somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা...... ভালো -বাসা

০৮ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লান্তি ভেংগে এলো শরীরে। অথচ মুক্তির আনন্দে নেচে ওঠার কথা ছিল তার। আজ এমির ডিভোর্স হয়েছে। অবশেষে ক্লান্তিময় সংসার থেকে সে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু তার ভেতর থেকে কান্নার ঝড় ঠেলে বের হয়ে আসতে চাইছে। তার নিজের মা বাবা শুভাকাংখী সবাই ঘিরে ধরেছে তাকে অভিনন্দন জানাতে। সে জোর করে মুখে হাসি রেখে পালাতে চায়লো ভীড় থেকে। বুঝতে পারছে না তার ভেতরে আসলে কি হচ্ছে। সে একটু একাকীত্ব খুজতে লাগলো।

বাড়ীতে এসে নিজের রুমে দরজাটা ভাল করে আটকে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো এমি। ওর ছোট শরীরটা কেপে কেপে উঠছে। এমনটাই তো চেয়েছিল সে। অমলের সংসার থেকে মুক্তি। গত দুই বছরে একদিন শান্তি পায়নি সে সংসারের দায়িত্ব থেকে। নিজের বলতে কিছু ছিলনা তার। সকালে সবার আগে উঠে রান্নাঘরের কাজ সেরে প্রতিদিন অফিসে যেতে হয় তার তাও প্রতিদিন শশুরমশাইকে বলে যেতে হয়। আর প্রতিদিনই ঠিক বের হওয়ার আগে তিনি কিছু না কিছু করে দেওয়ার আব্দার করে এমি কে দেরী করিয়ে দেন। প্রথম প্রথম এমি ভাবতো এটা হয়তো কো-ইন্সিডেন্স কিন্তু ঘটনা যখন প্রতিদিন এমন হতে থাকলো একদিন এমি বলেই দিল, বাবা আপনার যা দরকার থাকে আগে বলে দেবেন নাহলে আমার অফিসে যেতে দেরী হয়ে যায়। শশুরমশাই এর উত্তর যেন মুখে লেগে ছিল এতদিন। তিনি আফসোসের সুরে বললেন, বৌ চাকরী করলে এমনই হ্য়।সংসারের কাজে যত অনীহা । আমি তো বলি চাকরী ছেড়ে দিলে কি হয়?

এমি অনেক কষ্টে কান্না ঠেলে সেদিন অফিস গেল। চাকরীটা তার যতটুকু না প্রয়োজন তার থেকে বেশি তার আত্মসম্মানের। প্রেম করে বিয়ে ছিল তার। বিয়ের আগে থেকেই চাকরি করছে সে। এ নিয়ে কখনো আপত্তি করেনি অমল। আপত্তিটা এইভাবে আসবে কখনো ভাবতেও পারেনি এমি।

এমনি শশুরমশাই তার খুব আহ্লাদী মানুষ। বিয়ের আগে থেকেই খুব আপন করে নিয়েছিলেন এমিকে। বিয়ের সময় এমির বাবাকে সবার সামনে বলেছিলেন, বৌ নিয়ে যাচ্ছিনা আমার মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি , কোন চিন্তা করবেন না বিয়াই মশাই।আমার মেয়ে যেমন তাকেও তেমনি করে রাখবো। আর শাশুড়ি তো নরম মানুষ, বেশি কথাও বলেন না। এমির বাড়ির সবাই খুব খুশি ছিলো, সবঐ বলছিল, একেতো শাশুড়ি মাটির মানুষ আর শশুর বাবার মত। আর পছন্দ করা বর, এমি ভাগ্য ভাল বই কি! এমি মনে মনে খুশিতে ডুবে ছিল বিয়ের দিন। সবকিছু তার স্বপ্নের মত মনে হচ্ছিল। অমলের ভালবাসার উপর তার একটুও সন্দেহ ছিল না। এমি যে রকম জেদি মেয়ে কারও কঠা শোনার পাত্র নয় সে। অমল তার ছেলেমানুষিগুলো এতো যত্ন করে এমি মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করেই অভিমান, আহ্লাদ করতো। নাহ্ , অমল তাকে কখনো নিরাশ করেনি।

কিন্তু বিয়ের পর এমি সংসারের দায় নিয়ে নিয়েছিল একদম অজান্তে । কখন যে সব তার উপর চলে আসে সে নিজেই টের পায়নি। শশুরমশাই বিয়ের পর থেকেই প্রতিদিন কাউকে না কাউকে ডেকে এনে এমিকে দিয়ে মেহমানদারি করাতে লাগলেন। সবার সামনে খুব প্রশংসা করতেন এমির। এমিও কখনো আপত্তি করেনি এসবের। কিন্তু বিয়ের দুই তিন মাসেও অতিথি আসা শেষ হয়না। এদিকে প্রতিদিন অফিস করে এসে আবার রান্না করে মেহমানদের সাথে গল্প করে দেরিতে ঘুমিয়ে আবার ভোর সকালে একই রুটিনে চলতে চলতে আমি এখন ক্লান্ত। অমলকে বললে সে বারবার এড়িয়ে চলে কথাগুলো। অথবা বলে একটু মানিয়ে চল , বাবা বলে কথা। টাকে তো কিছু বলতে পারি না।

এমি কারও কাছে আর কষ্ট ভাগাভাগি করতে পারে না। কাউকে কিছু বললেই উল্টো শুনতে হয়, কপাল গুণে পেয়েছিস এমন শশুরবাড়ি। শশুর তো তোকে মেয়ের মত রাখে ।সময় নে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এরপর থেকে কিছুই কমেনি , বরং বেড়েছে শশুরের আব্দার। রান্নার সব ঠিক থাকলেও তিনি বলে ওঠেন ঝাল কম, লবণ বেশি অথবা মাংস সেদ্ধ হয়নি। এমনকি এমি বাথরুমের ঢুকলেই তিনি পায়চারি করতে শুরু করেন যে তার প্রেসার বেড়ে যায়। এমি অমল কে বলে হয়তো কখনো অমল বাবার সাথে কথা বলতে চলে যেত কিন্তু আসার পরই বলতো বাবা যা বলেন তাই করতে হবে। এমি আর কি করবে যতটুকু পারা যায় করার চেষ্টা করে। কিন্তু ধীরে ধীরে অমলের সাথে দূরত্ব তার বাড়তে থাকে। বদ্ধ ঘরে প্রায় কথা কাটাকাটি বাড়তে থাকে।ডাইনিং টেবিলে কথা বলা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। শশুরমশাই তা খেয়াল করে কিছু হয়নি ভাব করে স্বামী-স্ত্রী বিষয়ে নানা উপদেশ দিতে থাকেন। অমল চুপ থাকে কিন্তু এমি আর চুপ থাকতে পারে না। সে ডাইনিংয়ে সবার সামনে অমলকে বলে সে ডিভোর্স চায়। এই বলে এমি তখনি বাসা ছেড়ে বাবার বাড়ি গিয়ে ওঠে।
নাহ্ । সে যা ভেবেছিল তার কিছুই হয়নি। অমল আসেনি তাকে মানাতে। বরং তার শশুর একদিন তার মা কে ফোন করে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিল কি কারনে তাদের ডিভোর্সটা জরুরী ছিল এবং এমি কিভাবে তার শান্ত নির্ভেজাল ছেলেটার জীবন অশান্ত করে তুলেছিল। নাহ্ , অমল কোন প্রতিবাদ করেনি সে অভিযোগ গুলোর। বরং কোর্টে স্বীকার করে নিয়েছিল সেগুলে অক্ষরে অক্ষরে কত সত্য।

আজ এমন মুক্তির দিনেও এমি ভাবে , সে কাকে ভালবেসেছিল তিন বছর ধরে? সে কি এ অমলই ছিল? তাদের দুজনের ভালবাসায় তবে কেন স্বপ্নের ভাল বাসা একটি গড়া হলো না ?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:২৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×