আমাদের চাকমা সংস্কৃতি পুরোপুরি সামাজিক যোগাযোগ ও সম্পর্কের ভিত্তির উপর দাড়িয়ে আছে... সমাজে একে অপরের খেয়াল রাখা, বিপদে আপদে পাশে থাকা এইসব রীতি নীতির মাধ্যমে বহু যুগ থেকে গড়ে উঠেছে বালা, মালেইয়ে, ভাতমজার মত সম্প্রীতির সংস্কৃতি.. যখন কোন মেয়ে গর্ভবতী হয় তখন তার বিশেষ খেয়াল রাখার প্রয়োজন হয় পরবর্তী প্রজন্মের সুস্থ আগমনের জন্য.. এ সময় মেয়েদের নানা হরমোনাল পরিবর্তন , দূর্বলতা, খাবারে অরুচি, মানসিক চাপ আরো নানা উপসর্গ দেখা দেয়... মা পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি... চাকমা সমাজে পরিবারের পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশি , বন্ধু , আত্মীয় মহিলারা গর্ভবতী মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করে নতুন শিশুটির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন.. এই ধারাবাহিকতা চলে সন্তান জন্মের পরবর্তী ১-২ বছর পর্যন্ত...এই রীতির মাধ্যমে বোঝা যায় চাকমা সমাজে সন্তান ব্যক্তিগত হয় না... সন্তান তথা পরবর্তী প্রজন্মের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত.. মায়েদের জন্য খাবার সরবরাহের এই রীতিকে চাকমা ভাষায় বলে 'ভাত মজা/ ভাত মোজা...
এখন আমার কথা বলি... কন্সিভ করার পর থেকেই আমার আত্মীয়, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা কখনো ভাত মোজা , কখনো ফলমূল , টকঝাল মিষ্টি আচার ও নানা কিছু পাঠাচ্ছেন...আমি এই সময়টা আসলে খুব উপভোগ করছি যে আমাদের সন্তানকে সবাই কত স্নেহ করছেন এখন থেকেই.. আমারও মাঝে মাঝে অরুচি হয়..কিছু খেতে মন চায় না.. তখন হাত বদলের এই ভাতমোজা গুলো একেবারে অমৃত লাগে.. রুচি ফিরে আসে.. সেই সাথে এ সময়ে কি খাওয়া উচিৎ কি অনুচিত এই পরামর্শগুলো আমার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করছে...
আমরা মেয়েরা শুরু থেকে নিরবে আমাদের সংস্কৃতি গুলো আধুনিক সমাজেও বয়ে বেড়াচ্ছি..পোশাক পরিধান, সামাজিক রীতি যত বেচে আছে আমাদের মেয়েদের কল্যাণে আছে.. হইতো পুরনো দিনের মত এতো চোখে পড়ে না, কিন্তু ভাতমোজা যে এখনো মেয়ে সমাজে বেচে আছে তার প্রমাণ আমরা নিজেরাই
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:৪৯