বাংলাদেশের বেকারত্ব নিয়ে আমার মতামত আছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের বেকারত্ব দূর করতে হলে “শিক্ষা গ্রহণ মানেই চাকুরীর ব্যবস্থা” এই ধারণা পাল্টাতে হবে
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য জ্ঞানার্জন। আপনি জ্ঞান অর্জন করবেন জানার জন্য। চাকুরীর জন্য নয়। শুধু যেকোন চাকুরী হলেও তো ভিন্ন কথা ছিল, বাংলাদেশে ভুল ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে যে, উচ্চ শিক্ষা মানেই সরকারী চাকুরী। আমি জানি না এই ভুল মানসিকতা ও বিশ্বাসটা কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো। পিতা মাতা তো অবশ্যই, সন্তানেরাও আজকাল এটায় প্রভাবিত। পড়ালেখা করে সরকারী চাকুরী না পেলে জীবন তুচ্ছ্য ও ব্যর্থ মনে করে। এইধরনের মানসিকতার মানুষগুলোকে আমার আসলে অশিক্ষিত মনে হয়।
শিক্ষা মানে জ্ঞানার্জন, চাকুরী নয়। এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব ১ মাসের মধ্যে।
তখন একজন কর্মসক্ষম নাগরিক যদি সরকারী কিংবা বেসরকারী চাকুরী না পায় এবং ভালো ব্যবসা করতে না পারে, তখন তিনি দর্জি (টেইলার্স) হতে পারেন, কম্পিউটার অপারেটর হতে পারেন, তিনি ক্ষুদ্র যেকোন ব্যবসা করতে পারেন, তিনি মোটর গাড়ীর ড্রাইভার হতে পারেন। তিনি উবার-পাঠাও ড্রাইভার হতে পারেন। তিনি পোষাক ডিজাইনার হতে পারেন, রাজমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রী হতে পারেন। কৃষক হতে পারেন। কৃষি খাতে অনেক কাজ আছে, যাতে ভালো করা সম্ভব।
সবচেয়ে বড় কথা ইন্টারনেট/প্রযুক্তির উকৃষ্ঠতার এই যুগে কেউ চাইলেই ফ্রিল্যান্সার হতে পারে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে দারুণ সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের বহু তরুণ তরুনী ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ে ৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার অধিক ইনকাম করছে। আমার ধারণা ও বিশ্বাস দেশের সকল শিক্ষিত বেকাররা যদি চায়, তাহলে তারা ১ মাসের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ে যোগ দিয়ে বেকারত্ব দূর করতে পারে।
কথা হলো পাবলিক, জাতীয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে আমার উল্লেখিত কাজগুলোতে নিয়োজিত হতে গেতে সমাজের কটু কথা কিংবা পরিবার থেকেই কটু কথার শিকার হওয়ার ভয়ে তটস্থ থাকে ছেলেরা। এই মানসিকতার পরিবর্তন হতে হবে। অন্যথায় একজন মাস্টার্স পাশ ছেলে ড্রাইভার, অপারেটর, দর্জি, মিস্ত্রি হওয়া কখনোই সম্ভব না। কেউ কেউ ফ্রিল্যান্সার হলেও সফলতা পাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বহু কটু কথা শুনতে হয়।
দেশে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে, বিপরীতে সরকারী চাকুরীতে ১০% গ্রাজুয়েটও সুযোগ পায় না। ফলে সরকারী চাকুরীর জন্য লেখাপড়া করার ভ্রান্ত মানসিকতা পরিহার করতে হবে। পরিবার ও সমাজকে এ ক্ষেত্রে স্বাধীনচেতা হতে হবে। লেখাপড়া করে, জ্ঞানার্জনের জন্য, তারপর সে যা ইচ্ছা তা করবে। কোন সমস্যা নেই। এই মানসিকতা দেখানো ছাড়া বেকারত্ব দূর করা কখনোই সম্ভব নয়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫১