somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুল-ভাল গল্প

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব ধীরে ধীরে ব্যাগ গুছাচ্ছে ঈষা। অতুল বিনা কারনে ব্যস্ততা দেখানোর চেষ্টা করছে। একবার কাপড় গুলো ভাজ করে আবার অগোছালো করে খাটের উপর ছড়িয়ে দেয়। আবার মোবাইল নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে ভাব করে আড়চোখে ঈষাকে দেখে। বুঝার চেষ্টা করে কি জানি মেয়েটার মনে কি চলছে।
ঈষার মনে তখন নিস্তব্দতার বুক চিরে বের হও্য়া শূণ্যতা। তার তখন শুধু খাটের কোনায় বসে অতুলের আঙুলের ডগাগুলো গুনতে ইচ্ছে করছে; অকারণেই হোক। তবু অতুল যদি কিছুক্ষণ সময় তার পাশে থাকতো। সেই সময়টা বড় অল্প তাদের মাঝখানে। অথচ দুজনই অযত্নে কেটে যেতে দিচ্ছে তাকে। আসলে কোন মান অভিমান নয়, ঈষা অকারনে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
অনেকদিনের বন্ধুত্ব তাদের, প্রায় ছয় বছর। ঈষা পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে স্বেচ্ছাকর্মী হিসেবে কাজ করতো। পথশিশুদের জন্য আয়োজিত এক চ্যরিটি অনুষ্ঠানে অতুল তার দল কে নিয়ে এসেছিল গান করতে। ঈষা তখন স্টেজ ব্যবস্থাপনা গুলো দেখছিল হঠাৎ অতুল তার পথ আটকে রূঢ় ভাবে বলে, কি ব্যবস্থাপনা করছেন আপনারা ? সস্তা সাউন্ড সিস্টেম এনে অনুষ্ঠানের নামে ব্যবসা করছেন। আমাদের পারিশ্রমিক গুলো ঠিকমত পাবো তো! ঈষা ছেলেটা কে একটু আগা গোড়া দেখে নিল। ফাটা জিন্স , কালো টি-শার্ট হাতে সেকেলে একটা ঘড়ি পায়ে ব্রান্ডের জুতা যা মোটেও পোশাকের সাথে খাপ খাচ্ছে না। যথা সম্ভব শান্ত হয়ে সে উত্তর দিল, এটা একটা চ্যরিটি শো, বিজনেস কোম্পানির এন্টারটেইনমেন্ট প্রোগ্রাম নয়। যদি ব্যবস্থাপনা ভালো না লাগে চলে যেতে পারেন। আপনাদের যে টাকা গুলো দিতে হত সেটা আমরা পথশিশুদের দিতে পারবো। আর বের হয়ে যাওয়ার রাস্তা ডানে একটু এগিয়ে বামে পাচ কদম হাটলে দেখতে পাবেন।
অতুলরা সেদিন পারফর্ম করেছিল, বলা যায় তাদের জন্যই অনেকটা প্রোগ্রামটা সফল হয়। শেষে তাদের পারিশ্রমিক টাও চ্যারিটি তে উৎসর্গ করে যায়। তবে ঈষার সাথে আনুষ্ঠানিক পরিচয় তখনো ঘটেনি। এরপর দ্বিতীয়বার দেখা ক্যাম্পাসে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে । ঈষা রিকশা থেকে নামার পর দেখে অতুল সামনে দাড়িয়ে। আজ বেশ ভালোই লাগছে দেখতে। সে কোন রকম ভূমিকা ছাড়া ঈষাকে বললো, তোমার ফোন নাম্বার টা দাও তো দেখি । ঈষা প্রথমে অপ্রস্তুত হয়ে সামলে নিয়ে বলে, আমার সাথে সাহস করে একটা জায়গায় যেতে হবে তাহলে দিতে পারি। অতুল শার্টের হাত গুটাতে গুটাতে বলে মারামারি করতে হবে নাকি। ঈষা হেসে বলে, নাহ্ ব্লাড ক্যাম্পে ব্লাড দিতে।
দুজন ব্লাড ক্যাম্পে পৌছেছিল ঠিকই কিন্তু ডোনেট করার আগমুহূর্তে অতুল সুই দেখে অচেতন হয়ে যাওয়ায় আর সম্ভব হয়নি। তবে ঈষার নাম্বার পেয়েছিল সেদিন।
এরপর যখন তখন যেখানে সেখানে আড্ডায় মেতে থাকতো দুজন। অতুল হল অলস প্রকৃতির। কোথাও থিতু হয়ে বসলে আর উঠতে চায় না। আর ঈষা তড়িৎকর্মা। কিছু একটা মাথায় ঢুকলে সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অস্থির হয়ে থাকে ।অতুলের গান আর ঈষার কাজের পেছনে ছুটে ছুটে যাওয়া। তবু তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোন খাদ নেই। সময়ের স্রোতে ভেসে ঈষা যে কখন অতুলের উপর অধিকার জমাতে শুরু করেছিল নিজেও বুঝতে পারে নি। অধিকার আস্তে আস্তে নির্ভরতার দিকে পরিবর্তিত হতে থাকে। যদিও বা সে জানতো অতুল কখনো প্রেমের কথা বলে না আবার সে তুললে মানাও করে না । তাই তার মনে বিশ্বাস ছিল আর যায় হোক অতুল তাকে কখনো ছেড়ে যাবে না। কিন্তু একদিন অতুল মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়ে বললো , বন্ধু এডব্যসটন যাচ্ছি বিরমিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপ পেয়েছি। ৩ বছরের কোর্স এরপর ওখানে আবার পিএইচডি -র জন্য এপ্লাই করতে পারবো। লাইফটা সেট হয়ে গেল। একবার যেতে পারলে আর ফিরার কথা ভাববো না। শুধু গান আমি আমি আর গান। আহ :
ঈষা টের পেল তার ভেতর টা দুমরে মুচরে যাচ্ছে । অতুলের স্বপ্নে বাস্তবে কোথাও তার স্থান নেই। সে তবু নিজেকে সামলে নিল। অতুলের সাথে গলা মিলিয়ে গায়তে শুরু করল।

