চিন্তা করলাম এইসময় ছাদে বসে বসে ভেরেণ্ডা ভাজার চেয়ে রাস্তায় একটু হাঁটাহাঁটি করে আসি। যেই ভাবা, সেই কাজ। ২পায়ের উপর ভরসা করে বেরিয়ে গেলাম মেস থেকে।
চিপা কানাগলি পার করে বড়গলির মুখে আসতেই থমকে দাঁড়ালাম, আড়চোখে গাছের ফাঁক দিয়ে পূর্নিমার চাঁদ দেখলাম মনেহয়!! কিন্তু এই ভোরবেলা এত উজ্জ্বল চাঁদ দেখব কোত্থেকে? তাইলে কি মাম্মা সাতসকালে জ্বীনের খপ্পরে পড়লাম নাকি? পরে ভয়ে ভয়ে চোখ তুলে ভাল করে তাকিয়ে দেখি শালার সিটি কর্পোরেশনের ল্যাম্পপোস্টের বাত্তি জ্বলে। ধুশ শালা, আমি আস্ত একটা বেকুব...
হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মুখে এসেই দেখি গলির সামনের সিকিউরিটি গেটটা খুলে গেছে,কপাল ভাল। নাইলে আবার পুরা রাস্তা ডাবল ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে বের হওয়া লাগতো।
রাস্তায় নেমে আকাশের দিকে তাকিয়েই দেখি সূর্য মেঘের ফাঁক দিয়েই যতটুকু পারে আকাশে আগুন লাগায় দেওয়ার ধান্ধায় আছে। সাথে সাথে আমার মাথায়ও আগুন চইরা গেলো- এই ঐতিহাসিক মূহুর্তে হাতে একখানি স্বর্ণপত্র ধূম্রশলাকা না থাকলে কি চলে?
উল্টা ঘুরেই গলির সামনের বিড়ির দোকানটার দিকে তাকিয়ে দেখি ওইটা এখনো খুলেনাই।
মাগার যেমনেই হোক, বিড়ি আমারে খাইতেই হবে। ঠিক করলাম যতক্ষণ না বিড়ি পাবো, ততক্ষণ হাঁটব (ভিতরে ভিতরে অবশ্য খুশিই হলাম, হুদাই হাঁটাহাঁটি করার অন্তত একটা উছিলা তো পাওয়া গেল )। যেই ভাবা সেই কাজ। বিড়ির দোকান খুঁজা শুরু করলাম। রাস্তায় তখনো খুব একটা গাড়িঘোড়া নেই, ২-১টা সিএনজি আর রিকশা ছাড়া। দোকানপাটও মোটামুটি সব বন্ধ (মনে মনে ভাবলাম আমি ছাড়া আর কোন ছাগলের মাথায় ঠাডা পরসে যে এই শীতের সকালের ঘুম বাদ দিয়া সূর্য দেখতে বাইর হইব)।
৫কদম এগোতেই দেখি এক চাচা মিয়ার টং খোলা। গিয়ে গোল্ডলীফ আছে নাকি জিজ্ঞেস করতেই চাচা বলে লীফ ছাড়া বেনসন, স্টার, ব্রিস্টল, হলিউড-সবই নাকি আছে! মেজাজটা গেল খিচড়ায়। এইডা কিছু হইলো!?! বলে রাখা ভাল বছরের শুরুতে পকেটে ১০টাকা ছাড়া আর ১টা কানাকড়িও নাই। এইরকম দারিদ্র্য নিয়ে ভোরে বর্ষবরনের বিলাসীতা করা যায়, কিন্তু বেনসন বাবুর সম্মানী দেয়া কোনভাবেই সম্ভব না। ব্যার্থ মনোরথে আবার হাঁটা ধরলাম।
কপাল ভাল আমার পুরান মেসের গলির মুখে তুহিন মামার দোকান খোলা। মামারে সালাম দিয়াই বাকীতে একটা লীফ ধরায় ফেললাম।
বিড়ি ধরায় শান্তিমত একটা টান দেওয়ার আগেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আজাইরা ঘুরাঘুরি করার আর কোন অজুহাত থাকলনা। কি আর করা বাসার দিকে রওনা দিলাম আবার। পিছে ঘুইরাই কিন্তু আবার মনটা ঠাণ্ডা হইয়া গেল। গতরাতে নওশীনরে নিয়া একটা পোস্ট পড়ার থেকেই আপামণিরে খুব মিস করতেছিলাম। এখন দেখি উনি আমার পুরান গলির মুখে দাঁড়ায় আমার দিকে তাকায় ফিচকা হাসি দিতেছেন (হাসিটায় এমন একটা ভাব যেন আমি কালকে রাতে মনে মনে ওনারে নিয়া কি মজা লইছি ঐটা আপামনি বুইঝা ফেলছেন)। ***সৌজন্যেঃ বেঙ্গল প্লাস্টিকওয়্যারস
যাই হোক, বাসায় ঢুকার আগমূহুর্তে এলাকার সারমেয় পরিবারের সাথে হালকা সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়ে গেলো। আমাকে দেখে তারা সসম্মানে রাস্তা ছেড়ে সরে দাঁড়ালেন
বাসার ছাদে উঠামাত্র খেয়াল করলাম আমার সাধের বিড়ির আয়ু প্রায় নেই বললেই চলে...
তার থেকে মনঃসংযোগ ঘুরিয়ে সূয্যিমামার দিকে ফিরাতেই আরো হতাশ হলাম। মামুজান তখনো মেঘের সাথে যুদ্ধ করছেন।
কি আর করা, 'অপারেশন বর্ষবরন' এর ব্যার্থতা চাপার জন্য আমাকে 'মিশন স্বর্ণপত্র-সংগ্রহ' এর সীমিত সাফল্যেই খুশি থাকতে হল। ভগ্নহৃদয়ে ফেরত আসলাম আমার সেই মেস MENTAL ASSYLUM এ। পুরান বছরের পুরান সেই রুমে ঢুকে নিজের জন্য নির্দিষ্ট চিপাটায় গিয়ে ল্যাপটপ অন করেই বর্ষবরন পিনিক নিবারণের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করতে হল।
বিঃদ্রঃ এর আগে কখনো ফটব্লগ লিখিনাই। তাই ছবি কেমনে আপলোড দিব এইটা নিয়া গত ২ঘন্টা নানাভাবে যুদ্ধ চালায় যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে আবার জানালার দিকে তাকায় দেখি মেঘের সাথে সংগ্রামে বিপুলবিক্রমে বিজয়ী হয়ে সূর্য পুরা সিলেট রোদে পুড়ায় দিচ্ছে।
কে বলবে এখন শীতকাল চলে?