জুবায়ের আহমেদ
মানুষ সামাজিক জীব, সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের মাঝেই রয়েছে মানুষের জন্য কল্যাণ। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসের কারনেই মানুষ মানবিকগুণাবলীর চর্চা করতে পারে। একে অপরের সাথে সুখ দুঃখের অনুভূতি শেয়ার করতে পারে। বিপদে আপদে প্রয়োজনে কাছে ডাকতে পারে। কতটুকু কাছে পায় সেটি ভিন্ন আলাপ, তা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়।
যারা আমাদের আত্মীয়, প্রতিবেশী, চাকুরী কিংবা ব্যবসা সূত্রে খুবই নিকটের মানুষ। তাদের সাথে প্রথমত আমাদের স্বাভাবিক হৃদতাপূর্ণ সম্পর্কই থাকে। একসাথে চলতে গিয়ে কিংবা কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই বিভিন্ন কারনে মনোমালিন্য কিংবা লাভ-ক্ষতির বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়, এমনকি মামলা-মোকদ্দমাও হয়ে যেতে পারে।
এই বিষয়ে আমার ভাবনা হলো, যারা খুবই কাছের মানুষ। তাদের সাথেই যতই সম্পদ কিংবা স্বার্থ নিয়ে বিরোধ হোক, আপনি সেগুলো সামাজিক ভাবে কিংবা আইনগত ভাবে মোকাবেলা করবেন। কখনোই খারাপ আচরণ কিংবা অনেতিক উপায়ে ক্ষতিকারক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নয়।
এর কারন হলো, এক সময় সমস্যা মিটে যায়, আবারো সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়, কিন্তু মাঝখানে একে অপরের প্রতি বিশ্রি কথায় কাঁদা ছুড়াছুড়ির ফলে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়ে কিংবা পরবর্তীতে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও তিক্ততার সময়ের কাঁদাছুড়াছুড়ির ঘটনাগুলো যন্ত্রনা বাড়ায় সবসময়। সেই সাথে মানুষের মাঝেও ভুল বার্তা পৌঁছায়।
ব্যাপারটা এমন যে, আমার বন্ধুর সাথে ঝামেলা হয়েছে, তারপর আমি তাকে হারামখোর বললাম, বেইমান বললাম, তার পরিবার নিয়ে বাজে মন্তব্য করলাম। এক সময় সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে। তার সাথে আবারো একটেবিলে খেলাম, তার পরিবারের সাথে মিশলাম। তখন আসলে মুখ দেখানোর পরিস্থিতি থাকে না, যদিও সমাধান হয়ে যায়। তবে কথা থেকে যায়। কারন আপনি কারো ১০ টাকার ক্ষতি করলে সে সেটা মেনে নিবে, কিন্তু তাকে যদি আপনি হারামখোর বলেন কিংবা তার ত্রুটিগুলো মানুষের মাঝে প্রকাশ করে দেন, তাহলে এগুলো মনে গেঁথে থাকে এবং এগুলোর জন্য লজ্জিত হতে হয় পরবর্তীতে।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি পরিচিত কয়েকজন ও ফেইসবুকে কিছু ঘটনা অবলোকন করেছি, যেখানে উভয়ের মধ্যে হৃদতার সম্পর্কের এক পর্যায়ে স্বার্থ বিষয়ে তুমুল ঝগড়া সৃষ্টি হলে আইনগত ভাবে সেসব মোকাবেলা করা ছাড়াও বিশ্রি কথার লড়াই উভয়ের জন্যই বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পরবর্তীতে আবারো দুজনের মধ্যে সমস্যা মিটে যাওয়ার পর যখন দুজনে একত্রে মিলেমিশে চলছে বা কাজ করছে, সেটা ভালো ব্যাপার হলেও মাঝখানে তাদের তিক্ততার সময়টুকুর কাঁদা ছুড়াছুড়ির ফলে অন্যদের মাঝে সহজেই ভাবনা তৈরী হয় যে, পুনরায় হৃদতায় জড়ানোর সম্ভাবনা কিংবা প্রয়োজনই যখন থাকে, তখন কেন মাঝখানে দুজনার মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে তিক্ততার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এসব কারনে মানুষের কাছে হাসির খোরাক হতে হয়।
বিবাদের সময়ে নিজেদের সংযত রাখার উত্তম উপায় হলো ক্রোধ ও ক্ষোভ নিবারণ করা, ধৈর্য্য ধরা। ঝামেলা মেটানোর জন্য আইনগত ভাবে কিংবা সামাজিক ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কথার লড়াই পরিহার করা। কথার লড়াই হলেও তা যেন ব্যক্তিগত আক্রমণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। শীঘ্রই সব সমাধান হয়ে যাবে, এই বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধরলে পরিস্থিতি সামলালে সমাধান হবেই। সমাধান না হলেও ব্যক্তিগত আক্রমন, চরিত্র কিংবা যেকোন দুর্বলতায় আঘাত করা পরিহার করা জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৪