'মোনা তুমি ঠিক কর কি করা উচিত আমার?'
মোনা ঘুরে তাকাল। গল্প ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখের দৃষ্টি মোনাকে ছাড়িয়ে না জানি কোন দূরের কিছুকে দেখছে।
'মানে? তুমি কি বলছ? তুমি কি আসলেই বিয়ে করতে চাও?'
'না মোনা, কিন্তু আমি বিয়েটা করলে তুমি বেঁচে যাবে। তুমি ঠিক কর আমি কি করব।'
'তুমি যে তখন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে --- কেন গল্প? আমাকে কি একটুকু ভালবাসোনা ??'
গল্প খানিক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,'মোনা, সত্য কথাটা এই যে আমি কখনই তোমাকে ভুলিনি। নীলাকে পেয়ে তোমাকে ভুলতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারপরও তোমাকে মাঝে মাঝে স্বপ্নে দেখতাম। দেখতাম তুমি আর আমি হাত ধরে দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্না দেখছি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ হত আর নিজেকে একই সাথে অসহায় মনে হত। ফলাফল, নীলাকে আরও গভীরভাবে ভালবাসতে চেষ্টা করতাম। নীলা ওর পরিবারের সবথেকে অবহেলিত সদস্য। ওর কাছে আমি সারা পৃথিবী হয়ে গেলাম। প্রেমে পা পিছলালাম। তারপর একদিন কঠিন আরেকটা সত্য টের পেলাম, নিজে পায়ে দাঁড়াতে না পারলে নীলাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না।'
মোনা ছলছল চোখে বলল, ' আমি তোমাকে তখন না বুঝে দূর করে দিয়েছিলাম আমার কাছ থেকে। গল্প আমার জন্য তোমার এই অবস্থা। গল্প শুন, তোমার জন্য নীলা দুনিয়া ছেড়ে গেছে। মিলার বিয়েতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু চেষ্টা করলে মিলার জন্য আমরা ভাল পাত্র দেখতে পারি। নুরুল আমিনকে বুঝিয়ে বলি চলনা!'
'ওই লোক কিছু শুনতে রাজি হবেনা। ও প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে এটা বুঝছ না কেন? যাই হোক, মোনা আমি এই বিয়ে করবোনা। সেক্ষেত্রে আমাদের দুজনকে পালাতে হবে জানের ঝুঁকি নিয়ে বুঝতে পারছ? প্রতিটা পদক্ষেপ সাবধানে ফেলতে হবে।'
'হুম ! আমার ভয় করছে।'
'আমারও। আমাদের হাতে আর আড়াই ঘন্টা। কোন প্ল্যান আছে?'
'না। তবে আমার বাথরুম যাওয়া দরকার।'
'কিভাবে যাবে?' গল্প চিন্তিত মুখে এদিক সেদিক তাকাল যেন অ্যাটাচড বাথরুম খুঁজছে।
'আরে আছে একটা, নোংরা তবে কাজ চালানোর মত। দরজার কাছে গিয়ে হাঁক পাড়তে হবে। তখন দরজা খুলে আমাকে বার করে নিয়ে যাবে। এই জায়গাটা একটা বড়সড় রান্নাঘরের মত। আর এই ঘরটা স্টোররুম এর মত।'
'হেই মোনা আইডিয়া। বিয়ে নিয়ে যে ব্যস্ত এরা দরজার বাইরে নিশ্চয় একজনের বেশি পাহারায় নেই।'
'বোধহয়। লাস্টবার যখন ফ্রেশ হতে বের হয়েছিলাম তখন মানুষ খুব একটা দেখিনি এদিকে।'
'গুড ! ওই পিঁড়িটা আমাকে দাও।'
'এটা দিয়ে কি করবে? এতক্ষণ তো মাটিতেই বসে ছিলে। আর পিঁড়িটা যে নোংরা !'
