somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলে গেলেন হাবিব তানভির

২৩ শে জুন, ২০০৯ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
চলে গেলেন ভারতীয় নাট্য জগতের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব হাবিব তানভির৷ সংস্কৃতি জগতের প্রায় সর্বত্রই ছিল তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ৷ বিখ্যাত অনেক নাটক রচনা ও পরিচালনা করেছেন বহুমুখী প্রতিভাবান এই মানুষটি৷



হাবিব লিখেছেন কবিতা, অভিনয় করেছেন ছায়াছবিতে৷ প্রথম দিকে হিন্দি ভাযাভাষী অঞ্চলে পরিচিতি পেলেও খুব শিগগিরই দেশ ও ভাষার গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক নাট্যাঙ্গনেও খ্যাতি অর্জন করেন হাবিব তানভির৷

হাবিব তানভিরের জন্ম ১৯২৩ সালে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রাজধানী রায়পুরে৷ রায়পুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করার পর গ্রাজুয়েশন করেন নাগপুরের মোরিস কলেজ থেকে৷ এম এ পড়েন আলিগড় চলে গেলেন ভারতীয় নাট্য জগতের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব হাবিব তানভির
মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে৷

কবিতার প্রতি হাবিব তানভিরের আগ্রহ খুব অল্প বয়স থেকেই৷ কবিতার পাশাপাশি হিন্দি ছায়াছবির জন্য গান লিখতেও শুরু করেন তিনি, অভিনয় করেন কয়েকটি ছবিতে৷ এই সুযোগটা এসে যায় তাঁর ১৯৪৫ সালে বোম্বের অল ইন্ডিয়া রেডিওতে যোগ দেয়ার পর৷ এই সময় তিনি প্রগতিশীল লেখক সমিতিতে যোগ দেন৷ সম্পৃক্ত হন গণ থিয়েটার সমিতির সঙ্গেও৷

১৯৫৪ সালে হাবিব তানভির চলে যান দিল্লিতে৷ যোগ দেন হিন্দুস্তানি থিয়েটারে৷ ছোটদের নাটক নিয়েও কাজ শুরু করেন তিনি৷ রচনা করেন অসংখ্য নাটক৷ প্রযোজনা করেন তাঁর প্রথম বিখ্যাত নাটক ‘আগ্রা বাজার'৷ হাবিব তানভির চেয়েছেন গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থাকতে৷ তাই এই নাটকের চরিত্রগুলিতে অভিনয়ের জন্য তিনি কাজে লাগিয়েছেন স্থানীয় লোকজন, দিল্লির গ্রামের লোক শিল্পী ও ছাত্রছাত্রীদের৷ উন্মুক্ত বাজার চত্বরে অপেশাদার শিল্পীদের নিয়ে পরিবেশিত এই নাটক লোককে বিস্মিত ও মুগ্ধ করে৷ এর পর অনভিজ্ঞ শিল্পীদের নিয়ে আরো নাটক পরিচালনা ও প্রযোজনা করেছেন হাবিব৷ থিয়েটারের প্রচলিত নিয়ম কানুনের গন্ডি ভেঙ্গেছেন৷ ১৯৫৫ সাল নাট্যকার তানভির চলে যান ইংল্যান্ডে৷ অভিনয় ও পরিচালনায় প্রশিক্ষণ নেন রয়াল একাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্টস এবং ব্রিস্টলের ওল্ড ভিক(Vic) থিয়েটার স্কুল থেকে৷ এর পরের দুই বছর তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন৷ নজর দেন সেখানকার থিয়েটারের কর্মকান্ডে৷ ১৯৫৬ সালে আট মাস বার্লিনে কাটান হাবিব তানভির৷ সেখানে তাঁর সুযোগ হয় জার্মানির খ্যাতনামা নাট্যকার ব্যার্টল্ড ব্রেশ্ট এর বেশ কয়েকটি নাটক দেখার৷ যার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় হাবিব তানভিরের পরের নাটকগুলিতে৷ উপস্থাপনা, কলাকৌশল ও কারিগরি দিক দিয়ে তা ছিল অভিব্যক্তিময়৷

১৯৫৮ সালে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে তিনি ফিরে আসেন ভারতে৷ মন দেন নতুন নতুন নাটক পরিচালনায়৷ হাবিব তানভিরের জন্ম ১৯২৩ সালে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রাজধানী রায়পুরে
মধ্যপ্রদেশের ভোপালে স্ত্রী মনিকা মিশ্রের সঙ্গে গড়ে তোলেন ‘নয়া থিয়েটার নাট্টগোষ্ঠী৷' হাবিব তানভিরের জন্ম ১৯২৩ সালে ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের রাজধানী রায়পুরে

৭০ দশকের প্রথম দিকে নাটক নিয়ে আরো পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান খ্যাতনামা এই নাট্যকার৷ নাটককে সাধারণ দর্শকের আরো কাছাকাছি নিয়ে আসেন৷ সংলাপে হিন্দি ভাষার পরিবর্তে আঞ্চলিক ছত্তিশগোঢ়ি ভাষা ব্যবহার করেন৷ ব্যবহার করেন আঞ্চলিক লোক সংগীত৷

১৯৭৫ সালে সৃষ্ট ‘চরণদাস চোর' নাটকটি হাবিব তানভিরকে এনে দেয় বিশ্বখ্যাতি৷ ১৯৮২ সালে এডিনবরার আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে ‘ফ্রিঞ্জ ফার্স্টস অ্যাওয়ার্ড' পায় এই নাটক৷

নাটক ছাড়াও চলচ্চিত্রের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন হাবিব তানভির৷ অভিনয় করেছে ৯ টিরও বেশি কাহিনি চিত্রে৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রিচার্ড অ্যাটেনবরো পরিচালিত ছবি গান্ধী৷

বিতর্কিত কোনো বিষয় নিয়ে নাটক রচনা করতেও পিছপা হননি মুক্তমনা এই মানুষটি৷ তুলে ধরেছেন ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারের ছবি৷ ফলে গোঁড়া ধার্মিক ও রক্ষণশীলদের রোষানলেও পড়তে হয়েছে তাঁকে বার বার৷

হাবিব তানভির শেক্সপিয়ারের ‘এ মিডসামার নাইটস ড্রিম' অবলম্বনে লিখেছেন নাটক - ‘কামদেও কা আপনা বসন্ত রিতু কা স্বপ্ন৷' বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস বিসর্জন অবলম্বনে রচনা করেছেন রাজ রক্ত্৷

অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কালজয়ী এই নাট্য ব্যক্তিত্ব৷ পেয়েছেন সংগীত নাটক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ খেতাব৷ জীবনের শেষ পর্যন্ত ক্লান্তি তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি৷ উর্দু ভাষায় আত্মজীবনী লেখায় ব্যস্ত ছিলেন হাবিব তানভির৷ তাঁর প্রয়াণে বিশ্বের নাট্যজগত বিরাট মাপের এক ব্যক্তিত্বকে হারাল৷
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×