somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটু খানি বাসা!! নাকি মরন ডেকে আনা

০৭ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পাখি নীড়ে ফিরে। ক্লান্ত ডানা দুটো ছড়িয়ে দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরে খড়কুটোর বিছানায়। সারা দিনের ক্লান্তি স্বপ্ন হয়ে নেমে আসে চোখের তারায়। আবার খুব ভোরে নরম পালক ডানায় ভর করে বেড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর রুপ সন্ধানে। আহ কি জীবন !! মধুরতম স্বাধীন জীবন!!

যে জীবনের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি। সেই সাথে মনের গভীরে লালন করি পাখির নীড়ের মত ছোট্ট একটি বাসার। কল্পনার ক্যানভাসে স্বপ্ন আকি, একটা ডুপ্লেক্স বাড়ী হবে, সামনে থাকবে এক টুকরো স্বর্গ উদ্যান এর মত বাগান। যে বাগানে মাটি ছুয়ে আকাশ দেখা যাবে, ফুলের নরম পাপড়ি আবির ছড়াবে, উঠোনে খেলা করবে হেমন্তের সকাল, শীতের কুয়াসা আর বসন্ত শুরুর পাতা ঝরার দল..।

আমার ভাবনারা ডানা মেলে আরো এক ডিগ্রী বেশী, বাড়ীর পিছনে আমি এক চিলতে পুকুরও রাখি...যে পুকুরে হঠাৎ থমকে একটু মুখ দেখে নিবে নীল আকাশ আর মেঘ পিয়নের দল। সেই ঘাটে পা ডুবিয়ে আমি বসবো কখনও। জলে উড়ে এসে পরবে হিজলের পাতা আর ভেসে যাবে আপণ মনে। কখনও ঘুম না এলে পুকুরের পাশে যেয়ে বসব। আমি নিবিষ্ট হবো জলে আর গান শুনবো জল তরঙ্গের...মনে মনে খুশী হবো এই ভেবে আমারও উঠান ছুয়ে যায় চৈতালি হাওয়া।

আমাদের এমন সব মধুর স্বপ্ন পূরনে এগিয়ে এসেছে অনেক গুলো ডেভেলপার কোম্পানি। পত্রিকার পাতায় তাদের দারুন সব আকর্ষনীয় অফার দেখে মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা স্বপ্ন গুলো সব মাথা চাড়া দিয়ে উঠে!! "কাঠা প্রতি মাত্র তিন হাজার টাকা মাসিক কিস্তি"। আমরা ছাপোষা মানুষেরাও নড়েচড়ে বসি।

একদিন চুপি চুপি চলে যাই গুলশান, বনানীতে ডেভেলপারের অফিসে। চৌকোষ মার্কেটিং এর ছেলেরা স্যার স্যার ডাকতে ডাকতে মনটারে ব্যাপক খুশী করে দেয়, আর স্বপ্নের গায়ে একটু সুরসুরি দিয়ে উস্কে দেয়। সাথে চলে নকল অভিনয় আর চাপাবাজি "স্যার আজই কিন্তু এই অফারের শেষ দিন, ব্যাপক চাহিদার কারনে আমাদের ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাল থেকে কাঠা প্রতি মূল্য এক লক্ষ টাকা বাড়িয়ে দেয়া হবে তাই যা করার যলদি করুন, স্যার আমাদের জমি হট কেকের মত বিক্রী হচ্ছে। গত কালও আমাদের অফিস করতে হয়েছে রাত দশটা পর্যন্ত, বুঝুন তাহলে আমাদের অবস্হা। যদিও জমি এখন প্যাডি ল্যান্ড, জমি পেতে পেতে দশ বারো বছর লাগবে। তবুও কি চাহিদা!!

তারপর একে ওকে ধরে বুকিং দিয়ে স্বপ্নের এক চিলতে সূতা একটু খামচে ধরা হয়।
আমরা ছাপোষা মানুষ জন ভাবি "না হয় এখন থেকে ডেইলি দুই ঘন্টা করে ওভার টাইম করব", সাথে দুইটা টিউশনি। এভাবে চালিয়ে নেয় ছাপোষা মধ্যবিত্তরা। এক দিন বউ আর বাচ্চা সাথে নিয়ে কোম্পানির দেয়া মাইক্রোতে চড়ে দেখতে যায় নিজের স্বপ্নটাকে।

দেখে ধান ক্ষেত আর ধান ক্ষেত দিগন্ত বিস্তৃত অবারিত সোনালী সবুজ ধান ক্ষেত। আত্ম তৃপ্তি নিয়ে ছাপোষারা ফিরে আসি ঘরে। কেননা চোখে দেখার সাথে সাথে গাইড এটাও যে বলে দিয়েছে স্যার আপনার জমির দাম এখন আরো এক লক্ষ টাকা বেশী বেড়েছে! "ঠিক মত কিস্তি না দিলে কিন্তু তিন মাসের মধ্যে চুক্তি বাতিল! কারন আমাদের বহু ক্লায়েন্ট আছে যারা হা করে আছে জমির জন্য। এই জমির দাম যে কত বাড়া বাড়বে তা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না স্যার।"

এই যে সুন্দর ধান ক্ষেত দেখে এলাম। আমরা ম্যাঙ্গো পাবলিকরা এই কথাটা কখনও কি ভাবি এই ধান ক্ষেত থেকে উৎপন্ন হচ্ছে কত হাজার লক্ষ টন খাদ্য শস্য? যা আমাদের বেচে থাকার প্রধানতম অবলম্বন, যা দিয়ে আমরা তিন বেলা উদর পূর্তি করি। সেই ফসলী জমি গুলো আমরা লোভী মানুষেরা আমাদের স্বপ্নের বাড়ী ঘর তুলে নষ্ট করছি! এরপর খাবটা কি তার কি কোন ব্যবস্হা করেছে ডেভেলপার কোম্পানি। যে পরিমান খাদ্য শস্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে সেই ঘাটতি মেটানোর জন্য আমরা কি কিছু ভেবেছি? মনে হয় না আমরা কিছু ভাবছি।

ছোট বেলায় স্কুলের পাঠ্য বইতে পড়েছিলাম জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল। এখন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সেই অশনি সংকেত....দূর্ভিক্ষের পূর্বাভাস। ইতিমধ্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে! তবুও আমাদের টনক নড়ে না!! আর কবে নড়বে। বাড়তি বাড়ী ঘর গুলো তৈরী হলে লাগবে বাড়তি বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, গ্যাসের ব্যবস্হা। বর্তমান কালেই সরকার আমাদের চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ এর যোগান দিতে পারছে না, পারছে না যথাযথ পানি সরবরাহ করতে। সেখানে নতুন শহরে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করে আছে!! আসুন স্বপ্নকে লাগাম দেই। বেচে থাকি এই সুন্দর পৃথিবীতে আরো কিছু দিন। পৃথিবীটাকেও রাখি সুন্দর।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ৯:৩৮
২৫টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×