somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাত্র তিন মিনিটের সেট আপ ( রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রশঙ্গে)

১৮ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সোমবার ঘড়ির কাটায় বিকেল ৪টা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদুল্লাহ কলাভবনের দক্ষিণ গেটের সামনেই একটি আম গাছের নিচে বেদিতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের ২০-২৫ নেতা-কর্মী। ওই স্থানেই বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের নবাব আব্দুল লতিফ হলের সেক্রেটারি রাসেল মাহমুদকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তন্ময় আনন্দ অভি।

বেলা ২টা থেকেই তাকে এভাবেই আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর কিছুটা পশ্চিম-দক্ষিণে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা। তাদের কিছুটা পেছনে একটি বন্ধ চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন রাজশাহী শহর থেকে আসা বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক ৪টা বেজে ৬ মিনিট! ঠিক সেই সময়ে প্যারিস রোডে দেখা যায় পুলিশের তিনটি ভ্যান। এক মিনিটের মধ্যেই তারা শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনে ছাত্রলীগের পাশেই এসে থামিয়ে দেয় তাদের ভ্যান। পুলিশ গাড়ি থেকে নামার আগেই তাদের সামনে দিয়ে শিবির নেতা রাসেলকে হাত ধরে শহীদুল্লাহ কলা ভবনের ভিতরে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া।

এ সময় তাদের সঙ্গে ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, কাউসার আহমেদ কৌশিক, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক সাবরুন জামিল সুষ্ময়, ছাত্রলীগ কর্মী রিনেট, মিজান ও ডন। তারা ভেতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থেকে নামে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার তানভির হায়দার চৌধুরী ও মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেনসহ অন্তত ২৫ জন পুলিশ।

ওই ভবনের ভেতরে এবং বাইরে অবস্থান করা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে আরো জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতারা যখন রাসেলকে ভবনের ভেতরে নিয়ে যায় তখন সময় ঠিক ৪টা ৭ মিনিট। এর মাঝেই ভবনের বাইরে (দক্ষিণ গেটের সামনে) দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল নিয়ে ছাত্রলীগের তিন নেতা হঠাৎ করেই চলে যান ভবনের পূর্ব গেটে। সেখানে গিয়ে আগে থেকেই তালাবদ্ধ করে রাখা ভবনের গেট খুলে ফেলেন তারা। এতো কিছু হয়ে যাওয়ার পরও কোনো কিছুই আঁচ করতে পারেননি সাংবাদিকরা।

এভাবেই কেটে যায় আরো দু’টি মিনিট। বাইরে সাংবাদিক, পুলিশ ও ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মীরা তখনো ঠাণ্ডা মাথায় গল্প চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ওই ভবনের নিচ ও তৃতীয় তলায় চলছিল দু’টি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এ সময় হঠাৎ করেই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল-তুহিন চলে যায় ভবনের ভিতরে। সাংবাদিকরাও কিছুটা ভবনের ভিতরে যেতে থাকেন। সময় তখন ঠিক ৪টা বেজে ১০ মিনিট।

ভবনের ভেতর থেকে তখন পরপর দু’টি গুলির আওয়াজ ভেসে আসে। শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গেই সাংবাদিকরা চলে যান ভবনের ভেতরে। এ সময় তাদের সামনে দিয়ে চাপাতি হাতে দৌঁড় দেয় রুনু। ভবনের নিচ তলায় পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা পিস্তুল হাতে পালিয়ে যেতে দেখেন কিবরিয়াকে।

এছাড়া বিভিন্ন ছোট ছোট ধারালো অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের নেতা কৌশিক, রিনেট, মিজান, ডন, সুষ্ময় দৌঁড়ে গিয়ে অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। রাসেলকে ভবনের ভিতরে ঢুকানো থেকে শুরু করে ছাত্রলীগ নেতারা পালিয়ে যাওয়ার মধ্যে সময় ব্যয় হয় মাত্র তিন মিনিটি! এই অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায় ছাত্রলীগের অপারেশন।

ওই স্থানে থাকা একাধিক সাংবাদিক জানান, তারা গিয়ে ওই ভবনের নিচ তলায় সিঁড়ির নিচে শিবির নেতা রাসেলকে নিথর হয়ে পরে থাকতে দেখেন। এ সময় তাদের সামনে দিয়ে হেটে চলে যায় তুহিন। পরে রাসেলের ডান পা গোড়ালী থেকে বিচ্ছিন্ন, ডান হাতের রগ কাটা ও দুই পায়ে হাটুর উপর দু’টি অস্ত্রের আঘাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অপারেশন শেষে রাসেলকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তার শরীরে একাধিক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে গত রাতেই। এ ঘটনায় ছাত্রলীগকে দায়ী করে শিবির রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে মঙ্গলবার আধাবেলা হরতাল পালন করে।

ঘটনার বিভৎষতা সম্পর্কে ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘দিনের বেলা ক্যাম্পাসের ভেতরে তাও আবার সাংবাদিক ও পুলিশের সামনে এমন ঘটনা সত্যিই ভাবিয়ে তোলে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের চিন্তা হয়।’

ক্যাম্পাসের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল হাসান বলেন, ‘এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা অন্য কারো মাঝে আতঙ্কের কিছু নেই। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×