somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি ওকে দেখেছিলাম সেই ছোট্টবেলায়-১৫

২৫ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠিক পৌনে দুটোয় মোড়ক এসে ওদের দুজনকে ঘরটা থেকে বের করে নিয়ে গেল। এবার আর চোখ বাঁধেনি ওদের। সাথে অবশ্য আরো দুটো মুশকো জোয়ান ছিল। মোনা ভুল বলেনি, ঘরটা রান্নাঘরেরই সম্প্রসারিত অংশ। বেশ বড় রান্নাঘর, তার উপর আবার সামনের উঠানটুকুতে বড় বড় ডেগচি রাখা। দুটো বড় মাটির উনুন তৈরি করা আছে। বেশ একটা সুগন্ধ আসছে রান্নাঘরের ভেতর থেকে।

পুরো রান্নার ব্যবস্থাটাই মূল বাড়িটার পিছনদিকে। শহরে এত বড় জায়গা আর দেখা যায়না। বড় বাড়ি মানেই দেখাশুনা করা এক হ্যাপা।

যাই হোক, ওদের নিয়ে মোড়ক মূল বাড়িটার একতলায় একটা ঘরে ঢুকল। দুই-তিনটা কিশোরী মেয়ে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উতসুক চোখে গল্পকে দেখে আড়ালে গিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়ল। ঘরটা বেশ সাজানো-গুছানো। মোড়ক গল্পকে বসতে বলে সাথের একটা লোককে কি জানি বলল। সে মোনার দিকে ঘুরে বলল ওর সাথে উপরে যেতে। মোনা ভয়ার্ত চোখে একবার গল্পর দিকে তাকিয়ে শেষমেষ লোকটার পিছে পিছে গিয়ে উপরে একটা ঘরে ঢুকল। দুটা মেয়ে বসে আছে ঘরটায়, একজন সাজছে, আরেকজন সাজাচ্ছে।
দুজনেই মোনার দিকে তাকাল, যে সাজছিল লাফ মেরে উঠে দাঁড়ালো। মিলা !

গল্পকে বসতে বলে মোড়ক দরজাটা ভিতর থেকে লাগিয়ে দিল। গল্প একটা চেয়ারে বসেছিল। ঘরটায় আসবাব বলতে আরো দুটা চেয়ার, একটা বিছানা আরেকটা ছোট আলমারি। তবে বেশ টিপটপ ঘর। গেস্টরুম হতে পারে মনে হল গল্পর। উত্তরদিকে একটা দরজা, বাথরুম হতে পারে। বিছানায় একটা শেরওয়ানী ভাঁজ করে রাখা। গল্প মোড়কের দিকে তাকাল। লোকটাকে অস্থির মনে হচ্ছে। শব্দ করে খাটের উপর বসে সে গল্পর দিকে তাকাল।

'চুপচাপ আমার কথা ফলো করবি, যদি তোর ময়নাটাকে নিয়ে ঠিকমত এখান থেকে বের হতে চাস তো।'

'সে তো বুঝলাম। কিন্তু আপনি কেন আমাকে বাঁচাতে চাচ্ছেন আর কেনই বা মিলাকে পালাতে হেল্প করছেন??'

'মিলা একটা ছেলেকে ভালোবাসে, ওর নাম কামরুল। কামরুলের বাবা মিলার বাপের সহপাঠী ছিল এককালে। পরবর্তীতে এক মামলার কাজে ফেসেঁ গিয়ে মিলার বাবা যখন কামরুলের বাপের কাছে হেল্প চায়, ব্যাটা উকিল রাজি হয়নি। বন্ধুত্ব ওখানেই খতম। এমনিতে কামরুল ছেলে মন্দ নয়। নুরুলের জন্য নীলার জীবনটা শেষ হয়ে গেল, আমি চাইনা মিলারটাও শেষ হোক।'

'মাফ করবেন, আপনি কি নুরুল ভাইয়ের পোষা লোক নন? উনার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন। আর নীলার জীবন শেষ হওয়ার পিছে আমারো হাত আছে। বরং বেশিই আছে বলা চলে।'

মোড়ক গম্ভীর মুখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল গল্পর দিকে, তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিল।

