাকার মুখ দর্শনে একটা কথাই বের হলো- আসলেই ওরা হচ্ছে- মসকুইটো দ্যা গ্রেট।
** লেখাটা অনেক আগে ডি-ম্যাগে প্রকাশিত।
** সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ : সস্তা প্যাঁচাল। যাদের সময়ের অনেক দাম তারা এর পেছনে সময় নষ্ট করবেন না।
*** বিফলে মূল্য ফেরত দেয়া হবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


