somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এ যুগের মেয়ের গল্প (ভুল বুঝা মেয়েদের গল্প)

০৬ ই জুন, ২০১১ রাত ১০:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এটা আমাদেরই সমাজে বেড়ে উঠা এক শ্রেণীর মেয়েদের গল্প। যাদের সাথে মিলে যাবে, তাদের ভুল শুধরাবার সময় এখনই। আমাদের বাবা-মায়ের চেয়ে আপন পৃথিবীতে কিছুই নেই। বলা হয়, পৃথিবীতে একটা দিনই আছে যেদিন আমাদের বাবা-মা হাসে আর সন্তান কান্না করে, সেটা হল সন্তানের জন্মলগ্নে।


*********************

শিউলি (ছদ্মনাম) ক্লাশ নাইনে উঠেছে। আগের স্কুল থেকে এসএসসি তে ভাল করা যাবে না এই ধারণা থেকে তার বাবা-মায়ের ইচ্ছায় সে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। নতুন স্কুল নতুন নতুন বন্ধু। বয়ঃসন্ধিকাল। পৃথিবীর অনেক কিছুই নতুন করে শিখছে সে প্রতিদিন।

শিউলির একমাত্র ভাই তারেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। কিছুদিন পর চাকরীতে জয়েন করবে। শিউলির মনে হয় একারণই্ বাবা-মা ভাইয়াকে একটু বেশি যত্ন করে।

আরেক বোন চম্পার বয়স পাঁচ। ঠিক এ বছরই তাকে স্কুলে ভর্তি করা হবে। ভাই, দুই বোন আর বাবা মায়ের সংসার অনেক ভালই চলছে। কিন্তু ইদানিং শিউলির মনে হচ্ছে তার বাবা-মা তাকে একটুও পছন্দ করে না। সে যাই করে তা তার বাবা-মায়ের ভাল লাগে না। তার ভাইয়ের সাথে খুনসুটি সারাদিন লেগেই আছে। সে ভাইয়ের উপরে কখনো কোন কিছুতে অধিকার পায় না। ভাইয়া গায়ে হাত তুলে, বকা দেয়। তার বাবা সারাদিন অফিস করে। শুধু রাতেই বাসায় থাকে আর সে সময় কিছু না কিছু নিয়ে বকা ঝকা করে, তার মা তাকে সারাদিনই এটা ওটা নিয়ে বকা দেয়। সারাদিন চিৎকার চেচামেচি করে কাজ শিখ্ কাজ শিখ্ । মেয়ে হয়ে জন্মেছিস আজ বাদে কাল বিয়ে হবে। কাজ না শিখে শ্বশুর বাড়িতে গেলে আমার বদনাম হবে। সবাই বলবে কি মেয়ে বানিয়েছিস্ যে একটা কাজও পারে না। শিউলির রাগ হয়, মেয়ে হয়ে জন্মানো কি তবে পাপ?

শিউলি ভাত খেয়ে উঠেছে তো তার মা বলে, "কি মেয়ে হয়েছিস্ নিজের খাবারের প্লেটটা পর্যন্ত একটু ধুয়ে রাখতে পারিস্ না।"

শিউলির হয়ত গোসল করতে দেরি হচ্ছে, বাথরুমের দরজায় ধাক্কা "এতক্ষণ কি গোসল করছিস? খাবার ঠান্ডা হলে কে গরম করে দেবে শুনি? নিজে তো একটা কাজ করিস না চাল চলন নবাবের মেয়ের মত। এক্ষুনি বের হ।"

শিউলি হয়ত পড়তে পড়তে একটু মোবাইলটা নিয়েছে (এখন "ফেসবুক মোবাইল" এর অন্যতম কারণ), তার মা দেখে ফেলে আর বলে, "তোকে দিয়ে তো পড়ালেখা হবে না। কতবার বলেছি এতটুকু মেয়েকে মোবাইল দিও না। দেখ মেয়ের কান্ড। তোকে আরেকবার পড়ার সময় মোবাইল টিপতে দেখলে মোবাইল নিয়ে নিব খবরদার।"