' আমি নুরুলের আপন ছোট চাচার ছেলে। বাবা একটা 'নিচু' ঘরের মেয়ের প্রেমে পড়েছিল বলে দাদার সাথে ঝগড়া হয়। নিচু বলতে যে বংশ খারাপ তা নয়, দাদার চোখে নিম্নবিত্ত মানেই নিচু। আমার নানা স্কুলশিক্ষক ছিলেন, বাস্তববাদী ছিলেননা। ছাত্রদের কাছে থেকে কখনোই কিছু চাইতেননা, দাবীও করতেননা, নিপাট ভালোমানুষ ছিলেন। ফলে পয়সাটা তেমন জমেনি। যাই হোক বাবা মাকে বিয়ে করার জন্য ঘর ছাড়লেন। আমার জন্ম হোল। বাবা নিজেও স্কুলটিচার ছিলেন। ভালোই ছিলাম আমরা। কিন্তু আমার বয়স যখন সাত, বাবা-নানা এক দুর্ঘটনায় একইদিনে ইন্তেকাল করলেন। মা ছিল একমাত্র সন্তান।আমাদের দেখার কেউ থাকলনা। দাদার মন গলল। উনি আমাকে নিয়ে আসলেন। মাকে কিন্তু ঘরে তুললেননা।মা আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমার উপর থেকে অধিকার ছেড়ে দিলেন। দাদাও বেশিদিন বাঁচেননি এরপর। তখন থেকে চাচার কাছেই মানুষ।'

'আপনার মা এখন কেমন আছেন?'

'মা এক বয়স্কা মহিলাকে দেখাশুনা করে শহরে। মাঝে মাঝে গিয়ে উনাকে দেখে আসি। আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর বহুদিন উনার সাথে অভিমান করে ছিলাম। চাচা আমাকে নিজের সন্তান হিসেবে কখনই দেখেনি, খালি ফাই-ফরমাশ খাটাতো। কি মনে করে হয়তো বাপের প্রতি সম্মান রাখতেই আমার পড়া-শুনাটা ছাড়ায়নি। তবে এস. এস. সি. যখন ফেল করলাম, ধাক্কায় পড়ার খরচ বন্ধ করে দিল। তাও জিদ ধরে পাশ করলাম পরের বছরই, টাকা দাদী দিয়েছিলেন। তখন নুরুল আমিন সদয় হয়ে আমাকে কলেজটুকু পড়ালো। কোনওমতে এইচ. এস. সি. পার করলাম তারপর থেকে নুরুলের ডানহাত হয়ে আছি।'

'আপনার নাম মোড়ক কে রেখেছে?'

মোড়ক হেসে ফেলল,' নানী। জন্মানোর সময় হাল্কা গোলাপী ছিলাম, দুই-চারদিনের মাথাতেই ঝাঁই কালো হয়ে গেলাম। নানী বলে উঠেছিল গোলাপী মোড়কে এসেছিলাম, তারপর থেকে সবাই মোড়ক ডাকে। নাম নিয়ে মেলা ফাজলামি করেছে আমার বন্ধুরা সেসব কথা না হয় থাক। এখন একটা কথা আগে মন দিয়ে শুন। নীলা তোর উপর অভিমানে আত্মহত্যা করেনি, নুরুলের প্ররোচনায় করেছিল।'

গল্পর মাথাটা বোঁ করে ঘুরে উঠল, একই সাথে যেমন বুকটা হাল্কাও হয়ে গেল নুরুলের উপর চরম রাগ উঠল।

'কি বলছেন কি ? '

' সত্যি। নীলা ওর বাবার ২য় পক্ষের সন্তান জানো কিনা জানিনা। নুরুলের মা বিষ খেয়ে মারা গেছিল। নুরুল তখন ৫ বছরের। আমি ওর ৪ বছরের ছোট। এক বছরের মাথায় নীলার মা বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে ঢুকলেন। উনি নুরুলকে কখনোই নিজের সন্তান বলে মানতে পারেননি। এখন অবশ্য অতটা অপছন্দ করেননা কিন্তু তখন দুচক্ষে দেখতে পারতেননা। ফলে নুরুলকে ওর বাবা আরো বেশি আদর দেয়া শুরু করেন, বাপের আস্কারাতে পরে নুরুল বখে যায়। এদিকে নিজের ছেলে সন্তান পাওয়ার জন্য নীলার মা অস্থির হয়ে যান। নীলার জন্মের সময় ওর যমজ ভাইটা মরে যায়। নীলার মার সব রাগ গিয়ে পড়ে নীলার উপর। উনি ওকে উনার মার হাতে তুলে দেন, মায়ের সামান্য আদরটুকুও মেয়েকে দেননি। নানীর কাছে দুই বছর থাকার পর একদিন নীলার বাপের কন্যাপ্রেম জেগে উঠে, উনি নীলাকে ফেরত নিয়ে আসেন। নীলাকে কেউ যদি এ বাড়িতে সত্যিকারের ভালবাসা দিয়ে থাকে সেটা হোল দাদী। উনি কখনই চাননি নীলাকে দূরে রাখতে। কিন্তু অসুস্থ মানুষটাকে নিজের ছেলেই পাত্তা দেয়না তো ছেলের বউ !

