এদিকে কোন এক উপজেলায় মোনার ঘুম ভাঙল। ময়লা চুনকাম করা দেওয়াল, কাঠের দরজায় উইএর লম্বা লাইন। একটা তক্তপোশের উপর শুয়ে আছে সে, ছারপোকার উপদ্রব টের পাওয়া যাচ্ছে।
প্রথমে মোনার কিছুই মনে আসছিলনা। আবছা আবছা যা মনে পড়ে, গল্প অফিস থেকে বের হয়ে যাওয়ার কিছু পরেই দুটো লোক এসেছিল ওর কাছে। একটা লম্বা লিকলিকে, আরেকটা পুরোই আয়তাকার সাড়ে ৫ ফিটের কাছাকাছি কুচকুচে কালো। লিকলিকে লোকটা ওকে ওদের সাথে আসতে বলল। কারা ওরা, কেন এসেছে, কি চায় কিছুই বলেনি শুধু বলল ওদের সাথে আসতে। মোনা রাজি হয়নি , তখন কালো লোকটা একটা ছুরি বের করে। মোনা চিল্লিয়ে উঠেছিল প্রায়, ওর মুখ দিয়ে একটা কঁকানি বের হতে না হতেই লিকলিকে লোকটা এক চড় মারল। মাথাটা বোঁ করে ঘুড়ে গেল ওর। এরপর কি হয়েছে ওর ঠিক মনে নেই। সম্ভবত ওর ঘাড়ে একটা রদ্দা মেরেছিল কেউ। এখনো ব্যথা করছে।
কিন্তু এ কোথায় নিয়ে এসেছে ওরা ওকে ! কেন??
'হ্যালো, ভাই কেউ আছেন? শুনছেন? আমাকে এখানে কেন এনেছেন? হ্যালোওওও....'
দরজায় দুমদুম করে ধাক্কা দিতে লাগল মোনা। পায়ের একটা আওয়াজ পাওয়া গেল। মোনা দরজা থেকে একটু সরে দাঁড়ালো। দরজা খুলে একটা তালগাছ উদয় হল যেন। মোনার ঘাড় আরো ব্যাথা করে উঠল লোকটার মুখের দিকে তাকাতে গিয়ে। লোকটা কোনমতে দরজা দিয়ে ভিতরে সেঁধুল।
'চিল্লাচ্ছিস কেন? নিজেও ঘুমাবিনা তো কাউকে ঘুমাতেও দিবিনা?'
মোনা হকচকিয়ে গেল। কিন্তু তারপরেই আরো জোরে চিল্লিয়ে উঠল,' হ্যাঁ, দিবনা। আগে বলুন আপনারা কারা। আমাকে এখানে কেন জোর করে তুলে এনেছেন? আমার আব্বা জানতে পারলে আপনাদের কি হাল করবে জানেন??'
'সেটা আমার না জানলেও চলবে, আমি শুধু তোকে পাহারা দিচ্ছি। সকাল হলে নুরুল ভাইয়ের সাথে কথা বলিস। কিছু খাবি? খই এনে দিচ্ছি, বসে বসে চিবা।'
'কি আশ্চর্য ! আমি বাড়ি যাব'
'কাজ হয়ে গেলেই যেতে পারবি।'
'কি কাজ?? কার কাজ??'
'অত কথা কইতে পারুমনা। কাল ভাইরে জিগাস। আমি ঘুমাতে গেলুম। কাল মেলা কাজ। বিয়ে বাড়িতে এত কাজ ।'
মোনা অবাক হল। 'বিয়ে ! কার বিয়ে ! আর আমাকে এর মাঝে আনা কেন?'
লোকটা প্রচণ্ড বিরক্ত স্বরে বলল, 'নাচার জন্য। হল ! এবার খুশি! নে শুয়ে পড়।'
বলেই লোকটা বেরিয়ে গেল। দরজা বাইরে থেকে লাগানোর শব্দ পাওয়া গেল।
এদিকে শহরে গল্পর মাথাও বোঁ করে ঘুরছে। নীলার বড় ভাই নুরুল আমিন এতদিন পরে কি চায়? মোনাকেই বা ধরে নিয়ে গেছে কেন?
নুরুলের বড় পরিচয়, সে একটা গুণ্ডা। হয়ত স্বপ্ন দেখে একদিন বড় মাফিয়া হবে। নীলার চরিত্রের পুরো বিপরীত। নীলার বাবা এলাকার প্রভাবশালী লোক, কিন্তু তিনি তাই বলে যে খুব প্রভাব খাটিয়ে বেড়ান তা না। কিন্তু নুরুল কোন সুযোগ ছাড়েনা। তবে নুরুলের পিতা ছেলেকে কন্ট্রোল করতে পারেননা।
নীলার মৃত্যুর পরে নুরুল গল্পকে হুমকি দিয়েছিল যে সে গল্পকে শান্তিতে থাকতে দেবেনা। কিন্তু এর পরে তো প্রায় তিন বছর কেটে গেছে, একবারো নুরুল ওর সাথে যোগাযোগ করেনি। আর মোনা ! ওকে ধরে নিয়ে গেল কেন। গল্পর সাথে সংঘাত, তাহলে গল্পকেই নিয়ে যেত।
অফিস থেকে পুলিশে খবর দেয়া হয়েছে। মোনার বাবাও তাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। পুলিশ বলেছে সকালে গল্প-সুজন আর দারয়ানের সাথে কথা বলবে। কিন্তু কি বলবে গল্প! নুরুল ওকে পুলিশকে কিছু বলতে নিষেধ করেছে এবং বলেছে সকালের মধ্যেই ওর সাথে দেখা করতে । এখন গল্প কি করবে? পুলিশের সাথে কথা বলবে নাকি সবার মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে নীলার বাড়ি যাবে?
(চলবে)