আজকের দিনটা মেঘলা। গুড় গুড় মেঘের চাপা গর্জন শোনা যাচ্ছে। আমি যাচ্ছি ব্রুকলি রেস্টুরেন্ট। অবশ্যই ডেটিং। অন্যথায় আমার মতো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের রেস্টুরেন্টে ভিড়ার কথা নয়। আমি স্বস্তিবোধ করছি মনে কিঞ্চিত আনন্দ। কিচ’টা অস¦াভাবিক কারণ একটা সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। জনসমাগমপূর্ণ স্থানে যাওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা ভাবছি। যদি কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়! তবে মনে হয় না হবে। কারণ মিলিও একটা সমাধানে আসতে চাচ্ছে।
আমি গন্তব্যে পৌছে গেছি। মিলি তখনও এসে পৌঁছায়নি। আমি ভাবছি মিলির সাথে গত এক বছরের কথা। সম্পর্কটা ভেঙে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ বর্তমান চরম গতিশীলতার এই আধুনিক যুগে মন ভিন্ন অন্য সংযোগেরও প্রয়োজন। যেটা আমাদের মধ্যে হয়নি। সমস্যাটা আমার দিক থেকেই। মিলি চেয়েছিলো। কিন্তু সে সময়ে আমার মনোজগতে একটা বিশাল পরিবর্তন আসে। আমি আমার নিজের কামনাকে উপলদ্ধি করি।
ঘটনার শুরু প্রাইভেট টিউশনি করতে গিয়ে। ছাত্র মানুষ তাই এমনিতেই ব্যাপারটা চলে আসে। তার উপর গার্লফ্রেন্ড। এসব ভেবেই টিউশনিতে ঢুকেছিলাম। ছাত্রীকে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করানোর গুরু দায়িত্ব। কতটুকু সফল হয়েছিলাম সেটা বিবেচ্য নয়। কারণ বিষয়টা ছাত্রীকে নিয়ে নয়। ছাত্রীর মা কে নিয়ে। মিসেস নাতাশা। মধ্যবয়সী মহিলা। বেশ সুন্দরী, আকর্ষণীয়। ভরাট- বলা যায় কিছুটা স্থ’ল ফিগারের অধিকারিনী। তবে তা মানানসই। আমার স্থির বিশ্বাস তা যে কোনো পুরুষের মাথা চক্কর দেওয়াতে বাধ্য। আমার সাথে শুরু থেকেই বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। তা আরও গভীরতার দিকে যাচ্ছে। তবে আমিই আমাদেরকে চ’ড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। মিলির সাথে আমার চলমান সম্পর্ক। তার সাথে বিছানায় যাবার অধিকার আমার আছে। মিলি তা প্রত্যাশাও করে। কিনÍু মিসেস নাতাশার সাথে পরিচয় হবার পর মিলির প্রতি আমার আকর্ষণ কমে যেতে থাকে। শারীরিকভাবে আমি ওকে কামনা করতে পারছিলাম না। আমার আকর্ষণ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে নাতাশার প্রতি। আমার যৌন বাসনার গতি প্রকৃতি, গন্তব্য আমি আবিস্কার করি এবং সেটা নাতাশার মতো পরিণত বয়স্কাদের প্রতিই। আমি জানি এটা অস¦াভাবিক কিন্তু জানিনা ভবিষ্যতে আমাকে তা কোথায় নিয়ে যাবে!
মিলির সাথে সম্পর্কে থেকে আমি আসলে নাতাশার সাথে কোনো শারীরিক সূত্র স্থাপন করতে পারছিলাম না। মিলি এবং নাতাশা দুপক্ষ থেকেই এ ব্যাপারে চাপ ছিলো। অবশেষে আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই। আর এজন্যই বলেছিলাম আমার স্বস্তি লাভের কথা।
মিলি চলে এসেছে। আমার সামনের চেয়ারটায় এসে বসে। অন্যদিন হলে দেরি করে আসার জন্য আমার মান ভাঙানোর চেষ্টা করতো। কিন্তু আজকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। আর আমিও স্বাভাবিক আছি। মিলির মুখখানা বেশ হাসিখুশি। সেও কি আমার মতো স্বস্তি বোধ করছে!
‘কখন এসেছ!’
‘এইতো আধাঘন্টা।’
‘ভালো। তা আজকের এই ফেয়ারওয়েলে খাবারের মেন্যুটা কি!’ মিলি হেসে বলে।
আমি বুঝতে পারছি পরিবেশটা ও হালকা রাখার চেষ্টা করছে।
‘তুমিই ঠিক করো।’
‘ওকে। আরেকটা কথা- আমাদের মাঝে কিন্তু বন্ধুত্বটা বজায় থাকবে।’
‘আমরা তো আসলে বন্ধুত্ব থেকে খুব বেশিদূর এগোতেও পারিনি।’
‘এটা অবশ্য তুমি ঠিকই বলেছ।’
‘তা বিকাশ কেমন আছে!’
‘হুম ভালো। তোমার কাছে এসেছি ও সেটা জানে। কেন এসেছি, সেটাও। আর এ ব্যাপারে সে আমার চেয়েও অতি উৎসাহী।’
‘হুম।’
‘আচ্ছা আমাদের সর্ম্পকটা আমরা আরো গভীরে কেন নিয়ে যেতে পারলামনা! তুমি কি দয়া করে একটু ব্যাখ্যা করবে। আমিতো চেয়েছিলাম।’
‘আসলে আমারই একটা সমস্যা ছিলো।’
‘সেটা কি সেক্সুয়াল! যদি তাই হয় সেটা তো খুব সহজেই ওভারকাম করা যেত। এ ব্যাপারে আমি তোমাকে সহযোগিতা করতাম।’
‘উহু, তুমি যেটা বললে সেটা নয়। তবে ব্যপারটা মানসিক। আমি আসলে আমার ডিসায়ার সম্পর্কে অবগত হয়েছি।’
‘ বুঝতে পারছিনা। একটু খোলাসা করবে!’
‘আমি আসলে তোমাকে ঠিক গুছিয়ে বলতে পারবোনা।’
‘ইটস ওকে। আগে হলে হয়তো বলার জন্য চাপাচাপি করতাম। কিন্তু এখন আর আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। তুমিও বুঝতে পারছ।’
মূল কথাটা আমি আসলে ওকে বলতে পারিনি। তবে আগে কিছুটা ধারনা দিয়েছিলাম আর বাকিটা তার আন্দাজে। সে বুঝেছে ঘটনাটা ছাত্রীর ওখানেই। তবে কেন্দ্রীয় চরিত্রে যে ছাত্রীর মা সেটা জানেনা।
অর্ডারকৃত মেন্যু চলে এসেছিলো আগেই। খেতে খেতে দুজন কথা বলছি। এরই মধ্যে মিলির সেল ফোনে একটা কল আসে। রিসিভ করে ও কথা বলতে শুরু করে। হঠাৎ তার মাঝে ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
‘কবির, আমাকে এখন উঠতে হবে।’
‘ডিশটা শেষ করে যাও।’
‘উহু, বিকাশ গাড়ি নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে। ওর সাথে এখন যাবো পামেলা রিসোর্ট। তুমি ভালো থেকো কবির।’
আমিও তাকে বিদায় জানাই। আমাকেও যেতে হবে। আমার আকাঙ্খা, ফ্যান্টাসিকে বাস্তবে রূপদান করতে।
tanim zubair
all rights reserved