অহেতুক কোনো বিতর্কে জড়ানোর রুচি কিংবা আগ্রহ এখন পাই না। বোধ হয় একটা জড়তা চলে এসেছে। বয়েস বাড়ছে, ধীরে ধীরে শরীরের প্রতিক্রিয়া কমে যাচ্ছে- হঠাৎ আড্ডার আড়ালে এক বন্ধু ডেকে বললো, আচ্ছা দোস্তো মৃত্যু নিয়ে সায়েন্স কি বলে?
মৃত্যু বিষয়ে বিজ্ঞানের কিছু করনীয় আছে আদৌ? মৃত্যুকে বিলম্বিত এবং প্রলম্বিত করা ব্যতিত বিজ্ঞানের অবদান কতটুকু? আমাদের বয়েস বাড়ছে, আমাদের অভিজ্ঞতা বাড়ছে, আমাদের বিচক্ষনতা বাড়ছে, আমরা আরও নিঁখুত সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারছি অভিজ্ঞতার কারণে। বয়েস বাড়ার এই ভালো দিকগুলোর বাইরে একটা নিশ্চিত পরিণতি রয়েছে, একদিন এই জীবনের অবসান হবে, অকস্মাৎ কিংবা ধুঁকে ধুঁকে। সুতরাং বন্ধু অহেতুক উদ্বেগ না দেখিয়ে বেঁচে থাকো।
তবে বন্ধুর প্রশ্নটা আরও একটু বেখাপ্পা, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বিষয়ে প্রশ্ন। সে প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। সত্য স্বীকার করে নেওয়া ভালো। মৃত্যুর পরে আমরা বেহেশত দোজখে হুরপরী নিয়ে ভোগমত্ত জীবন যাপন করবো না কি আমরা পুড়ে ঝাঁঝড়া হবো এই বিষয়ে বিজ্ঞান কোনো সিদ্ধান্ত দেয় নি। এটা মূলত দার্শনিক সমস্যা। বিজ্ঞানের এখানে করনীয় কিছু নেই। তুই যেই বিশ্বাস নিয়ে জীবন যাপন করিস সেই বিশ্বাস নিয়েই তোর মৃত্যু পরবর্তী জীবনের ঘটনার অনুমাণ করবি। এইটুকুই বলা যায়, থিওলজিক্যাল কোনো ডিবেটে বেহেশত দোজখের অস্তিত্ব বিষয়ে নিঃসংশয় কোনো সমাধান বিজ্ঞান দেয় নি।
মৃত্যু আদতে কি? এই প্রশ্নের কোনো মীমাংসা এখনও হয় নি। আমরা কোনটাকে মৃত্যু বলবো? ধর্মবিশ্বাসী বন্ধুদের ধারণা রুহ যখন শরীর থেকে চলে যায়, যখন আজরাইল এসে রুহ নিয়ে চলে যায় তখন মানুষের মৃত্যু ঘটে।
বিতর্ক তেতে উঠে এই প্রশ্নেই আদতে। রুহ জাতীয় কোনো কিছুর অস্তিত্ব এখনও সঠিক ভাবে নির্ধারিত হয় নি। সুতরাং আমি রুহ জাতীয় কোনো কিছুর অস্তিত্ব মানতে নারাজ। আমি শুধু জানতে চাই মৃত্যু ঘটলে কি কি শাররীক প্রতিক্রিয়ায় বুঝা যায় আদতেই ব্যক্তিটি মৃত?
কতিপয় উদাহরণ দেওয়া যায়, হৃৎস্পন্দন থেমে গেলো। ফুসফুস বাতাস টানছে না, চোখের ভেতরে আলো ফেললেও সেটা আলোকসংবেদী আচরণ করছে না। অর্থ্যাৎ শরীরে সাড়া নেই, শরীরের নার্ভাস সিস্টেম কোলাপস করেছে। এই ঘটনাকে কি আমরা মৃত্যু বলবো?
বন্ধু রুহের অস্তিত্ব বিষয়ে বিজ্ঞানের গবেষণার বক্তব্য তুলে আনে। কোথাও কোনো এক বিজ্ঞানী রুহের অস্তিত্ব যাচাই করবার জন্য একটি কাঁচের ঘরে মৃত্যু পথযাত্রী একজনকে রেখেছিলো। যথা সময়ে সে মৃত্যু বরণ করে এবং সেই কাঁচের ঘরের একটা কোণা ফেটে রুহ চলে যায়।
এইসব বিশ্বাসী প্রলাপে আমার বিশ্বাস কম। তবে কেউ যদি এই গবেষণা সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে পারেন তবে তার তথ্য যাচাই করে রুহ বিষয়ক আলোচনা করা যায়।
বিজ্ঞা জ্ঞানী আস্তিকদের কাছেই আগ্রহ নিয়ে জানতে চাই বিষয়টা, নাস্তিক আমি এমন কোনো পরীক্ষার অকাট্য অস্তিত্ব জানি না। যেমন জানি না কবরের ভেতরে মাইক্রোফোন রেখে দিয়ে পাগল হয়ে যাওয়া গবেষকদের মনোমুগ্ধকর গল্পের সারবস্তু কতটুকু।
এইসব কতিপয় উল্লুক নিজেরা প্রচার করছে না কি এমন কোনো পরীক্ষা হয়েছে বাস্তবে?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