নীলার বাবা ব্যস্ত মানুষ, উনার এত সময় ছিলনা বাচ্চা দেখা-শুনা করার। কোন এক অদ্ভুত কারণে উনি উনার পিতৃস্নেহের সবটুকুই ঢেলে-উগরে নুরুলকে দিয়েছিলেন। আর চার বছর পর উনার ব্যস্ততা কমল। আমি এই বাড়িতে আসলাম, মিলারো জন্ম হল।বারো বছরের নুরুল প্রথম বিড়ি ফুঁকতে গিয়ে ধরা পড়ল। টুকরা টুকরা বিভিন্ন ঘটনা। মিলার ভাগ্যে আবার বাবা-মা দুজনেরই ভালবাসা ছিল। দুজনেই তুখন বাৎসল্যপ্রেমে ভরপুর। নীলার প্রতি ওর বাবার ভালবাসা তেমন প্রকাশ না পেলেও মেয়েকে শাসন করার ব্যাপারে পিছপা হননি। কিন্তু নীলা ছিল ভালবাসার বুভুক্ষু। দাদীও যখন মারা গেল বেচারী বাড়ি ছেড়ে পালাতে চেয়েছিল, পারেনি। ওর বাবা তখন ওর গায়ে হাত তুলেছিলেন। মেয়েটা সারারাত কেঁদেছিল।'

মোড়কের চোখে পানি এসে গেছে। গল্পরও বুকের ভিতরটা যেন দুমড়ে যাচ্ছিল, ওর নীলা !

' নুরুল মাঝে মাঝে বোনের প্রতি খুব মায়া-দয়া দেখাত। ওই ওকে মোবাইলটা কিনে দেয়। ওই বছরই নুরুল বিয়ে করে। সম্ভবত ওই বছরই নীলার তোমার প্রেমে পড়ে।'

'জ্বি ।'

'তোমার বাবা যখন তোমাদের সম্পর্ক মেনে নিলেননা, নীলা ভেঙ্গে গিয়েছিল। তুমি বলেছিলে ওকে অপেক্ষা করতে । জানো ! আমি ওকে ভালবাসতাম।'

গল্প অবাক হয়ে তাকাল। মোড়ক চোখ লাল করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে।

'যে রাতে ও পালাতে গিয়ে ধরা পরে, আমি ওকে বলেছিলাম যে আমি ওকে ভালবাসি। দুনিয়ায় আর কেউ না হোক আমি ওকে ভালবাসি। ও রাজি থাকলে আমি ওকে সাথে নিয়ে পালাব এখান থেকে। এ জায়গায় আমাদের দুজনকে কেউ ভালবাসেনা শুধু অধিকার বজায় রাখতে চায়।

নীলা আমাকে না করে দিল। বলল সে আমাকে ভাইয়ের মত দেখে। আর ওর বাবা কখনই রাজি হবেনা। আমার সামাজিক মর্যাদা নাকি কম, যদিও আমি ওর চাচাত ভাই। আমি দুঃখ পেয়েছিলাম। রাতে কেঁদেছিলাম। সকালে উঠে ভাবলাম ঠিকই তো, বামুন হয়ে কি চাঁদ ধরা যায়! এ বাড়িতে আমি একটা চাকর ছাড়া কিছুই নই। দেখতেও কালা।

যেদিন তোমার বাবা সামাজিক মর্যাদায় নীলার অবস্থান নামিয়ে দিল সেদিন নীলা টের পেয়েছিল আমি কি কষ্ট পেয়েছিলাম ঐদিন। তবে আমি নীলার জন্য কষ্ট পেয়েছিলাম খুব। বলেছিলাম ওকে তোমাকে ভুলে যেতে। চাচা ওর জন্য ভাল ভাল ছেলে নিয়ে আসবেন। মেয়ে রাজি হয়নি। সে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। নুরুল খেপে গিয়ে ওকে আচ্ছামত পিটেছিল একদিন। নীলার মা নুরুলকে থামাননি। নীলার বাবা একটা কথাও বলেননি। মিলা ভয় পেয়ে কেঁদেছিল। নীলা পাথরের মত চুপ করে বসেছিল সারাদিন।

