somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হস্তান্তর

২৭ শে অক্টোবর, ২০০৬ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তড়িৎপ্রকৌশলের ছাত্র হিসাবে আমাদের ল্যাবরেটরিতে একটি মামুলি পরীক্ষা করতে হয়েছিলো। সহজ পরিভাষায় একে বলে সিনক্রোনাইজেশন। দুটি জেনারেটর যখন একটি কমন-বাসে পাওয়ার ডেলিভার করে, তখন তাদের নিজেদের মধ্যে যথেষ্ঠ মিল থাকতে হয়। একই ভোল্টেজ, একই ফ্রিকোয়েন্সি, একই ফেজ সিকোয়েন্স, একই ওয়েভফর্ম ... শুধু পাওয়ারের পরিমাণ কম বেশি হলে সমস্যা নেই। ভোল্টেজ বা ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করা অতটা সহজ নয়, পুরনো সিনক্রোনাইজিং প্যানেল হলে বেশ সময় লাগে। আর একেবারেই নিখুঁত সিনক্রোনাইজিং-ও সবসময় হয় না, কিছুটা ঊনিশ-বিশ হয়ে যায়। তবে জেনারেটরের গড়ন আর কাজের ধরনটা এমন, যে সে ঐ গড়বড়টাকে নিজেই সামলে নেয়। তবুও সেই গড়বড়টা নজরে পড়ার মতো। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে পুঁচকে একটা অলটারনেটর যখন সাবস্টেশনের সাথে সিনক্রোনাইজ করে, পুরো সিনক্রোনাইজিং প্যানেলটা একটা শক্ত ঝাঁকি খেয়ে ঝনঝন করে ওঠে।

কোন কিছু হস্তান্তর হওয়ার সময় হাতে একটু ঝাঁকি দেয়াই দস্তুর। সে ঝাঁকি বন্ধুত্বের নিদর্শন। তাই হয়তো অলটারনেটরের ঐ ঝাঁকিটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাইনি। কিন্তু আজ, পাঁচ বছর পর যখন চারদলীয় জোটের ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে এলো, ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে প্রত্যাশিত নিরপেক্ষ কোন কতর্ৃপক্ষের কাছে, তখন সারা দেশ সংঘাতের ঝাঁকি খেয়ে কেঁপে উঠছে। দু'দিন আগেই বিএনপির একটা অংশ বেরিয়ে এসে নতুন দল গঠন করেছে, পুরনো দ্রোহী বদরুদ্দোজার বিকল্পধারার সাথে কর্ণেল অলি আহমদের সংকল্পধারার অ্যামালগামে জন্ম নিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। বিএনপি জানিয়েছে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, কিন্তু গঠনতন্ত্রে কী লেখা আছে সেটা আমরা জানি না, খবরে দেখলাম পদত্যাগী নেতাদের বাড়িগাড়ি ভাংচুর হয়েছে। আজ আবার সারা দেশ জুড়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বিএনপির বিভিন্ন অফিসে হামলা করেছে, অগি্নসংযোগ করেছে বলে বেসরকারী টিভি খবরে প্রকাশ হয়েছে।

হস্তান্তরজনিত এ বিদঘুটে ঝাঁকি আমাদের কাম্য নয়। সম্ভবত তা কাম্য নয় জোটের নেতাদের কাছেও। তাঁরা অনেকেই এখন দেশে নেই। মাননীয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর স্বভাবসুলভ পরিপাটি বাচনভঙ্গিতে আজ দেশবাসীর সামনে অনেক কৃত উন্নয়নের বর্ণনা দিয়েছেন, আবার নির্বাচিত হলে আরো উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছেন, কিন্তু যদি এত উন্নয়ন ঘটেই থাকবে, তাহলে কেন জোটের বহু নেতা আজ দেশ ছেড়ে বিবাগী? উন্নয়নের দাবীদাররা দেশে থাকতে ভয় পেলেন কেন?

টিভির খবরে শুনলাম, শনির আখড়ার সাবেক এমপি সালাহউদ্দিনের পেট্রল পাম্পে আর সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে, আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে জনতা তাড়া করে খালে নিয়ে ফেলেছে, এরকম আরো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পাঁচবছর আগে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে যায়, তখনও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন এমপি রাতের অন্ধকারে সীমান্ত টপকে পালিয়েছিলেন। জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতার যাদুদন্ডটি হাত থেকে নামিয়েই তস্করের মতো পলায়ন করবেন, রাজনীতিতে তাঁদের এই পরিণতি আমরা চাই না। আমরা চাই, রাজনীতিতে শিষ্টতা ফিরে আসুক। জনপ্রতিনিধিরা এমন ভাবেই জনপ্রতিনিধিদের সেবা করুন, যাতে এ দেশের বেচারা মানুষগুলি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে বলে, আপনি এ পাঁচ বছর চমৎকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন আমাদের, আশা করি ভবিষ্যতে আপনার প্রতিদ্্বন্দ্বীর সাথে এ বিষয়ে ভালো করা নিয়ে আপনার জোর প্রতিযোগিতা হবে।

রাজনীতির দূষণ আমাদের দিয়ে এখন সুশীল প্রার্থীর কথা বলায়। অর্থাৎ, কে আমাদের বেশি ভালো করবে, তা আর বিবেচ্য নয়, কে কম ক্ষতি করবে, সেটাই আসল ব্যাপার। এবং এই পরিণতির জন্য রাজনীতিবিদদের একক কৃতিত্ব দেয়া যায়।

আমি কোন রাজনৈতিক দলের কমর্ী নই। সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে আমিও রাজনীতিবিদদের বিভিন্ন কর্মসূচীতে প্রতিক্রিয়া জানানো পাবলিক। কিন্তু আজ রাজনীতির কুরুপান্ডবদের কাছে আমার সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখুন। এমন তস্করসুলভ চেহারা যাতে দেখতে না হয়, যাকে লোকে আঘাত করার জন্য তাড়া করে। ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন আপনারা যেন দেশে, আপনার নির্বাচনী এলাকায় নির্ভয়ে কয়েক পা হেঁটে বাড়িতে ফিরে এসে স্ত্রীপুত্রকন্যার সাথে নিশ্চিন্তে রাতের ঘুমটুক দিতে পারেন। আপনাদের নিজেদের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার ফল যদি হয় ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন অনুপস্থিত থাকা, বা অব্যবহিত পরে গা ঢাকা দেয়া, তাহলে সে ক্ষমতার কী মূল্য থাকে? আর যদি চক্রাকারে এ চর্চা চলতে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ আর কতদিন সহ্য করবে?

খবরে আরো জানা গেলো, কে এম হাসান অসুস্থ, তিনি আগামীকাল শপথ নেবেন না। তিনি শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, এক সময় আমাদের দেশে বিচারবিভাগের সবের্াচ্চ আসনে ছিলেন তিনি, তাঁর কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক থাকাই স্বাভাবিক। তাঁর সাথে আমাদের এই বিতর্কেরও আরোগ্য কামনা করি আমি।

বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসুক। নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমিয়ে ভোরে আবার জেগে উঠুক। এই সংঘাতের সংস্কৃতি বন্ধের দায়িত্ব আমাদের সবার।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

NVR (No Visa Required) এর জন্য জেনে রাখা দরকার

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৯
×