অতুল ৩ বছর পর এসেছে দেশে। সে ঠিক করেছে দেশেই থাকবে। কিন্তু ঈষা চলে যাচ্ছে এবার সুইডেন আজীবনের জন্য। তাদের সম্পর্কে কোন উত্থান- পতন ঘটেনি এখনো । যেমন ছিল তেমনই রয়ে গেছে। একদিন আড্ডার মাঝখানে ঈষা বলে , জানিস আমার বিয়ে করতে মন চাই না। কিন্তু আমার নিজের একটা বাচ্চা থাকুক আমার খুব ইচ্ছে। অতুল হো হো করে হাসে। বলে, কেন পারবি না । স্পার্ম ডোনার খোজ মনের আশা পূর্ণ হবে বৎস।ঈষা অতুলের হাত ধরে বলে তুই হবি? অতুল কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ঈষার দিকে। তুই কি আমাকে ভালোবাসিস ঈষা? ঈষা মাথা নিচু করে থাকে। অতুল বলে আমিও বাসি রে । কিন্তু ভয় হয় নতুন সম্পর্ককে স্পেস দিতে যদি বন্ধুত্ব টা হারিয়ে যায়। এরপর আর কেউ কথা বলে না।

আজ ঈষার যাওয়ার দিন । অতুল ইচ্ছা করে কেন যেন দূরত্ব বজায় রাখছে। সে নিজেও জানে না। ঈষা রেডি হলে তারা লিফট দিয়ে নিচে নেমে আসলো । গেট পার হতে হতে অতুল হঠাৎ বলতে শুরু করল, অনেক ভেবেছি দেখ, আমি তোকে ছাড়া আর কারো সাথে এত ওপেন বুক হতে পারি না। কিন্তু তুই ও তো চলে যাচ্ছিস এখন। চা্য়লেও তো আমরা ইচ্ছেমত কাছাকাছি থাকতে পারবোনা। তারপরও আমি ভেবে দেখলাম আমি তোকে নিয়েই থাকবো। যতদিন না তুই অন্য কাউকে খুজে পাস। ঈষা কথাগুলো নিরবে শুনলো। কিছু বললো না। কারন এই আত্মভোলা মানুষটাকে তার চেয়ে আর কে বেশি ভাল চিনে। অতুল কখনোই তাকে নিয়ে ভেবে দিন গুনবে না। কারন তার জীবনে গান টাই প্রথম ও শেষ ভালোবাসা।তার চেয়ে বন্ধুত্বটা থাকুক অক্ষত , অমলিন।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৫:১০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×