এর ঠিক দুইদিন পর নীলা প্রচন্ড বমি করতে থাকে। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া না করলে যা হয়। নীলা আমাকে ডেকে বলে ওকে এক মহিলা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে। ওই মহিলা ওর বান্ধবীর মা ছিলেন। তিনি সে সময় মায়ের বাড়ি গেছিলেন। আমি নীলাকে বলি যে অন্য ডাক্তারের খোঁজ নিয়ে আসি। আমি গাধা নীলার অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম যে সে বোধ হয় মা হতে যাচ্ছে ! আমি এক গাইনির ডাক্তারের কাছে গেলাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে। উনি কেবল এলাকায় জয়েন করেছিলেন। আমি কি জানতাম যে এ মহিলার ভাগ্নের কাছে নুরুল নীলার ব্যাপারে প্রপোজ করেছে !'

মোড়ক উঠে একবার দরজাটা খুলে বাইরে উঁকি দিল। দেয়ালঘড়িটার দিকে তাকাল, দুটা চল্লিশ বাজে।

' বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আর দশ মিনিট পরে কাণ্ড শুরু হবে।'

'কিন্তু তারপর কি হল !'

'কি আবার হবে ! ওই মহিলা ওর ভাগ্নেকে নীলার ব্যাপারে উল্টা-পাল্টা কথা বলে, নীলাকে না দেখেই ! আমারই উচিত ছিল নীলার কাছে পুরোপুরি সবকিছু শুনে নেয়া। আমি মহিলাকে বলিওনি যে কোন মেয়েকে দেখাতে আনছি। কিন্তু উনি ঠিক দুয়ে দুয়ে চার বানিয়ে নেন। পরে যেটা হল নুরুল খেপে এসে নীলাকে অশ্রাব্য গালাগাল। নীলা খেপে গেল। সে আমাকে আমার ভুলের জন্য দুই কথা শুনাল। অবশ্য তার আগেই নুরুল আমাকে বেধরক মেরেছিল।
নুরুলের বাবা বুকে হাত দিয়ে শয্যাগত হয়ে পড়লেন, নীলার মা মেয়েকে ঘরে আটকে রাখলেন। আর নুরুল দরজার বাইরে থেকেই বলে উঠল যে নীলার জন্য ওদের মান-সম্মান শেষ হয়ে গেছে, প্রতিপদেই নীলার জন্য ওদের এখন থেকে কথা শুনতে হবে ইত্যাদি। সকালে যখন মায়ের কথায় মিলা নীলার ঘরের দরজা খুলে ততক্ষণে সব শেষ।'

ঠিক পাঁচ মিনিট পরে গল্প আর মোড়ক ঘরটা থেকে বের হয়ে আসল। গল্পর পরনে শেরওয়ানী-জিন্স। মুখ-হাত ধোয়া। মোড়ক ওকে অবাক করে দিয়ে বাইরের দরজা দিয়ে বের করে আনল। বাড়ির এক কোনায় এনে দাঁড় করাল। একটু দূরে নুরুল আমিন দাঁড়িয়ে এক লোকের সাথে কথা বলছে, ভুরু কুঁচকে তাকাল।

'নুরুল ভাই, বিয়েরতো একটু দেরী আছে। ওর নাকি ঘরে দম আটকে আসছে তাই বাতাসে নিয়ে আসলাম।'

'তুই চোখে চোখে রাখ তাইলেই হবে।'

গল্পকে আরেকটু ঠেলে নুরুলের আড়ালে নিয়ে এসে মোড়ক বলল, ' শুন, আর পাঁচ মিনিট পরে নুরুল আমিন বাড়ির ভেতর দৌড় মারবে, এই ফাঁকে মিলা তোর মোনাকে নিয়ে বাইরে আসবে। এই রুমালটা ওই কলে ভিজিয়ে রাখ, কাজে দিবে। '

'প্ল্যানটা কি??'

