somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমি ও হৃদয়ের জানালা খুলে দেওয়া কিছু উক্তি

২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যারা প্রাচ্যের অতীন্দ্রিয়বাদ, বিশেষত সুফিবাদ, সম্পর্কে আগ্রহী তাদের কাছে মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমি এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বিদিত। সর্বকালের সেরা একজন সুফিগুরু হিসেবে ইতিহাসে তাঁর আসন। কবিতার একনিষ্ঠ পাঠক, বিশেষ করে ফার্সি সাহিত্যের গুণগ্রাহীরা, তাঁর কাব্যকে উচ্চমানের কাব্য হিসেবে মর্যাদা দিয়ে থাকেন। জীবন ও জগত সম্পর্কে তাঁর অন্তর্ভেদী প্রেমময় দৃষ্টিভঙ্গি যেকোনও কালের মানুষের বোধ ও চিন্তার উৎকর্ষ সাধনে প্রাসঙ্গিক।
বর্তমান আফগানিস্তানের আনাতোলিয়া উপদ্বীপের বালখ শহরে ১২০৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে সেপ্টেম্বর, সুলতান আল উলামা, বাহা উদ্দিন ওয়ালাদ এবং মুইমিনা খাতুনের কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে সন্তান। বাবা তাঁর নাম রাখেন জালাল উদ্দিন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি রোমের আনাতোলিয়ার বিখ্যাত মাওলানা ও কবি হয়ে উঠলে তার নামের সাথে সংযুক্ত হয় মাওলানা ও রুমি শব্দদ্বয়। আফগানরা তাঁকে আফগান দাবি করে আবার পারসীরা পারসিয়ান হিসেবে। তাঁর পারসিয়ান পরিচিতিটাই ইতিহাসবিদরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। কারণ তাঁর জন্মকালে ওই শহরটি পারস্য শাসনের অধীন ছিল এবং তিনি তাঁর সিংহভাগ সাহিত্য ফার্সি ভাষায় রচনা করেছিলেন। যাইহোক, পরবর্তীতে আমৃত্যু তিনি কোনিয়াতে কাটিয়েছিলেন। তাঁর জাতীয়তা , জন্মস্থান এসব বিষয় তাঁর বিশ্বজনীন সৃষ্টিকর্মের নিকট নেহাৎ গৌণ।
পিতা সেই সময়ের বিখ্যাত উলামা এবং আইনজ্ঞ হওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই রুমির সুযোগ ঘটে ইসলামি শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করার। তাঁর বর্ণাঢ্য আধ্যাত্মিক জীবনে লোকোত্তর জ্ঞানান্বেষণের পথ বহু গুরুত্বপূর্ণ সুফি সাধকের সঙ্গ ও প্রেমে সমৃদ্ধ। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিখ্যাত সাধক কবি আত্তার, শামস তাবরিজি, সালাউদ্দিন জাকুব এবং হুসাম আল চেলেবী। ত্রয়োদশ শতকে লেখা রুমির মসনবী সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থ। এটি সৃষ্টির পর আর বেশিদিন বাঁচেননি তিনি। ১৭ ডিসেম্বর ১২৭৩ তাঁর মহাপ্রয়াণ হয়।তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় মুসলিম, খ্রিষ্টান, ইহুদিসহ প্রায় সব ধর্মের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে তাঁর বাবার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়। রুমির কবরের এপিটাফটিতে উজ্জ্বল হরফে লেখা রয়েছে, ‘যখন আমি মৃত, তখন আমাকে আমার সমাধিতে না খুঁজে মানুষের হৃদয়ে খুঁজে নাও।’
মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমির হৃদয়ের জানালা খুলে দেওয়া কিছু অন্তর্স্পর্শী উক্তি:
১। জীবন হলো ধরে রাখা ও যেতে দেওয়ার মধ্যকার ভারসাম্য।
২। গতকাল আমি চালাক ছিলাম। তাই দুনিয়া পাল্টাতে চেয়েছিলাম। আজ আমি জ্ঞানী। তাই নিজেকে পাল্টাচ্ছি।
৩। নিজেকে একা ভেবো না। পুরো জগতটাই তোমার ভেতরে স্থিত।
৪। তুমি আমার মধ্যে যে সৌন্দর্য দেখো তা তোমারই প্রতিচ্ছবি।
৫। তুমি সাগরের মধ্যে একবিন্দু জল নও। একবিন্দু জলের ভেতর গোটা সাগর।
৬। যদি তুমি কোনও কিছু খুব কাছ থেকে দেখো, তবে তুমি তার আসল স্বরূপটিই ধরতে পারবে না।
৭। একমাত্র হৃদয় দিয়েই আকাশ ছোঁয়া সম্ভব।
৮। বৃক্ষের মতো হও এবং মরাপাতা ঝরে যেতে দাও।
