somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গন্তব্য মরিশাস (রম্য)

০৩ রা জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। অবসর পেলেই জাহাজভ্রমণে বেরিয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে একেক সময় একেকজন থাকেন। এবার দেশের বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মতলব মিয়া আমার ভ্রমণসঙ্গী। আমরা যথারীতি রওনা দিলাম। গন্তব্য মরিশাস। এর আগে আরেকবার গিয়েছিলাম। জায়গাটি ভাল লেগেছে বলে আবার যাওয়া। আমার জাহাজে মোট যাত্রী সতের। সবারই গন্তব্য মরিশাস।

সন্ধ্যা হয়ে গেল। সবাই সমুদ্রের সৌন্দর্য দর্শনে ব্যস্ত। আমি ও মতলব মিয়া রাতে খাওয়ার পর ডেকে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। মতলব মিয়ার একটি বাজে অভ্যাস আছে বলে আমার মনে হয়েছে। তিনি সাধারণ-স্বাভাবিক একটি কথাকে চেঁচিয়ে বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। তিনি প্রতিটি কথাতেই আমার কানে তালা লাগিয়ে দিচ্ছেন। সম্ভবত শুটিংয়ে অ্যাকশন আর কাট বলে চিৎকার করতে করতে এ অভ্যাসটি হয়েছে।

সকাল সকাল ঘুম ভাঙল। ডেকে এসে দাঁড়ালাম। কেমন যেন ছিমছাম; অন্য রকম লাগছে। পথ ভুল হয়নি তো? আমার সহকারী দৌড়ে এলেন, কেমন যেন উত্তেজিত। বললেন, 'ক্যাপ্টেন, সর্বনাশ! আমরা মনে হয় ভুল পথে এসেছি। দেখুন সামনে অতিকায় কী যেন একটা দেখা যাচ্ছে।' দুরবিন বাড়িয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি দুরবিন চোখে দিয়ে ভড়কে গেলাম! সত্যিই তো, কালো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। আগে যখন এসেছিলাম, তখন তো তেমন কিছু দেখিনি। যদি দ্বীপ হয়ে থাকে, তবে আমরা ভুল পথে এসেছি। হ্যাঁ, সত্যিই দ্বীপ। এটি আবার কোন দ্বীপ? আমি হতবাক হলাম দ্বীপটির তীরে একটি লোককে দেখে। আরে এটা তো সভ্য মানুষ! এখানে মানুষ আছে? তাও সভ্য! সহকারীকে বললাম, 'জাহাজ ভেড়াও।' জাহাজ ভেড়ানোর পর লোকটি জাহাজে উঠে এল। শ্বেতাঙ্গ। জাহাজের সবাই আগ্রহ নিয়ে তাঁর কথা শুনল। তিনি যা বললেন তা হলো- তিনি আমেরিকার নাগরিক। একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব। টুইন টাওয়ার ধ্বংসসংক্রান্ত কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করার অপরাধে তাঁকে এই দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়েছে। আমি একটু অবাক হলাম! তিনি জানালেন, খুব কষ্টে আছেন এখানে। কিছুদিনের খাদ্য দেওয়া হয়েছিল, তা অনেক আগেই শেষ। মতলব মিয়া চেঁচিয়ে উঠলেন, 'আপনি কিছু ভাববেন না। আপনাকে নিয়ে একটি ছবি বানাব। নাম হবে মি. ডামবেল কেন নির্বাসিত।' নির্বাসিত লোকটির নাম মি. ডামবেল। মতলব মিয়ার কথায় তিনি বিরক্ত হলেন; বললেন, 'তাড়াতাড়ি জাহাজ ছাড়ুন! না হলে কপালে দুঃখ আছে। এখানে অসভ্য, বর্বর একটা জংলি জাতি বাস করে। জাহাজ দেখলে আক্রমণ করে বসবে।' আমি পুলকিত হলাম মনে মনে। বললাম, 'আমি জাতিটা না দেখে যাচ্ছি না। এত কাছে এসে আমাদের পূর্বপুরুষদের না দেখে চলে যাব? তাহলে ভ্রমণ করার উদ্দেশ্য কী!' মতলব মিয়া আমার সঙ্গে একমত। মি. ডামবেল বললেন, 'ঠিক আছে; তবে একটি শর্তে। সবাই চুপচাপ থাকবেন। ওরা টের পেলে কিন্তু রক্ষা নেই।' আমরা মেনে নিলাম।

মি. ডামবেল, আমি আর মতলব মিয়া রওনা দিলাম। পাহাড় বেয়ে চূড়ায় উঠে উপত্যকার দিকে তাকাতেই আমি হতভম্ব! কয়েক শ জংলি, প্রায় উলঙ্গ। সাত-আটজনকে হাত বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর অন্য সবাই একে একে লাইন ধরে এসে পাছায় লাথি মারছে। মি. ডামবেলকে জিজ্ঞাস করতেই তিনি বললেন, 'আপনারা আসার আগে পাশের অন্য একটি ছোট দ্বীপের আরেকটি জংলি জাতি এই দ্বীপ দখল করতে আক্রমণ চালায়। এই জাতির যারা ওই জাতিকে সহায়তা করেছে, তাদের যুদ্ধ শেষ হতে না হতেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।' আমার মনে পড়ল শব্দটি 'যুদ্ধাপরাধী'। হায়রে! এই ন্যাংটো, বর্বর, অসভ্য জংলিও যুদ্ধাপরাধীকে শাস্তি দিতে দেরি করে না। আর আমাদের দেশের মানুষ! সভ্য হয়েও আমরা বিচার এখনো করতেই পারিনি। আমার কিঞ্চিত মন খারাপ হল। মি. ডামবেল চুপিচুপি বললেন, 'এরা অদ্ভুত! অপরাধীকে যথাযথ শাস্তি দিতে কুন্ঠাবোধ করে না।' এবার মতলব মিয়া নিজেকে সংযত রাখতে পারলেন না। বলেই বসলেন, 'ইয়েস! এটি নিয়ে আমি ছবি বানাব, ইয়েস!' আমরা থ, জংলিরা চিৎকার শুনে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বল্লম নিয়ে আমাদের তাড়া করল। আমরা কেউ কারো দিকে খেয়াল না করে দিলাম প্রাণপণে দৌড়।

আমি আর মি. ডামবেল জাহাজে পৌঁছালাম। মতলব মিয়ার ছায়াও দেখতে পেলাম না। জংলিদের ভয়ে জাহাজ ছেড়ে দিলাম আমরা। হারিয়ে গেলেন বিশিষ্ট কাটপিস চলচ্চিত্রকার মতলব মিয়া।

(রম্য ভ্রমণকাহিনীটি রস+আলো, ৩০ জুন ২০০৮ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×