রুবেলের সাথে আমার পরিচয় জাহাঙ্গির ভাইয়ের চায়ের দোকানে- আমরা পাশাপাশি বসে চা-সিগারেট টানতাম- এবং তখন আমাদের ভেতরে বামপন্থি আবহ জমজমাট। আমরা যখন সায়েন্স ক্যাফেতে বসে ব্র ীজ কিংবা টুয়েন্টি নাইন নিয়ে ব্যাস্ত, তখন সোহেল আর সাগর নব্য বামপন্থার বানী শিখাতো সবাইকে।
রুবেল তখনও ছিলো- আমরা বেহুদা তর্ক করতাম- অনেক কিছু নিয়েই- আফগানিস্তানে তালেবান রাজত্ব শুরু হলে সেখানের সামাজিক অবস্থার কি রকম পরিবর্তন হতে পারে এই নিয়ে হাইপোথেটিক্যাল আলোচনাও করা হতো- আর এর সাথে ছিলো কবিতার আলোচনা- আমাদের কয়েক বন্ধু কবিতাও লিখতো- একজন আবৃতি করতে পারতো- এসবের সাথে বামপন্থার কোনো বিরোধ ছিলো না- যেহেতু ক্লাশ করার কোনো দায় ছিলো না- শুধুমাত্র এই একটা কারনে অন্য যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দ করেছিলাম, যেনো জীবনে অন্তত ক্লাশের আশেপাশে নিজের ইচ্ছায় গতায়ত করতে পারি।
এইসব সময়ের মাঝেই জাহাঙ্গির নগরে কোনোএক আন্দোলনের ডাক আসলো- আমরাও বাসে চেপে আন্দোলনে চলে গেলাম- এমনই সময়ে কিংবা এর খানিক আগে পরে যৌন নিপিড়ন বিরোধি আন্দোলন দানা বাঁধলো। অবশ্য আমাদের ঘনিষ্ট বন্ধু রকিব জড়িত ছিলো বলেই রুবেলের সাথে ঠিকমতো পরিচয় হলো। ও কিংবা ওরা তখন প্রপদ করছে- প্রগতির পরিব্রাজক দল।শব্দটারও একটা আলাদা ভাব চককর আছে।
সেই আন্দোলনের সুবাদে আমিও দেখলাম কিভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলেরা সংগ্রামের বিরোধি পক্ষ হতে পারে- যদিও বামপন্থার রাজনৈতিক দলগুলো এই আন্দোলনকে সমর্থন করতে পারতো তবে কোনো এক গেঁড়ো ছোলো, তাদের ধারনা ছিলো এই আন্দোলনকে পরিনতি দিতে পারে কোনো সংগঠিত রাজনৈতিক শক্তি- ছাত্র ইউনিয়ন সব সময়ই ভদ্্র ছেলেদের দল, তারা বিচ্ছিন্ন ভাবে এই আন্দোলনে সাধারন ছাত্রদের ব্যানারে সংগঠিত ছিলো তবে সমস্যা বাঁধালো ছাত্রফ্রন্ট। আমার বামপন্থি বন্ধুরা যেহেতু ছাত্রফ্রন্ট ছিলো তাই তারা কোনো ভাবেই সাধারন ছাত্রের ব্যানারে আন্দোলন বা মিছিল করতে রাজি না- আমার গায়ে তেমন ভাবে রাজনৈতিক দলের তকমা লাগে নাই বলেই আমি সহজেই মিছিলে কয়েক পা হাঁটতে পেরেছি- এই আন্দোলনের সাথে কিংবা একটা পর্যায়ে সাফল্য আসার পরও রুবেলের সাথে যোগাযোগ ছিলো। যোগাযোগটা তেমন নিয়মিত ছিলো না- রুবেল নিজেই খুব ব্যাস্ত- ও কোন সংগঠনের অংশ আমি জানি না- তবে আমরা বিভিন্ন আলাদা জায়গায় আড্ডা দিতাম বলেই হয়তো জাহাঙ্গির ভাইয়ের দোকানের পাশের সিঁড়িতে দেখা না হলে কথা হতো না।
মাঝে অনেক দিন কেটে গেছে- সেদিন শাহবাগে দেখা হলো রুবেলের সাথে- অনেক রকম ছোটোখাটো কথা হলো- এবং যদিও ইচ্ছা ছিলো না তবে দীর্ঘ দিনের পরিচয়ে অন্যায্য হলেও বললাম কি রে কি করিস তুই? কোনো বাঁধা চাকরি না ব্যাবসা না সার্বক্ষনিক রাজনীতি।