৯। আমরা প্রেমের সন্তান। প্রেম আমাদের জননী।
১০। যদি তুমি দিনের মতো আলোকিত হতে চাও, তবে তুমি অহমের রাত্রি পুড়িয়ে ফেলো।
১১। তুমি যা খুঁজছ, তা মূলত তুমি নিজেই।
১২। খাদ্য অন্বেষণকালেই সিংহকে সবচেয়ে বেশি সুদর্শন দেখায়।
১৩। পদক্ষেপ শুরু করলেই পথ দৃশ্যমান হয়।
১৪। প্রেম অন্বেষণ তোমার কর্ম নয়, বরং এর বিরুদ্ধশক্তি হিসেবে কী কী প্রতিবন্ধকতা নিজের মধ্যে সৃষ্টি করেছ তা খুঁজে বের করো।
১৫। নিশ্চিত থাকো যে, প্রেমধর্মে কোনও বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী নেই। প্রেম সকলকেই আলিঙ্গন করে।
১৬। নীরবতা ঈশ্বরের ভাষা। আর সব দুর্বল ভাষান্তর।
১৭। কৃতজ্ঞতা আত্মার মদ। মাতাল হও।
১৮। আমি কোনও ধর্মের অন্তর্গত নই। আমার ধর্ম প্রেম। প্রতিটি হৃদয় আমার উপাসনালয়।
১৯। আমরা ভালোবাসি বলেই জীবন এত বিস্ময়কর উপহারে পরিপূর্ণ।
২০। বিদায় শব্দটি তাদের জন্য যারা চোখ দিয়ে ভালোবাসে। যারা হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে তাদের জন্য বিচ্ছেদ বলে কিছুই নেই।
২১। কণ্ঠ নয়, তোমার কথা তুলে ধরো। ঝড় নয় বৃষ্টিতেই ফুল বেড়ে ওঠে।
২২। তোমার হৃদয় মহাসাগরের ন্যায়। এর গুপ্ত গভীরতায় নিজেকে খুঁজে বের করো।
২৩। রাত্রিকে এড়িয়ে না গেলেই চাঁদ উজ্জ্বল থাকে।
২৪। যখন তুমি আমিত্বের অনুভূতি হারিয়ে ফেলবে, তখন সহস্র শৃংখলের বাঁধন অন্তর্হিত হয়ে যাবে।
২৫। যা-ই ঘটুক না কেন, শ্রেফ মুখে হাসি বজায় রাখো আর নিজেকে প্রেমে হারিয়ে ফেলো।
২৬। সময়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে প্রেমের বৃত্তে প্রবেশ করো।
২৭। বেদনা হলো গুপ্তধন, কারণ তা সমবেদনা ধারণ করে।
২৮। সহিষ্ণুতার কর্ণ দিয়ে শ্রবণ করো, সহানুভূতির দৃষ্টি দিয়ে দেখো, প্রেমের ভাষা দিয়ে কথা বলো।
২৯। তোমার ভেতর রত্নভাণ্ডার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কেন তুমি এই জগতের প্রতি এত মোহিত?
৩০। আমরা ভেতরের সংগীত কদাচিৎ শুনতে পাই, তা সত্ত্বেও এর মধ্যেই আমরা সকলেই নৃত্যরত।
৩১। খুব অল্পসংখ্যক মানুষ ব্যতীত এই গ্রহের সকলেই অপরিণত। বাসনামুক্ত মানুষ ছাড়া খুব অল্পসংখ্যকই পরিণত।
৩২। প্রেম কোনও ভিত্তির উপর অবলম্বন করে টিকে থাকে না। এটি অসীম সমুদ্র, যার আদি-অন্ত নেই।
৩৩। কী উপেক্ষা করতে হয়, তা জানাই হলো জানার শিল্প।
৩৪। পাখা নিয়ে জন্মেছ যখন, তবে হামাগুড়ির জীবন কেন পছন্দ ?
৩৫। যত বেশি নীরব হবে, তত বেশি শুনতে পাবে।
৩৬। এত প্রশস্ত দরোজা থাকার পরও কেন তুমি কারাগারে বাস করো?
৩৭। প্রতিটি মানুষের মধ্যে চাঁদ রয়েছে। তার সহচর হতে শেখো।
৩৮। আমাদের হৃদয়ের কোমলতা ও প্রেমময়তাই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি।
৩৯। কৃতজ্ঞতাকে পোশাকের মতো ধারণ করো। তা তোমার জীবনের প্রতিটি বাঁকে শক্তি জুগাবে।
৪০। যখন তুমি প্রশান্ত আনন্দ অনুভব করো, তখন তুমি সত্যের কাছাকাছি অবস্থান করো।
৪১। ঈশ্বরের সন্ধান করতে গিয়ে শুধু নিজেকেই পেয়েছি। আর নিজেকে খুঁজতে গিয়ে শুধু ঈশ্বরকেই পেয়েছি।
৪২। নিজেকে চুমু খাও। যদি সুন্দর কাউকে ধরে রাখতে চাও, তবে নিজেকে দিয়ে নিজেকেই ধরে রাখো।
৪৩। আমি আমাকে ভালোবাসি, তাই তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তাই আমাকে ভালোবাসি।
৪৪। আর বসে থেকো না। সাগরে ডুব দাও। তুমি হয়ে উঠতে দাও সাগরকে।
৪৫। পদক্ষেপ শুরু করলেই পথ দৃশ্যমান হয়।
....
তথ্যসূত্র:
১। Tales from the Land of the Sufis by Mojdeh Bayat & Mohammad Ali Jamnia
২। উইকিপিডিয়া
৩। https://everydaypower.com/rumi-quotes

২৭ এপ্রিল ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×