শিউলির ইচ্ছে করে রাত নয়টায় একটু সিরিয়াল দেখবে, তার বান্ধবীরা সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকা নিয়ে কত গল্প করে, কিন্তু সে কিছু্ই বলতে পারে না শুধু চুপ করে শুনে। কারণ সে সিরিয়াল দেখার সুযোগ পায় না। তার সিরিয়াল দেখার সময় তার বাবা খবর দেখবে নয়ত তার ভাইয়া খেলা দেখবে। পরদিন যখন আবার একই পর্ব দেখায় তখন তার স্কুল থাকে। সাধনার জামাই আলেখের কি হল সে জানতে পারে না, জানতে পারে না পরের পর্বে রাগিনীর কি হয়। তার বান্ধবীরা অবাক হয়। সে নিজেকে ব্যাকডেটেড ভাবা শুরু করে। তার মতে, তার বাবা-মাই এর কারণ।

এসব কারণে শিউলির মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে ফ্যানের সাথে ঝুলে পরতে। তার একটা গোপন ইচ্ছাও আছে। সে এটা কখনো কারো সাথে শেয়ার করে না। সেটা হল, সুন্দর কোন ছেলে দেখে প্রেম করা যে তাকে তার বাবা-মায়ের দেয়া কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। তাকে অনেক বেশি ভালবাসবে আর তাকে তার বাবা-মা থেকে অনেক দুরে কোথাও নিয়ে পালিয়ে যাবে।

*********************

এ ধরণের ঘটনা এযুগের মেয়েদের জন্য কমন। অসংখ্য মেয়ে বয়ঃসন্ধিকালে এমন মন মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। সে সময় বুঝারও সুযোগ থাকে না যে আসলে বাবা-মা কখনো সন্তানকে অপছন্দ করতে পারে না। আর সেটা না বুঝার কারণেই শিউলির মত মেয়েরা স্বল্পপরিচয়া ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায়। ছেলে যদি সৎ নিষ্ঠাবান হয় তো শিউলির কপাল খুলে যায়। আর লম্পট হলে শিউলির মত মেয়েরা হারিয়ে যায়।

*********************

দুই বছর পরের ঘটনা। বাবা-মা মেয়েকে অনেক বেশি পছন্দ করা শুরু করে। মা শিউলিকে খাওয়ার জন্য বকাবকি করে। মা সব সময় মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
শিউলি বিরক্ত হয়, "কি মা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?"
- "দুইদিন পর তোকে তোর বাবার বন্ধুর ভাগ্নে আবির দেখতে আসবে। কেমন লাগবে তাই দেখছি?"
- "মা তোমরা যা শুরু করেছ, মনে হচ্ছে আমি চিড়িয়া আর তোমরা আমাকে বিক্রির জন্য উঠে পড়ে লেগেছ।"

বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও অনেক মেয়ে বুঝতে পারে না। ভাবে বাবা-মা আমাকে বিদায় করতে পারলেই মনে হয় বাঁচে। আমি বোঝা হয়ে গেছি। আমাকে খাওয়াতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। অথচ বাবা-মা জানে এত ভাল পাত্র হাতছাড়া করা উচিত হবে না। আমার মেয়ে এর ঘরে গেলে সুখী হবে। ছেলের পয়সা আছে, মেয়ে যখন যা চাইবে তাই পাবে। ছেলের চরিত্র ভাল। এরকম ভাল চরিত্র নাও পাওয়া যেতে পারে।

এই মেয়েরা ঠিক বিয়ের পরই মা-বাবার প্রতি গভীর আন্তরিকতা অনুভব করে। সবকিছুই বুঝতে পারে। তখন দেখা যায়, বাবা-মায়ের প্রতি ছেলেরা একটু অবহেলা করছে এটা দেখে মেয়ে তার ভাইদের ফোন করে বলে বাবা-মা যেন কষ্ট না পায়। বাবা-মাকে দেখার জন্য যেতে চাওয়ায় মেয়ের শ্বাশুরীর কাছে ছোট হতে হয় তাকে কতবার।

*********************

উৎসর্গঃ যে সব মেয়েরা বাবা-মাকে ভুল বুঝে আসছেন তাদের প্রতি।


(এ ঘটনা বর্ণনার মূল অনুপ্রেরণা আমার দুই মেয়ে বন্ধু, যারা মনে করে তাদের বাবা-মা তাদের একটুও পছন্দ করে না। একজন মনে করে তার প্রেমিক তাকে তার বাবা-মায়ের চেয়েও বেশি ভালবাসে। আমি আশ্চর্য হয়েছিলাম আর বলেছিলাম, বাবা-মায়ের সাথে প্রেমিকের তুলনা চলে না।)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
২৪টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×