-বেশ্যার ঘরে জন্ম, তোর আবার পড়ালেখা কি? দেখ মাগীর চেত কত! আরে ছিনাল মাগী ঘাড় ব্যাকা কইরা খারাইয়া আছোস ক্যান? এইট পাশ দিয়া কি করবি, জাঁতে উঠবি?
পদ্মার মা একটু বিরতি দেয়। তার পোষাক আলুথালু। মাঝরাতের পর তখন দেয়াল ঘড়িতে বাজে চারটা, সে একটু অবসর পেয়েছিল। ক্লান্ত শরীরটাকে কোনমতে সাফ সুতরো করে গিয়েছিল বিছানায়।
নিত্যদিনকার রুটিনের একঘেয়েমী, অন্যান্য রাতের রানীদের দলের সাথে বসে থাকা পল্লীর গলিপথে; শেষ বিকেল থেকে ঘন্টা বা কতবারের হিসেবে বিক্রি হবার আগ পর্যন্ত, পান খেয়ে লাল করা ঠোট, হাকিমপুরী জর্দার পবিত্র সুগন্ধ, সস্তা মেকআপে ৩৬ বছরের দেহটাকে ২৪ বানানোর চেষ্টা, বুকের কাপড় নামিয়ে দেয়া ব্লাউজের নিচে আর খুলে রাখা দুটো বোতামের কল্যানে বের হয়ে আসা শিথিল স্তন্যের উঁকি মারা সবই পুরোনো।
পদ্মা কিভাবে পেটে এল তা প্রথমে বুঝতে পারেনি পদ্মার মা। তবু পদ্মা এলো তার মত করে। পাশের রুমের মাধুরী বাচ্চা দেখতে এসে বলেছিল-
- বুঝতাছিনা তোর কপাল পুড়লো নাকি? মাইয়াডারে আড়ালে রাখিস। খানকিডার চেহারা হইছে মাশআল্লাহ্, তোর মত হইলে কয়দিন পর পায়ে পা তুইলা বইয়া খাইতে পারবি।
- দেখিস কস্টমার যাতে না বুঝে। মাইয়া-পোলা আলা মাগীগোর ভিতরে নাকি কোন স্বাদ নাই, তাগোর নাকি কোন কষ্ট হয়না! হারামী-শুওরের দল। সাবধান করে দেয় মাধুরী; এই পাড়ার সবচেয়ে মুখরা নারী।
পদ্মা বড় হয়েছে, এনজিও পরিচালিত স্কুলে গিয়েছে। এখন মেয়ের বয়স ১৫, ভরা যৌবন। মাটির ব্যাংকটা ভেঙে পয়সা গোনার সময় হয়েছে। কিন্তু মেয়ে আরো পড়তে চায়। অথচ এই বয়সে আর শরীর মানেনা পদ্মার মা'র।
বাসী মুখে সে বসে আছে ঘরের ডাবল খাটে। অসম্ভব ব্যথা শরীর জুরে আর এদিকে খিচরে আছে মেজাজ। মেয়ের ব্যক্তিত্ব হয়েছে, রুমের কোনে বসে গুনগুন করে কি হাতিঘোড়া আওড়াচ্ছে; পড়ছে- সমাজ, রাষ্ট্র। ধুর, সব বইয়ের লেখা, সব অবাস্তব। বাস্তব গোপনাঙের, বুকের, পেটের, পিঠের, উরুর, চুলের গোড়ার ব্যথাগুলো। বাস্তব বাম স্তন্যের ডগায় সেই কামড়টা, সেই গোঙানী, জোরে চেপে ধরা পুরুষদেহের চাপে ভেঙে পরার সময়টুকু, বাস্তব পশ্চাৎদেশে ফুটে ওঠা তিনটা দাঁতের দাগ আর বুকে আঁচরের ক্ষতগুলো। রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম এসবের হিসাব নেয়না। আব্রাহাম লিংকনের গনতন্ত্রের সংগা কোন বেশ্যার জন্য নয়, নাগরিক অধিকার নয় কোন খানকি মাগীর বাপের সম্পত্তি।
- ও পদ্মার মা, কাইল কি কইছিলাম মনে আছে?
দরজায় এসে দাঁড়ায় এখানকার সবচেয়ে চৌকষ দালাল।
- হ, আইজ রাইতেই তো...
- সব রেডি রাইখো, মাইয়ারে একটু শিখায়া পড়াইয়া দিও। কাস্টমার খুব সরেস, বাগে আনতে পারলে কওন যায়না তোমার আর তোমার মাইয়ার কপাল খুইলা যাইতে পারে।
পদ্মা আড়চোখে তাকায় তার মা'র দিকে, তার সারা শরীর কাঁপে- ঝাপসা হয়ে যায় কার্বনের দাগ, গাছের মন্ডে তৈরী কাগজগুলো দেয়াল তোলে তার সামনে, চোখ ঠিকরে জল আসে, ভয়ে শুকিয়ে আসে গলা।
সে চিৎকার করে বলতে চায়-
- আমি মানুষ হতে চাই। জন্ম আমার পেশা নির্ধারণ করেনা, আমার পরিচয়ওনা।
***
সেদিন খুব ভোরে পাড়ার পথ ধরে একজন মধ্যবয়ষ্ক ভদ্রলোক, কেতাদূরস্ত, সুখী ভঙিতে বেড়িয়ে যেতে দেখে রাত জাগা অথবা ভোরে জেগে ওঠা মানুষ, পুরুষ, শিশু, নেড়ি কুকুর, দু'টো বিড়াল, বেশ্যা, আকাশ, মেঘ, দালাল, চা বিক্রেতা, নলকুপ, ঘরের টিনের বেড়া...
****
সেদিন বেশ বেলা করে সূর্য ওঠে দুপুরের পর, ঘুম ভাঙা বেশ্যাদের দল কেমন করে যেন বুঝতে পারে দলটা তাদের ভারী হয়েছে। তাদের গলায় উঠে আসা বমি আর যোনীপথে পেশাবের বেগ নিয়ে তারা নতুন দিন শুরু।