' দেখতেই পাবি, আমি বলার সাথে সাথেই তোর বাইক বরাবর দৌড় দিবি, মোনাকে বলা আছে তোর বাইকে এসে উঠবে চিন্তা করিসনা। ওই যে দেখ একটা পোলা বাড়ির বাউন্ডারির বাইরে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওইটা হোল কামরুল। চার মাসের প্রেম, কিন্তু ছেলে এত ঝামেলা মাথায় পেতে নিয়েছে। নুরুলের সাথে সহজে কেউ লাগতে চায়না। ওর পরিবারেরও মিলার ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই তবুও ও মিলাকে হতাশ করবেনা।'

গল্পর বুকে একটা খোঁচা লাগল। পরক্ষণেই একটা চিন্তা আসল। সে নীলাকে হতাশ করেছে, কিন্তু মোনাকে করবেনা। মোড়কের প্ল্যানটা কাজ করলেই হয়। না হলে সব বরবাদ।

হটাত একটা দুম-ফটাক করে আওয়াজ একটা চিৎকার, তারপরেই বাড়ির ভিতর থেকে একটা হাল্কা ধোঁয়ার রেখা একটা জানলা দিয়ে বেরিয়ে এল। সবাই হইচই করে উঠল 'আগুন! আগুন !' বাইরে যতজন ছিল ভিতরে দৌড় দিল। একজন অবশ্য রান্নাঘরের দিকে ছুটল। তারপর পরই বাড়ির ভিতর থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরিয়ে আসল। ওমা ! রান্নাঘরের দিক থেকেও কালো কালো ধোঁয়া বের হয়ে আসছে ! খানিক্ষণের মাঝেই একটা কালো মেঘ যেন পুরো বাড়িটাকে ঢেকে ফেলল। কেমন করে !!

মোড়কের এক ধাক্কা খেয়া গল্প বাইকের দিকে ছুটল। এতক্ষণে মানুষ-জন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করছে। নুরুল কাকে জানি গাল পাড়ছে। সামনের ছোট মাঠটুকু সামিয়ানা খাটানোয় ধোঁয়া আর বের হতে না পেরে একটা দম আটকানো পরিবেশ তৈরি করে ফেলেছে। গল্প কাশতে কাশতে মুখে ভেজা রুমালটা চাপা দিল। অনেকটা আরাম লাগল। চোখে ভাল করে সে কিছু দেখতে পাচ্ছেনা, পকেট থেকে কোনমতে চাবি বের করল। মোড়ক ওর জিনিসপত্র একটু আগেই ওকে ফিরিয়ে দিয়েছে। বাইকে চড়ে বসে সে কনফিউজড হয়ে গেল। মোনা কই? কোন বাইক সেটা চিনে তো, দেখতে পাবেতো এই ধোঁয়ায় ! হটাত পাশে একটা বাইক এসে দাঁড়াল।

'স্টার্ট দেন, ওরা এসে পড়ল বলে।'

গল্প স্টার্ট দিয়ে মাথাটা ঘুরাল। দুটো মেয়েলী অবয়ব চোখে পড়ল। দুজনেই নীল জামা গায়ে। দৌড়ে আস্তে গিয়ে একজন হুমড়ি খেয়ে পড়ল, গল্প ঘাবড়ে গেল, নামতে হলে তো বাইক বন্ধ করতে হবে। না মেয়েটা খাড়া হয়েছে আরেকজনের হাত ধরে। মোনাই ছিল যে হুমড়ি খেয়েছে। হটাত আরেকটা চিৎকার আর কাছে-পিঠেই একটা মনে হল বোম ফুটল আর রাশি রাশি কালো ধোঁয়া !!

কামরুল চিল্লিয়ে উঠল 'তাড়াতাড়ি'। গল্প বলতে গেল 'মোনাআআ!' কিন্তু ধোঁয়ার চোটে গলা দিয়ে কিছু বের হলনা। ওর বাইকের পিছে মোনা ধপ্পাস করে বসে পড়তেই সে পড়িমড়ি করে রওনা হল। দুই-তিনটা জায়গায় ধাক্কা খেয়ে তারপর বাইক সোজা একটা রাস্তা পেল। অবাক হল যে মোনা ভয় পেয়ে কোন শব্দ করেনি, একবার তো বাইক উল্টাতেই লাগছিল।

কামরুলের বাইকটা কোনদিকে গেছে কে জানে। ব্যাটা তো রাস্তা ভালই জানে । গল্পই অন্ধের মত চালাচ্ছে। ধোঁয়ার রাজ্য পেরিয়ে রাস্তায় এসে এখন চোখ খুলে তাকাতেই পারছেনা এত আলো ! লোকজন কিছু আগুন নেভাতে কিছু দর্শক হতে পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে। কেউ ওদের খেয়াল না করলেই হয়!

খানিক পরে মোনা ওর ঘাড়ে দুইটা টোকা দিল, গল্প ঘুরে তাকাল। ভুত দেখার মত চমকে উঠল। এটা কে ? এটা তো মোনা নয় !!!!!!

(চলবে)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×