somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বতন্ত্র দুক্‌খ সুত্ত : অভাজনের নারীভাবনা/ জয়দেব কর

০৯ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অল্পবয়সে স্বামীগৃহে গমন,
ঋতুমতী হওয়া,
গর্ভধারণ,
সন্তানপ্রসব,
পুরুষের পরিচর্যাকরণ

_এই স্বতন্ত্র পাঁচটি দুক্‌খ নারীকে বহন করতে হয়, যা পুরুষকে বহন করতে হয় না।
স্বতন্ত্র দুক্‌খ সুত্ত১_বুদ্ধ


পালি দুক্‌খ শব্দটিকে আমি বাংলায় সমস্যা বলে গ্রহণ করে কথা বলছি। অখণ্ড মানবসমাজ নির্মাণে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করতে পারা আড়াইহাজার বছর আগের মানুষটির কথা আজো সম-গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাতে অবশ্যই কালের ফেরে রীতিনীতির একটু এদিক সেদিক ঘটেছে, আভ্যন্তরীন মাজেজা একই রয়ে গেছে। [তাঁর লড়াই ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদ (বর্ণবাদ, লিঙ্গবাদ) সহ সকল অপ-বাদের বিরুদ্ধে। ব্রাহ্মণ্যবাদে সমাজ-রাষ্ট্র-গৃহে নারীর অবস্থান ছিল পুরুষের পায়ের নিচে। নারী ও শুদ্রের ছিলো না, মানুষের অধিকার। কিন্তু, বুদ্ধের সমাজ-ব্যবস্থায় নারী সবক্ষেত্রে সমান মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। ব্রাহ্মণ্যবাদ যেটাকে নারীর ধর্ম বলে চালায় বুদ্ধ সেটাকে নারীর স্বতন্ত্র সমস্যা বলে দেখান।] এখন অল্প বয়সে স্বামীগৃহে গমন হয়তো বেশ কমেছে, কিন্তু স্বামীগৃহ নামক যন্ত্রণাটি কপালে তারপরো রয়ে গেছে তার তিলকের মতো। নিজের ঘর কই তার?

আট বছরের কিশোরীর নিয়তি যেখানে পতিগৃহ ছিলো, আজও তো চব্বিশ, পঁয়ত্রিশ যাই হোক বিয়ের বয়স, পতিগৃহ ছাড়া আর কোনো গৃহ নাই। সিংহভাগ নারীর স্বামীগৃহে গমনের সাথে আজো পুরুষের পরিচর্যা করা অবশ্যপূরণীয় শর্ত হিশেবে মেনে চলতে হয়। পুরুষের পরিচর্যা তার সঙ্গ ছাড়ে না বিয়ের আগে ও পরে, একমাত্র মৃত্যুতেই যেন এর সমাধান ! এই শর্ত মেনে নিলে নারী ভালো, কারণ প্রিয়তম দাসীটিই অজ্ঞান সমাজের পুরুষের কামনা। যদি নারী শর্তের এদিক সেদিক করে তখনই হৈচৈ শুরু হয়ে যাবে। রব উঠবে পরিবারে, সমাজে, ধর্মালয়ে, রাষ্ট্রে। যার যার অবস্থা থেকেই সিংহভাগ মানুষ নারীকে রোধ করতে চাইবে তখন। নারীকে বিবাহে (স্বামীগৃহে গমন) বাধ্য করা হয়েছে তার শ্রম-দেহ-মন সবকিছু নিংড়ে পুরুষকে দেওয়ার জন্য (অবশ্য এটা প্রেমিক-প্রেমিকাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন। আর প্রেমিক-প্রেমিকাকে তো সমাজ ভালো চোখে দেখে না। প্রেমিক তাদের দৃষ্টিতে নারী, আর প্রেমিকা পুরুষ! শ্লেষটাও লক্ষণীয়_ নারী ও পুরুষ শব্দটি এখানে ভয়ঙ্কর সামাজিক গালি। )

