somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন গণিমতের মাল সাপ্লাইকারী

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সপ্তাহখানেক হয় গোসল করা হয় না আলী মোকাদ্দমের। পুরাতন অভ্যাস আবার নতুন করে জেগে উঠছে। বিদেশি সাহেবদের খেদমতে একসময়তো দিন আর রাত গুজার হয়ে যেত গোসল ছাড়াই। বড় বড় সাহেবরা সঙ্গীসহ আসতেন গাড়ী নিয়ে, সপ্তাহখানেক আরাম করতেন। তারপর তাদের বিদায় দিয়ে গোসলখানায় ঢুকে পরতেন আলী মোকাদ্দম। আহা কি সব দিন ছিল! কত আয়োজনই না করতেন সাহেবদের জন্য। গোসল করার সময়টুকুও ছিল না।

মধ্যরাতে আশেপাশের গ্রামে গিয়ে গণিমত ধরে এনে সাহেবদের আপ্যায়ন করতে হত। ভালো গণিমতের মাল পেতে সাহেবরা পা রাখতেন আলী মোকাদ্দমের আখড়ায়। আলী মোকাদ্দমের এ যশ পশ্চিম পাকিস্তান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। একবার তো তিনি সংবাদ পেয়েছিলেন ভারতীয় দালালদের মেরে এ দেশে পাকিস্তানি শাসন রক্ষা করতে পারলে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ফাইভ স্টার হোটেল তার খেদমতে নির্মিত হবে। সে থেকে আলী মোকাদ্দমের রাতের ঘুম হারাম। সাহেবদের খেদমতের গোলাম আলী মোকাদ্দম ইসলাম কায়েম করতে গণিমত ধরে এনে সাহেবদের খুশি করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

শরীর কি আর সাহেবদের একলার? মাঝে মাঝে দু'চারটা গণিমত যে চেখে দেখেননি তা কিন্তু নয়। এমনও তো হয়েছে যে এরপর পাঁচদিন গোসলও করা হয়নি। কিন্তু গোসলতো ফরজ। তাতে কি? ইসলামের জন্য সবই জায়েজ আছে। অবুঝ মেয়েগুলো যদি ধার্মিক হত তাহলে নিজেরাই সাহেবদের খেদমতে হাজির হয়ে যেত। সব মুনাফিক ভারতীয়দের দালাল।

কিন্তু এ কি হল! আরেকটু হলেই তো ইসলাম রক্ষা হয়ে যাচ্ছিল দেশে। হঠাৎ ভারতীয় দালালগুলো ক্ষেপে উঠল। আর কিভাবে যেন একের পর এক সব নিঃশেষ হয়ে গেল। আলী মোকাদ্দম নাম পাল্টিয়ে লুকিয়ে ছিলেন কিছুদিন। কিন্তু না কিছুকাল পরেই আশীর্বাদ হয়ে আসলেন এ দেশেরই সাহসী পুরুষ মুজিব। তিনি সাধারণ ক্ষমা দিয়ে দিলেন। অথচ আলী মোকাদ্দমের ধারণা ছিল ভারতীয় দালালরা এত সহজে হয়ত তাকে ছেড়ে দিবে না। কি ভুলটাই না করেছিলেন আলী মোকাদ্দম এটা ভেবে! মুজিব সাহেব ভালো লোক ছিলেন বৈকি। তারপর কারা যেন মুজিব সাহেবকে হত্যা করল। আলী মোকাদ্দম বুঝলেন, আল্লাহর গজব শুরু হয়ে গেছে। ইসলামের তলে না গিয়ে তিনি হিন্দুদের সাথে রাষ্ট্র কায়েমে নেতৃত্ব দেয়ায় খোদার পক্ষ থেকে গজব পরছে। আবার নতুন করে আলী মোকাদ্দম স্বপ্ন দেখছিলেন এ দেশে ইসলাম কায়েমের।

এরপর জিয়াউর রহমান নামের এ দেশেরই এক সাহেব এসে আলী মোকাদ্দেমসহ আরও অনেক লোকের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিলেন। কিন্তু বড়ই আচানক ব্যাপার হল, সে সময় ভারতীয় দালালদের যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারসহ বিভিন্ন তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা ভারতীয় দালালরা একের পর এক খুন হচ্ছিল! কাউকে আবার বিনা কারণে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেন স্বয়ং দেশপ্রধানই। আলী মোকাদ্দম এইবার নিশ্চিত হলেন, নাহ্ এ তো পুরাই খোদার গজব! গণিমত সাপ্লাই দিয়ে ইসলাম কায়েম করার লক্ষ্যে যে পূণ্যের কাজ আমি করে এসেছি তার উত্তম জাজা আমি পাবই।

তারপর কত কিছু হয়ে গেল! ভারতীয় দালালদের গুষ্ঠী খোদার গজবে ক্ষমতার লোভে পরে গেল। সেই সুযোগের সদ্ববহার করেছিলেন বলেই না আলী মোকাদ্দম আজ এতো ক্ষমতার অধিকারী। এরপর আলী মোকাদ্দম নিজের দল গঠন করে দেশে ইসলাম কায়েমের পথ উন্মুক্ত করলেন। খুলে ফেললেন শ'খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা শিখবে সেই শিক্ষা যা একাত্তরে চর্চা করে আলী মোকাদ্দম আজ খোদার দিদার লাভ করেছেন। এমনই শিক্ষা তাদের শিখানো হবে যাতে করে তারা সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে আলী মোকাদ্দমের মত আল্লাহর মকবুল বান্দাদের গুনকীর্তন আর সেবা করে যাবে, প্রয়োজনে জানও কোরবান দিতে প্রস্তুত থাকবে।

কিন্তু হঠাৎ এটা কি শুরু হইল? ভারতীয় দালালরা স্বাধীনতা লাভের পর পর আলী মোকাদ্দম ঠিক যেভাবে কিছুদিন ভয়ে ভয়ে দিন রাত গুজার করেছিলেন আবার তেমন করে ভয় শুরু হয়ে গেল। নাহ্ এটা খোদার তরফ থেকে একটা পরীক্ষা! কিন্তু তারপরও কেন জানি প্রতি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন আলী মোকাদ্দম। ফাঁসির দড়ি হাতে গণিমতের মালগুলো ধেয়ে আসছে তার দিকে। আর ঘুম ভেঙে গেলে দেখতে পান তার নেংটিখানা পায়ের গোড়ালীতে পড়ে রয়েছে। নাউজুবিল্লাহ্ কি বিপদ!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৮:১৯
১৭টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×