বললো আহমেদ ছফার স্কুলটার দায়িত্ব নিছি। আহমেদ ছফা নব্বই দশকের মাঝামাঝি সোহওয়ার্দির টোকাই কাম ছিন্নমূল কাম পথকলি কাম যেকোনো এন জি ও ভিত্তিক শব্দাবলী দিয়ে নির্দিষ্ট শিশুদের জন্য একটা স্কুল খুলেছিলেন- বাংলাদেশের অবস্থা বিচারে আহমেদ ছফার মৃতু্যর পর এই স্কুল টিকবে এমন ধারনা আমার ছিলো না- বললাম তোর সাহস আছে- এমন অকালে তুই যা করতেছিস সেটা অবশ্যই শ্রদ্ধা যোগ্য- তবে স্কুলটা কোথায় -
সে স্কুলটাকে সামান্য বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যেতে পেরেচে- প্রাথমিক শিক্ষার পর সেটা এখন জুনিয়র হাই স্কুল হয়েছে- এখন সেখানে 8ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া হয়।
এর মাঝে সে জানালো সে বিয়ে করেছে- বললাম বৌ কই? বললো পাশেই কোথাও আছে- ভালো লাগলো আমার।
বললাম রান্না করিস বাসায় না কি হোটেলের খাওয়ার খাচ্ছিস।
উত্তরটা মজার লাগলো। বললো যেদিন পকেটে টাকা থাকে হোটেলের খাওয়ার কেনার সেদিন হোটেল থেকে খাওয়ার কিনি নাতো সামনের দোকান থেকে একটু চাল একটু ডিম একটু ডাল কিনে রান্না করি।
যাই হোক আসলে অসস্তিকর প্রশ্নটা করতে না চাইলেও করে ফেললাম। স্কুলটা কোথায় নিয়ে গেছিস- ফান্ডিং কিভাবে আসে?
জনসেবা কিংবা আদর্শিক কোনো কাজ এখন শুধু আন্তরিকতায় সম্ভব হয় না। সম্পন্নও হয় না- ট্যাকের জোড় লাগে। বললো তেমন কোনো ফিক্স ফান্ডিং নেই- যখন যেখানে যেভাবে ময়ানেজ করা যায় সেভাবেই ম্যানেজ করে জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছি। ইচ্ছা আছে এটাকে আদর্শ বিদ্যালয় বানাবো।
তার একটা শিক্ষা ব্যাবস্থার আদর্শ সামনে আছে- আমরা শিক্ষা আন্দোলনের মিছিলে পাশাপাশি হেঁটেছি- তবে বিস্তারিত জানতে পারি নি- আমাদের ঘড়ির টিকটিক জানান দিচ্ছিলো আমাদের যার যার গন্তব্যে ফিরে যেতে হবে- তার স্ত্র ীর সাথে পরিচিত হয়েই আমাকে বাসায় ছুটতে হলো- বলা হলো না
সালাম কমরেড- আমাদের কারোই এমন আদর্শের সাথে জীবন যাপনের সাহস হলো না। আমরা সবাই যুদ্ধ থেকে সমাজ বদলের চেষ্টা থেকে পিছু সরে এখন কর্পোরেটের সেবায় মগ্ন, তোর মতো সাহসী কিছু মানুষ আমাদের মানসিক সান্তনা কিংবা শুভবোধের রূপায়ক হয়ে থাকবে-
(যদি কেউ কখনও এমন শুভবোধের তাড়নায় উদ্্বুদ্ধ হয়ে এসব শিশুদের পরিপূর্ন শিক্ষিত হয়ে উঠার পথে সহায়তা করতে চান তাহলে ওর সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ থাকলো। অবশ্য ও আজিজ মার্কেটের কোনো এক দোকান নাম "নতুন কথা" সেখানে বিকেল কিংবা সন্ধ্যার পর বসে- সেখানেই যোগাযোগ করতে হবে।)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

