এক ছিলো এক কুমড়ো লতা। ছোট্ট একটা আধ ভাঙা আধচালা কুঁড়ে ঘরের পাশে তার জন্ম। যত দিন যায়, বেচারা নিজের ভেতর ততই কুকড়ে যায়। কেউ আগ বাড়িয়ে হাত না দিলে যে সমুহ বিপদ। বেচারা এক কুমড়ো লতা, আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্যই তার জন্ম।
এক আধ ভাঙা আধচালা কুঁড়ে ঘরের ঘটনা দেখে বড় মায়া হয়। সে বললো, “নাও আমায় ধরো, বেঁচে থাকো, বড় হও, দুনিয়া দেখো”। কুমড়ো লতা তাই করে। ধীরে ধীরে বড় হয়। দেয়াল বেয়ে, কড়ি কাঠ বেয়ে এক সময় ভাঙা চালেও উঠে যায়। তারপর সে দেখে আকাশ। আকাশ দেখে তো সে হতবাক। এত্ত বড়। তারমাঝে আবার সাদা সাদা কি যেন। “এই কুঁড়ে ঐ সাদা সাদা কি সব ভেসে বেড়াচ্ছে ঐগুলা কি?”
আধচালা কুঁড়ে মুচকি হেসে বলে, “অইগুলো মেঘ”
কুমড়ো লতার অবাক প্রশ্ন, “আমি কি কখনো মেঘ হতে পারবো?”
বোকা কুমড়ো লতার বোকা প্রশ্নে কুঁড়ে ঘরের ভীষণ হাসি পায়। কিন্তু কুমড়ো লতার মনে কষ্ট দিতে তার ভালো লাগেনা। সেই দিনের এক পুঁচকে কুমড়ো লতা। সে বোকামি করবেনা তো কি তার মত বুড়ো ভাম করবে। সে প্রশয়ের হাসি হাসে, “বলা তো মুশকিল, তবে চাইতে তো দোষ নাই, মেঘ হওয়াই যায়। কি আর এমন আহামরি, একটু ওজন টা কমাতে হবে, একটু ফুরফুরা হতে হবে। আর শেষে এই বুড়ো কুঁড়ের কাঁধ ছাড়তে হবে”।
কুমড়ো লতা হেসেই খুন। কিন্তু মেঘ যে চোখ থেকে সরেনা। দিন যায়, রাত আসে। পূর্ণিমা যায়, আমাবস্যা আসে। কিন্তু মেঘ হওয়ার স্বাদ কুমড়োলতার মাথা থেকে সরেনা। তার খুব সাধ মেঘ হবার। নীল আকাশের বুকটা এফোড় ওফোঁড় করে দেয়ার। এই ধাড়ি কুঁড়ের কাধে চেপে আর চলছেনা। এভাবে আরো অনেক দিন গেলো। আধ চালা কুঁড়ে ঘরের আরো আধখান খসে পড়লো। কড়িকাঠগুলো খেলো ঘুণে। কুঁড়ে ঘর ক্ষীণস্বরে ডাকে, “ও কুমি, ও কুমি”।
কুমড়ো লতার অত শত শোনার টাইম আছে। সে তো মেঘ হতে বিভোর। একদিন এলো ঝড়, ভীষণ ঝড়। বোকা কুমড়ো লতা ভাবল এইতো সুযোগ, মেঘের মত পাখনা মেলে ওড়ার। আকাশ যত কালো হয়, বাতাস যত ধারালো হয়, কুমড়ো লতার আহ্লাদ ততো বাড়ে। সে বলে, দেখো, মেঘই এলো আমার কাছে।আমার তো যাওয়াই লাগ্লোনা। এ সব সম্ভবের দুনিয়া। শুধু চাইতে জানতে হয়। ও কুঁড়ে দেখলে, মেঘের কত কাছাকাছি। তুমি তো গোয়ারের মত আজীবন মাটি কামড়েই রইলে।
আধা আধ চালা কুঁড়ে, তখন সত্যিই মাটি কামড়ে ছিলো। জীবনে বহু ঝড় সে পার করেছে। ঝড় ঝাপ্টার জাত তার ভালই চেনা। এ ঝড়ের সাথে পারবেনা সে। এ সর্বনাশী ঝড়,এ সর্বগ্রাসী ঝড়। তারপরেও নিজের সবটুকু দিয়ে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে। সেদিনের এক বোকা কুমড়ো লতা, সে চলে গেলে, কাকে আঁকড়ে ধরে থাকবে। আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্যই তার জন্ম। সে গেলে যাক, কিন্তু কুমড়ো লতা বেঁচে থাক। বেচারার বড়ো মেঘ হওয়ার শখ।
তারপর সাই সাই বাতাস, ভীষণ ঝড়। কড়াত কড়াত বাজ। ঝড় ফুরালে দেখা গেলো, কোন কুঁড়ে ঘর নেই। কোন কুমড়ো লতাও নেই। নিচে বিরান ভুমি আর উপরে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে টুকরা টুকরা মেঘ। যেই শুন্য থেকে শুরু, সেই শুন্যতেই শেষ। মাঝের সময় টুকু কেউ ভালোবাসা নিয়ে বাঁচে, কেউ ভালবাসা দিয়ে বাঁচে। কেউ চারপাশের ভালবাসাকে না বুঝে, না খুঁজে দূরের ভালবাসার লোভে বাঁচে। জীবন তো এমনই।
আলোচিত ব্লগ
টের পেলে
টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ
টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য
ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার
(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন