ভার্সিটি গেইটের জননী রেস্টুরেন্ট । বাইর থাইক্কা একটা বিড়ি ধরাইয়া ভিতরে ঢুকলাম । সেই একখান ভাব । এদিক ওদিক চাইয়া দেখলাম কুনো মাইয়া আছে নি । ধুরর নাইক্কা । যাউগ্যা চাইয়া দেহি শাকিল বন্ধু বইয়া রইছে । ওর পাতে দেহি আবার বিশাল সাইজের রুইমাছের একটা টুকরা । মাছভর্তা , ডিমভর্তা , ডাইলভর্তা , শুঁটকিভর্তা সহ কামাল মামা যত ধরণের ভর্তা বানায় সব একবারে লইয়া টইয়া কাহিল অবস্থা । খাইতাছেও সেই । আর শেষ হয় না । কতক্ষণ চাইয়া চাইয়া দেখলাম । ভাবলাম ডাক দিমু । আবার ভাবলাম পুলাডা এত কষ্ট কইরা খাদ্য গ্রহণে ব্যাপক মনোযোগ আনয়নের যা একখান চেষ্টা চালাইতাছে , তাতে আমার ডাক হুইন্যা হেতের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটা অসম্ভব কিছুই না । তাই আপাতত বাদ দিলাম । আমি আর আমার দোস্ত জয় খারাইয়া খারাইয়া শাকিলের খাওন দেখতাছি আর মনে মনে কইতাছি , ওরে কত ভাত খায় রে !! কয়েক সেকেন্ড পর হালায় আমাগোরে দেখতে পাইল । হেরপর ডাক দিল । হের ডাক হুইন্যা হের টেবিলে্র পাশে অবস্থানরত খা্লি চেয়ার দুইডা দখল করলাম আর তার খাওয়া দেখতে লাগলাম । অবশেষে তার খাওয়া শেষ হল । সে এতক্ষণে পাঁচ প্রকারের ভর্তা , এক পিছ রুই মাছ , দুই পিছ মুরগীর মাংস আর দুই বাটি ডাইল এক্কেবারে ফিনিস কইরা ফালাইছে । আমি ভাবলাম আমি এত মুটা একখান মানুষ হইয়াও এত কিছু খাইতে পারি না , আর এই চিকনা শাকিলের পিচ্চি পাকস্থলীতে এত খাওন কেমনে আটল !!!
যাই হউক । শাকিলের মনে কি যে ভাব উঠল বুঝলাম না সে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়া প্যাচাল পাড়তে শুরু কইরা দিল । ঐদিন আবার হেফাজতের হরতাল আছিল । আমিও হের লগে প্যাচাল পাড়তাছি আর মনে মনে কইতাছি , হালা আমার টেকা দে । এত প্যাচাল হুইন্যা কাম নাই ।
জাউগ্যা । আমরা তিনকাপ চা আর দুইডা গোল্ডলিফ ফুইক্যা কামাল মামার জননী রেস্টুরেন্ট থাইক্যা বাইর হইয়া গেলাম । ভাইব্বেন না আবার বিল না দিয়াই বাইর হইয়া গেছি । আমার আর জয়ের বিল ১২ টাকা । আর শাকিলের একারই ১৫০ টাকা । ও একটা কথা , জয় দোস্ত আবার ব্যাফক ভালো একখান পুলা । সিগারেট , বিড়ি কিছুই খায় না ।
জাউগ্যা । হাটতে হাটতে শাকিল কইতাছে , চল গেইটের ভেতরে গিয়া বসি । আমরাও সায় দিলাম । মাগার আমি মনে মনে কইতাছি , হালা আমার টেহা কহন দিবি ? তোর লগে কি পিরিতি করতে আমি এই দুপুরবেলা গেইটে আইছি ?
জাউগ্যা গেইটে ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন । পুলিশদের আমি ব্যাফুক পছন্দ করি । কারণ আমার ছাত্রীর বাপে আবার পুলিশ কর্মকর্তা । পছন্দ না করলে টেকা দিব না ।
ভার্সিটি গেইটের ভিতরে বইয়া মনে যা একখান ভাব জাগ্রত হইল , মনে হইতাছিল যে পাশ দিয়া কুনো মাইয়া হাইট্টা গেলে নির্ঘাত আমার প্রেমে পইড়া যাইত । কিছুক্ষন পর পাশে চাইয়া দেহি শাকিল্যা রাস্তার মইধ্যে হুইত্যা পড়ছে । আর পাশের পুলিশ সদস্যরা খাড়াইয়া খাড়াইয়া মজা দেখতাছে । আমি মনে মনে কইতাছি , হালার হালা । শোয়ার আর জায়গা পাইলি না । খাইয়া দাইয়া রাস্তাতেই শুয়ন লাগে ।
কিছুক্ষণ পর শাকিল কইতাছে , তুই আমার কাছে কত টাকা পাছ ? হুইন্যা আমার মনডা আনন্দে ভরপুর হইয়া গেল । কইলাম ২৫০ টাকার মত । সে আমারে ৩৫০ টাকা ধরাইয়া দিল । আমি কই , এত টেকা দেছ কেন? সে কইল , আমি নাকি ৩৫০ এর মতই পাই । এইবার তো আমার মনের ভিতর জালালি কবুতর বাক বাকুম কইরা ডাক দিতে লাগল । আমি মনে মনে কইতাছি , দোস্ত তুই আসলেই বস । না হইলে এত পিচ্চি একখানা পাকস্থলীতে এতগুলা খাওন আটাইলি কেমনে ?