' উফ ! এত কথা কেন বল?? শুন তুমি দরজার কাছে গিয়ে হাঁক পাড়বে যে বাথরুমে যাবে। কেউ একজন এসে দরজা খুলবে। আশা করি একাই থাকবে আর আমি দরজার গা ঘেঁষে থাকব পিঁড়ি হাতে। যেই ওই লোক ঢুকবে অমনি ওর মাথায় ...ঢকাস !!!!! '
মোনা একটা ঢোক গিলল। ভয়ে ওর মুখ-গলা শুকিয়ে গেছে।
বেলা বারোটা বেজে কুড়ি মিনিট। মোনা দরজায় দাঁড়িয়ে চিল্লাচ্ছে,' কেউ আছেন? আমার একটু বাথরুম যাওয়া দরকার। প্লীজ কেউ একজন আসুননা '
দূর থেকে কেউ একজন সাড়া দিল। মোনা ঘুরে গল্পর দিকে তাকাল।
'গল্প এই লোককে আহত করলেও কি আমরা পালাতে পারবো? বাইরে কয়টা লোক আছে তাতো জানিনা।'
'চেষ্টা করতে দোষ কি? কিছু হলে আমি সারেন্ডার করে দেব। এখন চুপ। লোকটা আসছে।'
দরজা খুলে গেল। মোনা দরজা থেকে একটু পিছিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু যেই লোকটা ভিতরে ঢুকল, মোনার মনে হল নিজের গালে একটা চড় কষায়। কি করে ভুলে গেল সে !!! এদিকে গল্পও হতবাক হয়ে পিঁড়ি হাতে স্ট্যাচু হয়ে গেছে।
এ যে সাড়ে ছয়ফিটের পালোয়ান। পাঁচ ফুট আটের গল্প ওর মাথা জন্মেও হাতের নাগালে পাবেনা !
লোকটা ঘুরে গল্পকে দেখে চমকে সরে দাঁড়াল। 'ওই তুই এটা হাতে নিয়ে কি করছিস? মতলব কি ?? '
'জ্বি কিছুই না । এমনি। হাতে নিয়ে ব্যায়াম করছিলাম।'
'ব্যায়াম ! ফাজলামি হচ্ছে । ফেল ওটা হাত থেকে।'
গল্প খটাস করে পিঁঁড়ি ফেলে দিল। ' ফাজলামি কেন হবে? আপনারা আমাকে বেঁধে এনেছেন এখানে। তার আগে বাইক জার্নি করে এসেছি। এখন শুনছি আমার শুভ বিবাহ, তাই একটু ব্যায়াম করে শরীরটা জুত করে নিচ্ছিলাম আর কি।'
লোকটা ভুরু কুঁচকে কি একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় মোড়ক এসে পড়ল। ' কিরে ঝন্টু, কি হচ্চে এখানে? দরজা খুললি কেন?'
' আরে এই ছেমড়ি পা*খানায় যাবে।'
মোনার চেহারাটা হল দেখার মত। ওকে দেখে মনে হল ওর নাকের কাছে কেউ নর্দমার পাক এনে ধরেছে। হতচ্ছাড়ারা বাথরুমের কোন ভাল বাংলা জুটলনা। নিদেনপক্ষে টয়লেট বললেও তো পারে !
'ঠিক আছে নিয়ে যা। আমি এটাকে পাহারা দিচ্ছি।'
মোনা লম্বু পালোয়ানের পিছে পিছে বেরিয়ে গেল। মোড়ক গল্পর ঠিক চোখ বরাবর তাকিয়ে বলল ' শুন হতভাগা, তোকে যা যা করতে বলব সেইমত করবি। নইলে এখান থেকে বের হবার আশা ছেড়ে দিবি ।'
'সেটা তো নুরুল ভাই একবার হুমকি দিয়েই গেছেন।'
' আরে রাখ তোর নুরুল ভাই ! মিলার তোকে বিয়ে করতে বয়েই গেছে। আজ ও বাড়ি থেকে পালাবেই পালাবে। কিন্তু তোদেরকেও একই সাথেই বেরিয়ে যেতে হবে বুঝলি? যা যা করতে বলছি ঠিক সেভাবেই করবি, নইলে মিলা পালাতে যদি সক্ষম হয়ও তোকে হাতের নাগালে পেলে নুরুল মিয়া আস্ত রাখবেনা।'
' আপনি আমাদের সাহায্য করতে চাচ্ছেন?? কেন??'
মোড়ক কেমন ভাবলেশহীন মুখে তাকাল। তারপর গলাটা একটু খাঁকড়িয়ে বলল, 'কারণ একটাই , তুই নীলার ভালবাসা !'
গল্প অবাক হয়ে মোড়কের মুখের দিকে তাকাল। কুচকুচে কালো মুখের চোখদুটো মনে হল একটু চিকচিক করে উঠল। মোড়ক ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিল।
'আমি ঠিক দুইটায় আসব' দরজার ওপাশ থেকে কথাটা বলে চলে গেল সে।
(চলবে)