একটি উন্নয়নশীল দেশের বানিজ্যিক বা গণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা খুব স্বাভাবিক বিষয়। এটি একের পর এক ঘটতেই থাকবে যদি সেখানকার ব্যবসায়ীরা/বাসিন্দারা সতর্ক না হয়।
বঙ্গবাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলোর সংবাদ পড়তে গিয়ে জেনেছি বঙ্গবাজারের ভবনগুলো বেশ ঝুকিপূর্ণ ছিল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ১০ বার নোটিশ প্রদান করলেও গায়ে মাখেননি ব্যবসায়ীরা, সূত্র-দৈনিক যুগান্তর।
এখন চিন্তা করেন, ১০ বার নোটিশ দেয়ার ঘটনা যদি সত্যিই হয়, তাহলে গতকালের কোটিপতি ব্যবসায়ীরা, আজ নিঃস্ব। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের দায়ও কম নয়।
শুরুতে যে কথাটি দিয়ে শুরু করেছি, সেটি বলার কারন হলো একটি দেশ যখন এগিয়ে যায়, তখন জায়গা সম্পত্তি কিংবা বানিজ্যিক/আবাসিক ভবনের ফ্ল্যাট, দোকানের দাম কোটি কোটি টাকা হয়। এটি সম্ভব হয় তখনই যখন, জরাজীর্ণ ভবনগুলো/বস্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলার মাধ্যমে সেখানে বানিজ্যিক/আবাসিক ভবন তোলা হয়।
দেখুন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে টাকার অভাব নেই। একটি দোকান ১ কোটি টাকা দিয়ে কেনার জন্য বসে আছে অসংখ্য মানুষ। একটি ফ্ল্যাট কিনতে ১/২ কোটি টাকা দিয়ে কেনার মানুষেরও অভাব নেই কিন্তু রাজধানী কিংবা জেলা শহরের ব্যস্ত এলাকাগুলোর জরাজীর্ণ ভবন কিংবা টিনের ঘরগুলোতে গিজিগিজি করে ব্যবসা পরিচালনা করার কারনে জায়গার মালিকরা কিংবা এইসব জায়গাতে উন্নয়ন কাজ চালাতে আগ্রহীরা উৎপেতে বসে থাকে।
বঙ্গবাজারে ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। সে জায়গা জুড়ে যদি ১৫/২০ তলা বানিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন থাকত। তাহলে এটার মূল্য হতো কম করে হলেও ১০/১৫ হাজার কোটি টাকা।
দেশের মানুষের কাছে টাকা আছে। কত % মানুষের কাছে টাকা আছে, কত % মানুষের কাছে টাকা নেই, সেটা ভিন্ন আলাপ। স্বল্প মানুষের কাছে হলেও টাকা বাড়ছে, এটাই সত্যি। তারা বসে আছে দোকান কিনতে, ফ্ল্যাট কিনতে। ডেভলাপাররা বসে আছে ভূমি উন্নয়ন করতে। জায়গার মালিকরা বসে আছে। এককালীন টাকা পাওয়া সহ ফ্ল্যাট/এপার্টমেন্ট, বানিজ্যিক স্পেসের মালিক হয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটে ঢুকাতে। কাজেই যখন একটি মার্কেটকে ঝুকিপূর্ণ উল্লেখ করে ১০ বার নোটিশ দেয়ার পরও ব্যবসায়ীরা/বাসিন্দারা সতর্ক হয় না, তখন উৎপেতে থাকা মানুষেরা সুযোগ নেবেই। সুযোগ যে নিয়েছেই সে বিষয়ে আমি বলছি না, তবে নিতেও তো পারে, অস্বাভাবিক নয় তো। না হয় রমজানে মানুষ যখন সেহেরী খেয়ে নামাজ পড়ে ঘুমোয়, তখনই কেন অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হলো?
সরকারী সংস্থা থেকে ১০ বার নোটিশ দেয়ার পরও তাদের হুশ ফেরেনি। এখন সর্বশান্ত হয়েছে। আমার পর্যবেক্ষণ হলো দেশজুড়ে এমন যত ঝুকিপূর্ণ ভবন, মার্কেট রয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ী কিংবা ভূমির মালিকরা মিলে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিয়ে দূর্ঘটনা ঘটার আগেই সেখান থেকে সরে গিয়ে সেসব ভবন/মার্কেট পুনঃনির্মাণ করতে হবে। একটি উন্নয়নশীল দেশে বস্তি আকারে মার্কেট থাকবে, এটা আমি অন্তত চিন্তা করতে পারছি না। আপনি হিসাব মিলান, তাহলে দেখবেন বস্তি এলাকা/গিজগিজ করা মার্কেট এবং বিশেষ করে বানিজ্যিক ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে যত নিম্নমানের স্থাপনা আছে, সেসবেই কেন বারবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নিম্নমানের স্থাপনা এখন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। সময়ের বাস্তবতা বুঝে সাময়িক ক্ষতি মেনে নিয়ে উন্নয়ন কার্যে নিয়োজিত না হলে এরকম ঘটনা দেশব্যাপী আরো ঘটবে।
কোন চক্রান্ত যদি নাও খুঁজি তাহলেও দেখবেন, এসব গণবসতীপূর্ণ জায়গাগুলোতে সত্যিকারের দূর্ঘটনা ঘটাও স্বাভাবিক। মুহুর্তেই ছাই হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার বিকল্প নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:০৬