somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে গৃহপরিচারিকা নির্যাতনঃ নির্যাতনরোধে আবশ্যক মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সকাল ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের সমাজে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত সব পরিবারেই গৃহস্থালির কাজের জন্য গৃহপরিচারিকা রাখা হয়, যাদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। এদের কাজের কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বাংলাদেশ চাইল্ড রাইটস ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় দেড় লাখ গৃহপরিচারিকা বাসা-বাড়ির গৃহস্থালির কাজের সঙ্গে যুক্ত।

গৃহপরিচারিকা ভৃত্য নয়, তাদের পরিচয় মানুষ। গৃহপরিচারিকা ছাড়া আমাদের চলে না। বিশেষ করে চাকরিজীবী পরিবারগুলোতে গৃহপরিচারিকা নেই এমন একটি বাসাও সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না শহরগুলোতে। বাসা পাহারা দেয়া থেকে শুরু করে সংসারের অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্ম তারা করে থাকে। অথচ তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না, পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন।

গৃহপরিচারিকারাও মানুষ, তারাও কোন না কোন বাবা-মার সন্তান এ কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আমাদের দেশে গৃহকর্মীদের অনেক ছোট করে দেখা হয়। যার ফলে ফ্লাট বা এপার্টমেন্টগুলোতে গৃহকর্মীদের জন্য আলাদা কোন কক্ষ রাখা হয় না। তাদের থাকতে হয় রান্না ঘরের মেঝেতে অথবা বারান্দার এক কোণে।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা মানবাধিকার ও শিশু অধিকারের কথা বলি কিন্তু বাস্তবে কতটুকু এর প্রয়োগ হচ্ছে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী মূলত দরিদ্র। গ্রামীণ এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে অর্ধাহার আর অনাহার নিত্যদিনের ঘটনা। তাই ক্ষুধায় জর্জরিত বাবা-মা একটু ভালো খাবার, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় তাদের আদরের সন্তানকে তুলে দেন কোন এক ধনী পরিবারে।
ঢাবি শিক্ষকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে কাজের মেয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের চেয়ারম্যান শিক্ষক এবিএম সিদ্দিকুর রহমান নিজামীর স্ত্রী আফরিন সুলতানা নির্যাতন করতেন বলে বাসার ১০ বছরের কাজের মেয়ে আফরোজা নিজেই বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে। আফরোজা অভিযোগ করে, দুইদিন আগে শিক্ষককের মেয়ে ছাপিন তার হাতে গরম পানি ঢেলে দেয়। ফলে তার হাত পুড়ে যায়। এছাড়াও কাজ করতে দেরি করলেই মারধর করে শিক্ষকের স্ত্রী। প্রায় দিনই তাকে মার খেতে হয়। তবে শিৰকের স্ত্রী আফরিন সুলতানা নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, কয়েকদিন ধরে কাজের মেয়েটি তার কথা শুনত না। তার মেয়ে ছাপিন ও কাজের মেয়ে আফরোজা এক সঙ্গে গরম পানি দিয়ে গোসল করতে গেলে আফরোজা গরম পানিতে হাত দেয়। ফলে তার হাত পুড়ে যায়। সে দুপুরে জামাকাপড় নিয়ে পালাতে যায়।

ছোট একটি অবুঝ শিশু তার মায়ের ভালোবাসার অচঁল ছেড়ে চলে আসে অচেনা-অজানা শহরে। সেখানে তার পরিচয় হয় গৃহকর্মী। শুরু হয় নতুন জীবন। ভোরের আগে ঘুম থেকে ওঠা তো চাইই চাই, সঙ্গে সকালের নাস্তা তৈরি, থালা বাসন ধোয়া, কাপড় ধোয়া, খাবার তৈরি, ঘর মোছা সব কাজের ভার পরে ওই শিশু গৃহপরিচারিকার ওপর। সারাদিনের হাড়ভাঙা কাজ শেষে কপালে জোটে দুই বেলা সামান্য খাবার, তা দিয়ে অনাহার কাটিয়ে কোনভাবে বেঁচে থাকা যায়।

এত কাজের মধ্যে কোন ভুলক্রটি হলে তো কথাই নেই। গৃহকত্র্রী বসে যান বিচারকের আসনে। বকাঝকা, চড়-থাপ্পড় দিয়ে শুরু হয় বিচার। তারপর চলতে থাকে খাবার না দেয়া, লাঠি দিয়ে পেটানো, ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেয়া, গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়ার মতো বর্বরতা। নির্যাতন শেষে গৃহকর্মীকে ফেলে রাখা হয় ঘরের এক কোণে অথবা টয়লেটে।

শুধু তাই নয়, এদের অনেকেই আবার শিকার হয় যৌন নির্যাতনের। গৃহকর্তা বা বখাটে সন্তানদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে অনেক সময় রেহাই পায় না এসব শিশু গৃহপরিচারিকারা। কিন্তু বিত্তশালী এই মানুষ নামের নরপশুরা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঠিকই বেড়িয়ে যায়। এত অত্যাচারের পরও তারা মুখ বুজে কাজ করে একমুঠো ভাত আর একটুখানি আশ্রয়ের আশায়।
আমরা কি একবারও ভাবতে পারি না নিজের সন্তানটিকে যে আদর ভালোবাসা দিয়ে বড় করছি, সেই আদর ভালোবাসা পাবার অধিকার গৃহপরিচারিকা শিশুটির রয়েছে। গৃহকর্মী আমাদের সমাজের একটি অংশ। তাদেরকে ছোট করে না দেখে আমাদের উচিত একজন মানুষ হিসেবে দেখা, তাদের কাজের স্বীকৃতি দেয়া।

এ ছাড়াও গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সমাজের সবাইকে সচেতন করতে হবে। আমাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। শাসন নয়, তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই গৃহকর্মীদের নির্যাতনের হার অনেকাংশে কমে আসবে।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×