অনেক দিন থেকেই বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করেও লেখা হয়ে উঠছিল না। ফলে যা হবার হল, বুকের ভিতর বিবেক নামক বস্তুর কড়া নাড়ানাড়ি, কড়া নাড়া এমন পর্যায়ে গেছে যে লিখতে বসতে হল। ভূমিকা শেষ এবার আসল কথা্য চলে যাই, ফেসবুকে আমি ছয় বছর পার করছি। এই নাতি দীর্ঘ সময়ে সোশাল নেটওয়ার্কিং এর এই সাইট কখন যে এত আপন হয়ে উঠেছে টের পাইনি। কত পুরনো বন্ধু বান্ধবী কলিগ আত্মীয় স্বজনকে যে পেয়েছি সে কথা বলে শেষ হবার নয়। অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানা্ই মার্ক জ্যাকারবার্গকে।
ফেসবুকে সবাই সুখের কথাই শেয়ার করেন, নিজেদের সুন্দর মুহূর্তের ছবি, সন্তানের ছবি মোট কথা যা কিছু ভালো সবকিছুর দেখা মেলে এখানে। আর সেটাই হওয়ার কথা। কষ্টের কথাও শেয়ার করেন কেউ কেউ তবে বেশীর ভাগ টাইমে সেই কষ্টের ধরন গুলো হল ইউনিভার্সাল সত্য টাইপ কষ্ট যেমন আপন কারো মৃত্যু, জ্বর, ঠান্ডা, মাথা ব্যাথা,এ্যাকসিডেন্ট,দেশ নিয়ে হতাশা এই টাইপ কষ্ট। মনের যাতনা বেদনার কথা এখানে কেউ শেয়ার করেন না আর তা হয়তো করার কথাও নয়। ফেসবুক একটা ইন্টারন্যাশনালি পাবলিক প্লেস বলে কথা!!
মানুষ তার রুচি জ্ঞান শিক্ষা অনুযায়ী এখানে সবকিছু শেয়ার করেন বলে আমি মনে করি। বয়সে আরেকটু তরুন যারা তারা আবার অনেকেই বেশ সাহসী, সাহস করে অনেক কিছুই তারা শেয়ার করে বসেন, আবার অনেকের কাছে এটা শুধুই একটা ফাযলামি করার জায়গা। তারপরও ফেসবুকের অলিখিত এইসব নিয়ম কানুন মানে ভদ্রচিত আচরন সবাই কম বেশী মেনে চলেন।
রিয়েল লাইফে অনেকের সাথেই অনেক কিছু নি্যে বনিবনা হয় না আমাদের, কখনও কখনও বিষয়টা চরম মানসিক কষ্টের কারনও হয়ে দাড়ায়। তাই বলে সেই মাণুষটার সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয় না কেউ। অভিমান করে হয়তো কথা বলা বন্ধ করে দেয়া হয়, অথবা তাকে এভয়েড করার সব রকম ভদ্রচিত উপায়ই হয়তো অবলম্বন করা হয়। মারামারি অশ্লীল গালি গালাজ কাদা ছোড়াছুড়িতে যায় কয়জন!! সচেতন মানুষ মাত্রই এইটুকু সীমারেখা মেনে চলেন। ভীষন মাথা গরম আর অসুস্হ মানুষদের কথা আলাদা। এরা সব পারে। এটা যদি হয় ভদ্রলোকের সীমারেখা, তবে ফেস বুকে এই কাদা ছোড়াছুড়ি কেন!! কারো কোন কিছু ভালো না লাগলে, মনোমালিন্য হলে, ভুল বুঝাবুঝি হলে স্ট্যাটাস ম্যাসেজে ইনডাইরেক্টলি সেই ব্যাক্তিকে আঘাত করে এমন সব কথা ছুড়ে মারা হয়,যা পাবলিকলি তাকে হেনস্তা করা ছাড়া আর কিছুই না। না এই কাজ সবাই করেন না, খুবই গুটিকয় হাতে গোনা ইমম্যাচিওর কিছু মানুষ জন এই কাজ করেন। তারা কি বোঝে এগুলো করে তারা অন্যের চোখে কতটা নীচে নেমে যাচ্ছে, সে তার শিক্ষা সংস্কারকে নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আরে বাবা যদি কষ্ট পেয়ে থাকো তবে সরাসরি কেন তাকে জিজ্ঞেস করছো না। আলোচনায় সবকিছুরই হাল বের হয়,মনের কালো মেঘ কেটে গিয়ে সোনালী আলো ফুটে উঠে। সেই সাহস না থাকলে চুপ করে থাকো, সময়ের হাতে ছেড়ে দাও বিচারের ভার, সময়ই সব চেয়ে বড় বিচারক।
কাপুরুষের মত নিজের গর্তে লুকি্যে ঐ ব্যাক্তিকে স্ট্যাটাস ম্যাসেজ নামক অর্থহীন বুমেরাং অস্ত্র ছুড়ে মারার কোন মানেই হয় না। জানেনতো হ্যান্ডেল করতে না জানলে বুমেরাং কিন্তু ফিরে এসে আবার নিজের গায়েই আঘাত করে। এটা জেনে রাখুন প্রতিপক্ষকে যদি খারাপ মনে করেন তবে আপনি তার চে্যেও হাজার গুণ বেশী খারাপ, কেন? কারন আপনি তার পাবলিকলি সম্মান হানি করছেন, আপনার দুই চার জন ঘনিষ্ঠ ইয়ার দোস্ত দি্যে কমেন্টসে তাকে আরো দুইটা কটু কথা শুনিয়ে প্রতিশোধের ষোলকলা পূরন করছেন। ভেবে দেখুন সে কিন্তু তেমন কিছু করছে না, আপনার সম্মানে সে একটু আচড়ও কাটছে না, তবে আপনি কেন এই হীন কাজটা করছেন? নিজেদের গোপন অন্তর্দন্ধের কথা কেন পাবলিকলি প্রকাশ করছেন? আপনাকেও এক দিন ঠিক একই ভাবে অন্য কেউ অপমান করতে পারে। গুণিজনেরা বলেন সম্মান করতে না পারেন অসম্মান করবেন না। আর সম্মান করতে জানলেই সম্মান পাবেন।
সর্বজন বিদিত কথা, ভুল মানুষ মাত্রই হয়। ক্ষমা করতে পারাই মহৎ গুন। আবার এক তরফা ভাবে চিন্তা করে বা এক মুখের কথা বিশ্বাস করা হচ্ছে বলে হয়তো প্রতিপক্ষের কাজটা ভুল বলে মনে হচ্ছে। তাই খোলাখুলি কথা বলার কোন বিকল্প নেই। আসেন খোলাখুলি কথা বলি আর স্ট্যাটাস ম্যাসেজ নামক নিম্ন মানের অস্ত্র ব্যাবহার করে নিজেকে আর না হয় ছোট নাইবা করলাম। স্ট্যাটাস ম্যাসেজ গুলো হোকনা শুধু সুন্দর কথা বলার, অন্যকে আনন্দ দেয়ার, বুদ্বিদীপ্ত গঠন মূলক প্রগতিশীল চিন্তা চেতনা শেয়ার করার। হ্যাপি ফেসবুকিং।