জাউগ্যা । হেরপর শাকিল কইতাছে হের মনের মধ্যে নাকি ভাব জাগছে । হেতে নাকি গেরামের মধ্যে ধানখেতের পাশে গিয়া শুইয়া থাকব । আমার মনের ভিতর তো তখন কইতরের বাকবাকুম নৃত্য ! আমি কইলাম , চল যাই । জয়ও সায় দিল ।
কাঠফাটা রৌদ্রের মধ্যে তিনজনে হাঁটা ধরলাম । হরতাল তো গাড়ি ঘোড়া নাইক্যা । রিকশাও পাইলাম না । হাঁটতে হাঁটতে যখন তেমুখিতে আইছি তখন দেহি ২০-২৫ টা মাইক্রো কই জানি জাইতেছে । আরেকটু সামনে গিয়া দেহি ঐগুলা রাস্তার মধ্যে লাইন ধইরা খাড়াইয়া রইছে । গাড়িতে উঁকি দিয়া বুঝলাম এইগুলা বরযাত্রীর গাড়ি । আরেকটু আগ বাড়াইয়া দেখলাম হেফাজতের কর্মীরা গাড়ি আটকাইয়া দিছে । বাঙ্গালীর স্বভাব হইল ভিড় বাড়ানো । আমরা তিনজনে বাঙালির স্বভাব অক্ষুন্ন রাখবার সফল প্রচেস্টা চালাইলাম । বেশ কিছুক্ষণ বাকবিতণ্ডার পর হেফাজতের বিছানো জায়নামাজ সরাইয়া ফালাইয়া হ্যাঁগোর বেশ কয়েকটা গাড়িরে যাইতে দেয়া হল ।
জাউগ্যা আমাগো হন্টনক্রিয়া থাইম্যা নাই । কিছুদুর যাওনের পর দেহি পিচ্চি পুলাপান লাঠি লইয়া খাড়াইয়া রইছে । তারা কয়েকটা মোটরসাইকেলও সার্থকভাবে আটকাইয়া দিছে । আর তাগোর যা ভাষা । হুইন্যা আমরা তিনজনেই ভাষা হারাইয়া ফালাইলাম ।
কিছুক্ষণ পর ভাষা ফিরা পাইয়া দেশের অবস্থা নিয়া তিনজনেই উদ্বেগময় বক্তব্য পেশ করলাম । বক্তব্যের পেশক্রিয়া সমাপ্ত হইবার পরে শাকিল কইতাছে হে নাকি তরমুজ খাইব । এত গরমের মইধ্যে তরমুজ তো ব্যাফক শান্তির বিষয় । টুকেরবাজারে একটা ফলের দুকানে শাকিল একটা তরমুজের দাম জিগাইল । দোকানদার কয় ,
- ১০০ টাকা দেওয়া লাগব
- কিছু টাকা কম দেই ?
- ৯০ টাকা দিয়েন ।
- এইডাই লাস্ট নাকি কিছু বলতে পারব ।
- আর কমাইতে পারব না । ৮০ টাকাই লাস্ট ।
- আমি একটা দাম বলি ...................
- আর কমাইতে পারুম না ৭৫ টাকা দিয়েন ।
- এইডাই কি লাস্ট ? আমি একটা দাম বলি ................
