somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রন্থ বিশ্লেষণঃ ছবি বানানোর গল্প

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বইঃ ছবি বানানোর গল্প
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশকালঃ জুলাই,১৯৯৬
প্রকাশনালয়ঃ মাওলা ব্রাদার্স
পৃষ্ঠাঃ ১৮২
মূল্যঃ ২২৫

বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ হুমায়ূন আহমেদ, বলাই বাহুল্য। সাহিত্যকে তিনি নিয়ে গেছেন অন্য মাত্রায়, অন্য উচ্চতায়। যিনি সারাজীবন পাঠককে তাঁর লেখার মায়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছেন, পাঠকও তাকে ভালোবেসে "গল্পের জাদুকর" উপাধি দিয়েছে। দুই বাংলায় সমপরিমাণ জনপ্রিয় এই ক্ষণজন্মা কথাসাহিত্যিক ছিলেন একজন দক্ষ চলচ্চিত্র পরিচালকও। তাঁর উপন্যাস অবলম্বনে, তাঁর পরিচালনায় নির্মিত "আগুনের পরশমণি" বাংলা সিনেমার অন্যতম একটি অমূল্য সম্পদ। যে সিনেমাটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার'৯৪-এর শ্রেষ্ঠ কাহিনীসহ পেয়েছে পুরস্কারের বিভিন্ন শাখায় মোট ৮টি পুরস্কার। সিনেমাটি আমরা হয়তো অনেকেই দেখেছি, কিন্তু সিনেমার পেছনের কাহিনীটা আমরা জানি কয়জন?

হুমায়ূনের লেখনীতে উঠে এসেছে "আগুনের পরশমণি"র পেছনের গল্প, ছবি বানানোর গল্প। সব ধরণের কালজয়ী সৃষ্টির পেছনেই কিছু চড়াই-উৎরাই, কিছু হাসি-কান্না, সংকট, সমাধান থাকে। "আগুনের পরশমণি"র পেছনেও এই বিষয়গুলো ছিলো। সেই বিষয়গুলোকে উপজীব্য করে লেখক তাঁর আশ্চর্য লেখনীর মাধ্যমে সফলভাবে বইয়ের পাতায় তুলে এনেছেন "ছবি বানানোর গল্প"কে।

বইটি কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সূচিপত্র নীচে দেয়া হলোঃ
১. স্বপ্নের জন্ম
২. একশ রক্ত গোলাপ
৩. কুশীলব প্রসঙ্গ
৪. আমার সৈন্য সামন্ত
৫. চড়াই-উৎরাই
৬. একপোয়া বাঘের দুধ
৭. লাইট, ক্যামেরা,একশান এবং...
৮. ডাবিং
৯. জটিলতা-সরলতা
১০. এসো কর স্নান
১১. শিল্পী তালিকা/কলাকুশলী
১২. আগুনের পরশমণির জয়মাল্য
১৩. আগুনের পরশমণির চিত্রনাট্য
১৪. উপন্যাস (আগুনের পরশমণি)

সূচিপত্র দেখেই বোঝা যাচ্ছে, দারুন বৈচিত্র্যময় বইটি। জীবনের প্রথম সিনেমা নির্মানের সময়ে কতটা বিপদে তাকে পড়তে হয়েছে, কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে সিনেমার কাজ শেষ করতে হয়েছে, তার প্রায় সবকটি ঘটনাই লেখক নির্দ্বিধায় স্বীকার করেছেন "ছবি বানানোর গল্প"তে। আমরা জানি, সত্যজিৎ রায় নির্মিত কালজয়ী চলচ্চিত্র "পথের পাঁচালী"র কাজ মাঝপথে টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। একই ঘটনা ঘটেছে হুমায়ূন আহমেদের "আগুনের পরশমণি"র বেলাতেও।

"ছবি বানানোর গল্প" বইটিতে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে "আগুনের পরশমণি" সিনেমার শ্যুটিং চলাকালীন তোলা অনেকগুলো অপ্রকাশিত রঙ্গীন ছবি। এই স্থির চিত্রগুলো "ছবি বানানোর গল্প"কে বাড়তি দ্যোতনা দিয়েছে।

বইটি থেকে একটি ঘটনা পুরোপুরি তুলে দিচ্ছিঃ

"আমি নিজে এফডিসির খাবার খুব পছন্দ করে খেতাম-একদিন গোশত দিয়ে ভাত মাখছি। হঠাৎ দেখি ছোট ছোট পা দেখা যাচ্ছে। গোশত চিংড়ি মাছ না। গোশতের পা গজাবার কোনো কারণ নেই। আমি কৌতূহলী হয়ে গোশতের টুকরা উল্টালাম- দেখা গেলো গোশতের টুকরার নিচে একটি মৃত তেলাপোকা। আমি হতভম্ব হয়ে আমার পাশে বসা আসাদুজ্জামান নূরকে তেলাপোকাটা দেখালাম। তিনি তখন মহানন্দে মাংসের হাড় চিবুচ্ছেন। নূর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তেলাপোকা ফেলে দিয়ে ভাত খান। গণ-রান্নায় পোকা মাকড় থাকে- এতে রান্নার স্বাদ ভাল হয়।"

এভাবেই বহু কাহিনী, বহু ঘটনার মধ্য দিয়ে "আগুনের পরশমণি"র শ্যুটিং এগিয়েছে, "ছবি বানানোর গল্প"ও এগিয়েছে। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত কাহিনীর গাঁথুনি ছিলো একইরকম ছিমছাম, দৃঢ়, নিপুণ। হুমায়ূন আহমেদের "আগুনের পরশমণি" বাংলা সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছবি, নিঃসন্দেহে। সেই কালজয়ী সৃষ্টির জন্মলাভের আগে-পরের বহু তথ্যের, বহু গল্পের সম্মিলন "ছবি বানানোর গল্প।"

আমার দৃষ্টিতে,হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম একটি সেরা বই এটি।




২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×