আগামীকাল ১৪ই মার্চ পাই দিবস
পাই একটি সংখ্যা । একটি সৌন্দর্যের নাম । গণিতকে যারা ভালবাসেন এবং গণিত নিয়ে যারা চর্চা করেন তাদের কাছে পৃথিবীর সুন্দরতম সংখ্যার একটি হচ্ছে ৩.১৪১৫৯২৬৫৩৫৯............... এটি একটি অসীম অনাবৃত সংখ্যা । এই সংখ্যার শুরু আছে কিন্তু কোন শেষ নেই । প্রশ্ন হল পাই আমরা কি করে পাই ? উত্তরটা আপনারা সবাই জানেন যে , কোন বৃত্তের পরিধিকে তার ব্যাস দিয়ে ভাগ করলে আমরা “পাই” পাই । পাই গনিতবিদদের নিকট খুবই প্রিয় । কারণ এই পাইয়ের মান দিয়ে অনেক কিছুই বের করা হয় । যেমন ধরুন আপনি গোলকের আয়তন বের করতে চান । প্রথমে গোলকের ব্যাস বের করুন । আপনার কাজ শেষ । এবার শুধু এর ঘন নিয়ে এর এক ষষ্ঠমাংশের মান বের করে ফেলুন । এবার একে গুণ করে দিন পাই এর মান দিয়ে । আপনি নিশ্চিতভাবেই আপনার গোলকটির আয়তন জেনে যাবেন । এছাড়াও সিলিন্ডারের ক্ষেত্রফল ও আয়তন , বৃত্তের ক্ষেত্রফল , কোনকের আয়তন ও ক্ষেত্রফল ইত্যাদি জানতে হলে আপনাকে পাইয়ের সাহায্য নিতেই হবে । এছাড়াও ত্রিকোনমিতি , কসমোলজি , পরিসংখ্যান , তাপগতিবিদ্যা , বলবিদ্যা , তড়িৎচুম্বকত্ব ইত্যাদির নানা সূত্রের প্রয়োগে পাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য ।
পাইয়ের রয়েছে একটি মজার ইতিহাস । আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর আগে থেকেই মানুষ পাইয়ের কথা জানত । কিন্তু আপনি যদি এই ৪০০০ বছরে কত সেকেন্ড আছে তা হিসেব করেন এবং তত সংখ্যক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান বের করেন তবুও আপনি শুধু পাইয়ের সঠিক মানের কাছাকাছি যেতে পারবেন কিন্তু এর সঠিক মানটি জানতে পারবেন না । পাইয়ের ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা বলি । প্রাচীন ব্যাবিলিয়নরা বৃত্তের ব্যাসার্ধের বর্গকে ৩ দ্বারা গুণ করে বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করত । তাদের গণনা থেকে পাইয়ের মান পাওয়া যায় ৩ । এটা প্রায় ৪০০০ বছর আগের কথা । খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০ সালের দিকের ব্যাবিলিয়নদের একটি ট্যাবলেটে পাইয়ের মান পাওয়া যায় ৩.১২৫ । যা সত্যই অসাধারণ । ট্যাবলেট হল প্রস্তর দ্বারা নির্মিত এক ধরণের ফলক যাতে নানা নকশা ও লেখা খোদাই করা থাকে ।
খ্রিষ্টপূর্ব ১৬৫০ সালের দিকের রাইন্ড প্যাপিরাসের মাধ্যমে প্রাচীন ইজিপ্টের গণিত সম্পর্কে জানা যায় । ইজিপশিয়ানরা বৃত্তের ক্ষেত্রফল মাপার জন্য পাইয়ের যে মান ব্যবহার করত তা হল ৩.১৬০৫ যা বর্তমান পাইয়ের মানের অনেক কাছাকাছি ।