- এইডাই লাস্ট । যান ৭০ টাকা দিয়েন ।
দুকানদারের কুনডা লাস্ট আর কুনডা ফার্স্ট বুঝতে না পাইরা আমরা পাশের দুকানির কাছে গেলাম । হেরে একটা তরমুজের দাম জিগাইলাম সে কয় আপনি কত দিবেন ? সে নিজে কুনো দাম কয় না । ভাবতাছি , দাম না কইতে চাইলে আমাগোরে মাগনা দিয়া দিলেই তো হয় !! যাই হোক তার দোকান ছাইড়া পাশের দোকানে গেলাম । ওইখান থাইক্যা ৭০ টাকা দিয়া একটা তরমুজ কিনলাম । শাকিল চিল্লাইতাছে হে নাকি এইডারে ঘুষাইয়া লাইথ্যাইয়া ভাইঙ্গা খাইব । , আমি কইলাম , না , কাইট্যা লইয়া যাই । শেষ পর্যন্ত ঐডারে মাঝ বরাবর দুই ভাগ কইরা কাটাইয়া লইয়া গেলাম ।
তরমুজটা আমার হাতে ছিল । কিছুক্ষণ পর মনে হইল জিনিসটা অনেক ভারী । তাই তিনজনে ভাগ বাটোয়ারা কইরা জিনিসটা লইয়া হাঁটতে লাগলাম । বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা মাঠের পাশে গিয়া পৌঁছলাম । মাঠে পুলাপাইন ক্রিকেট খেলতাছিল । মাঠের পাশের রাস্তায় বইয়া পড়লাম । উদ্দেশ্য তরমুজ ভক্ষণ । কিন্তু সমস্যা হইল তরমুজটা দুই ভাগ হইয়া আমাগো দিকে চাইয়া রইছে । যতই চাপাচাপি টানাটানি করি কুনো লাভই হয় না । তরমুজ খালি অনড় হইয়া চাইয়ায় থাহে । এহন কিতা করি ! পাশে একটা ঝোপের মধ্যে অনেকগুলো কাটাওয়ালা পাতা জাতীয় উদ্ভিত দেইখ্যা শাকিল বন্ধু কইল ঐ পাতা দিয়াই সে তরমুজ কাটবে । আমি আর জয় মোটামুটি নিশ্চিত যে , ঐ পাতা দিয়া আর যাই হোক তরমুজ কাটন যাইব না । শাকিল একটা পাতা ছিঁড়া আনল । তারপর ঐডা দিয়া মাঝ বরাবর তরমুজ কাটা শুরু করল ।
শাকিল এবং আমরা এহেন কার্যে সফল হইয়া ব্যাপক আনন্দিত হইলাম । তরমুজটা সুন্দরমত চার ভাগ হইয়া গেল ।
এরপর খাওয়া ।, আহ ! তরমুজের কি স্বাদ !! চাকুম চাকুম !!! এত স্বাদের তরমুজ জীবনে খাইছি কিনা মনে করতে পারতাছিনা । তরমুজের সাদা অংশ সুইদ্যা খাইয়া ফালাইলাম । অফ ! এই গরমে চরম শান্তি !! মাঝখানে খাইতে গিয়া জয়ের তরমুজ দুইবার মাটিতে পইড়া গেছিল । তাতে কি হইছে ? মাটি থেকে তুইল্যা আবার ধুমছে খাওয়া !
খাওয়া দাওয়া শেষ কইরা আবার হাঁটতে শুরু করলাম । মাঝখানে একটা হাটবাজার পড়ল । একটা টিউবওয়েল পাইয়া সেইটাতে হাত মুখ ধুইলাম । অনেক খুইজ্যা একখানা চায়ের দোকান পাইলাম । তাও আবার লাল চা । চা আর বিড়ি ফুইক্যা আবার হাটলাম । এইবার পাইলাম আরও একটা মাঠের খোঁজ । আমি আর শাকিল নগদে শুয়ে পড়লাম ।
জয় বেচারা বইয়া বইয়া আমাগোরে পাহারা দিতাছিল । তারপর তিনজন মিল্লা নিজেদের মনের নানা কথা শেয়ার করতে লাগলাম । পারসোনাল কথাবার্তা , ব্লগে কউয়া যাইব না । আমি উইঠ্যা বসতে না বসতেই শাকিল আমার কোলে হুইত্যা পড়ল । তারপর কইল মাথা বানাইয়া দিতে । আমি অবশ্য এই কাজটা তেমন একটা পারি না । কিছুক্ষন চেষ্টা চালানোর পর শাকিল কইল , এবার তুই শো , আমি কি করি ! আমি শাকিলের কোলে শুইয়্যা পড়লাম । শাকিল আমার চুল টানে । মাথায় কিল ঘুষি মারে । আর আমি পরম শান্তিতে চোখ বুইজ্যা ভাবি , শাকিল আসলেই বস । শাকিলের মত ভাল নাপিত আমি জীবনেও দেহি নাই ।, মাঠে বানানো শেষ হইল । আমার আরাম আর ফুড়ায় না ।, আহ ! শান্তি !
জাউগ্যা এবার ফেরার পালা । হাঁটতে হাঁটতে আবার টুকেরবাজার এলাম । একটা মিস্টির দোকান দেইখ্যা মিস্টি খাইবার খুব মুঞ্চাইল । যেই ভাবা সেই কাজ । মিস্টির দুকানে ঢুইক্যা তিনজনে বিভিন্ন প্রকারের প্রায় সেরখেনেক মিস্টােন্নর ভবলীলা সাঙ্গ কইরা দিলাম । সাথে আরও সেরখানেক সদ্যপ্রস্তুত দই । তারপর আবার হাঁটতে হাঁটতে তেমুখি পৌঁছলাম । সেখানে সুরমা নদীর উপরে একখানা ব্রিজ আছে । ব্রিজের উপরে খোলা হাওয়ায় খোলা মনে কতক্ষণ চিল্লাপাল্লা করলাম । লোকজন পাগল ভেবে দৌড়ানি দেয়ার আগেই ব্রিজ থেকে নেমে নদীর পাড় দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটলাম । তারপর ৩ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় নদী পার হলাম । নদীর পার থেকে হাঁটতে গিয়ে মনে হইল যেন পায়ের ডিজেল ফুড়াইয়া গেছে ।, তাই রিকশাযোগে মেসে পৌঁছলাম ।