পুরুষ-পরিচর্যার জন্য বিবাহপ্রথা ও অন্যান্য নিয়ম যতদিন সামাজিকভাবে রাষ্ট্রিকভাবে টিকিয়ে রাখা হবে ততদিন পর্যন্ত পুরুষ মানুষ হতে পারবে না। কারণ তার ভোগের এই সীমাহীন আসক্তির কারণে মানুষ হওয়ার মতো স্বাভাবিক গুণ প্রেম ও করুণার অভাবে শুকিয়ে যায়। পুরুষ পাল্টালে (মানুষ হলে) সমাজ সমাজ পাল্টাবে। পরিবারের প্রতিটি মানুষের বিকাশে পুরুষ যে প্রতিবন্ধক তা তাকে বুঝতে হবে। নারীর বিকাশে বড় বাঁধা হয়ে আসা পরিবারটিও পুরুষ। মেয়ের মনে স্বাধীনতা জাগলে তা থামিয়ে দিতে পিতাদের জুরি নেই। এমনকি মাও যখন এই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গিয়ে কন্যাকে শাসান তখন মা আর মায়ের ভূমিকায় থাকেন না, তিনি হয়ে উঠেন পিতা। নারীর উচ্চতা ছেড়ে পুরুষের স্তরে অধঃপতিত হয়ে নারীকে নারীর বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়, কী এমন এক ঘুমের ঔষধ খাওয়ানো হয় তাকে, সে জানে না, কিন্তু ঘুমের ঘোরে পুরুষের ঝাণ্ডা উড়ায়, মানুষের ঝাণ্ডা, মায়ের ঝাণ্ডা ছেড়ে। কিন্তু যে জেগেছে সে থামবে না। তাকে বন্দী করা যাবে না বিবাহের দোহাই দিয়ে, তাকে গৃহদাসী করা যাবে না গর্ভধারণ আর প্রসবের দুর্বলতাকে পুঁজি করে।

পিতা-মাতা-পরিবার-সমাজ-ধর্ম জেনে রাখুন মানুষ মূলত স্বাধীন। অন্যকে বন্দী করে রাখলে নিজে কখনোই মুক্ত থাকা যায় না। অদৃশ্য বেরী আপনা-আপনি পরতে হয়। সেই দিক থেকে মুক্তি চাইলে সমদর্শী হয়ে উঠুন। বিবাহের বাধ্যবাধকতার মতো দানব-রীতি থেকে মানসিকভাবে মুক্ত হোন। বিবাহ নয় প্রেমকে সামনে নিয়ে আসুন। কন্যা যদি বিয়ে না-করতে চায়, সে ইচ্ছাটার মর্যাদাটি দিতে হবে, করতে চাইলে সে ইচ্ছাটিরও মর্যাদা দিতে হবে। আপনার চারপাশের নারীর স্বতন্ত্র দুক্‌খের কারণ আপনি হয়ে উঠছেন কিনা বিবেচনায় নিয়ে আসুন। অন্য কারোর কাছ থেকে পরিচর্যা নেয়া তো সুস্থতার লক্ষণ নয়। শারীরিকভাবে অক্ষমতার জন্য পরিচর্যা নেওয়া নিশ্চই এখানে অন্যায় হিশেবে পরিগণিত নয়।

পাঁচটি স্বতন্ত্র সমস্যার মধ্যে দুইটি পুরুষসৃষ্ট আর তিনটি প্রাকৃতিক। তবে গর্ভধারণ ও সন্তানপ্রসব প্রাকৃতিক হলেও নিয়ন্ত্রণযোগ্য ও ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। গর্ভধারণ, সন্তান-প্রসব যতক্ষণ বাধ্যবাধক রীতি ততক্ষণ তা স্বতন্ত্র-সমস্যার অংশ। বিবাহের বাধ্যবাধকতার সাথে পুরুষের পরিচর্যার বাধ্যবাধকতার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এলে নারী ও পুরুষের উভয়েই ইচ্ছার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। আর তখনই ঋতুমতী হওয়া, বিবাহ করা, গর্ভধারণ, সন্তান-প্রসব হয়ে উঠবে নিপাট আনন্দের, অথবা অন্যদিকে তার বিপরীতে, একা নার্সিসাস-জীবনে চৈতন্যের ফুল ফোটানো হয়ে ওঠবে জীবনের কর্তব্য।

পারিবারিক দাসত্ব থেকে নারীর-মুক্তি ঘটলে কৃষির জন্মদাত্রী নারী সভ্যতাকে আরেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পুরুষের হাত ধরে অভিন্ন সমস্যা নিরসনে কাজ করে যাবে সমানতালে। উৎপাদন থেকে নারীর দূরত্বের কারণ পারিবারিক দাসত্ব, যার নেতৃত্বে থাকে পীড়নকারী পুরুষের মন। পুরুষের মন নয় সবখানে প্রজ্ঞা ও প্রেমে উদ্ভাসিত মানুষের মন জেগে উঠুক। মানুষ জাগলে সকল বৈষম্যের অবসান কোনো কঠিন বিষয় নয়, কঠিন নয় সমস্যার নিরোধ

১ পেয়াল বর্গ, ষড়ায়তন বর্গ, সংযুক্ত-নিকায় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×