আর্কিমিডিসের নাম সবাই আপনারা সবাই শুনেছেন । প্রাচীন বিশ্বের এই মহান গণিতবিদ যীশু খ্রিস্ট বা ঈসা (আ) এর জন্মেরও প্রায় আড়াইশ বছর পূর্বে প্রথম পাইয়ের মান হিসাব করে বের করে ফেলেন । তিনি একাজের জন্য একটি বৃত্তের ভেতর এবং বাহিরে দুটি বহুভুজ আঁকেন যেন এদের বাহুগুলো পরিধিকে স্পর্শ করে থাকে । প্রথমে বহুভুজের বাহুর সংখ্যা ছিল ছয় । এর ফলে একটি অসুবিধা দেখা যায় যে ষড়ভুজের পরিধি এবং তার ব্যাসের অনুপাত কম বেশী হয় । ফলে পাই এর সঠিক মান পাওয়া যায় না । তিনি তখন বৃত্তটির ভেতরে ১২, ২৪, ৪৮, ৯৬ ইত্যাদি সংখ্যক বাহুবিশিস্ট বহুভুজ অংকন করেন । যত বেশী বাহুবিশিস্ট বহুভুজ নেয়া যায় ততই তার পরিধি বৃত্তের পরিধির কাছাকাছি আসতে থাকে । আর্কিমিডিস জানতেন যে তিনি কখনও পাইয়ের সঠিক মান বের করতে পারবেন না । শেষ পর্যন্ত তিনি দেখান যে পাইয়ের মান ৩ ১/৭ এবং ৩ ১০/৭১ এর মাঝামাঝি ।
৫০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে জু চংঝি নামে একজন অসাধারণ মেধাবী চীনা গণিতবিদ এবং এস্ট্রোনমার ছিলেন । তিনি যদিও আর্কিমিডিসের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতেন না তারপরও তিনি পাইয়ের একটি মান বের করেন । তা হল ৩৫৫/১১৩ । পাইয়ের এতটা নিখুঁত মান বের করার জন্য তিনি ২৪,৫৭৬ টি বাহুবিশিস্ট বহুভুজ ব্যবহার করেন একটি বৃত্তের ভেতরে । অনেক দীর্ঘ এবং শ্রমসাধ্য গণনা ছিল এটি ।
আজ কম্পিউটারের মাধ্যমে পাইয়ের ১০ ট্রিলিয়ন স্থান পর্যন্ত মান বের করা সম্ভব হয়েছে । তবে কোন পরীক্ষাতেই পাইয়ের ২০ দশমিক স্থানের বেশী মান ব্যবহার করা হয় না ।
খ্রিস্টাব্দ ১৭০০ সালের দিকে গণিতবিদরা পাই এর মান বোঝাতে গ্রিক অক্ষর “π” ব্যবহার শুরু করেন । এটি উইলিয়াম জোন্স কর্তৃক ১৭০৬ সালে এটি ব্যবহার করা শুরু হয় । এই প্রতিকটি লিওনারড অয়লার কর্তৃক বহুলভাবে প্রচলিত হয় ।
পাইয়ের মান মুখস্থ করা নিয়ে অনেক প্রতিযোগিতা হয় । অনেকেই অনেক বেশী সংখ্যক স্থান পর্যন্ত পাইয়ের মান মুখস্থ বলতে পারেন । এখন পর্যন্ত সর্বাধিক সংখ্যক ডিজিটের পাইয়ের মান যার মুখস্থ তিনি কতগুলো বলতে পারেন জানেন ? ৬৭০০০ ডিজিট পর্যন্ত ! অবাক হলেন , হবারই তো কথা !
আগামীকাল ১৪ই মার্চ পাই দিবস । সারাবিশ্বে এই দিবসটি পালিত হবে । আপনিও এ দিবস পালনে যোগ দিতে পারেন । পাই দিবস কখনও কখনও ১৪ই মার্চ দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটে উদযাপন করা হয়। ঐ দিন দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটকে পাই মিনিট নামে আখ্যায়িত করা হয়। দুপুর ১টা ৫৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ডকে পাই সেকেন্ড বলা হয়। পাই সেকেন্ডে পাই দিবস পালনের মধ্য দিয়ে পাইয়ের মানের (৩.১৪১৫৯২৬) কাছাকাছি সময়ে দিবসটি উদযাপন করা সম্ভব হয়। যেখানে গণিত আছে , সেখানেই পাই থাকবেই ।
সবশেষে এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক আলবার্ট আইনস্টাইনকে জানাই শুভ জন্মদিন ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন