সকাল থেকেই নেওয়াজের অনেক ব্যস্ততা। চোখে পড়ার মতো। যেন সে যুদ্ধ জয়ে যাচ্ছে। বহুত কষ্টে নিজের উত্তেজনাকে দমিয়ে রেখেছে।তবে যুদ্ধ জয় বাক্যটি আসলে তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
নেওয়াজের ওয়াইফ নিলু রেডি হচ্ছে। আজকে সে চ’ড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অবতীর্ন হতে যাচ্ছে। সে যে এই স্টেজ পর্যন্ত আসতে পেরেছে। এতেই সে মহাখুশি। দ্বিতীয় রানারআপ হলেও এতে তার কোনো আপত্তি থাকবেনা। আর এসবের জন্য সে তার স¦ামীর অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। নিজের অফিস সামলেছে, ঘর সামলেছে, বাচ্চাদের দেখভাল করেছে। পাশাপাশি সে মনে মনে বেজায় রোমাঞ্চ অনুভব করছে। এতদিনে সে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে আজকের পর সেটা কোথায় যাবে তা ভেবেই সে রোমাঞ্চিত।
নেওয়াজের এখন কাজ হলো বাচ্চাদেরকে নাস্তা করাবে। তারপর তাদেরকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসবে। অফিসে সে আজকে একটু লেট করে যাবে। বসকে বলা আছে। তার আগে নিলুকে ঢাকা আইডল অনুষ্ঠানস্থলে দিয়ে আসবে। নেওয়াজ তার স্ত্রীর এই সাফল্যে গর্বিত। সাধারণ জীবনযাত্রার মানুষ সে। তার স্ত্রীও ছিলো একজন সাধারণ গৃহিনী। সংসার বাচ্চা কাচ্চা সামলানো ছিলো যার কাজ। আর আজকে সে তার পরিবারের জন্য কত বড় সম্মান বয়ে আনতে যাচ্ছে! বউয়ের পরিচয়ে নেওয়াজ নিজেও অনেকটা পরিচিত হয়ে উঠেছে। অফিসের সবাই তাকে সমীহ করে। পাড়া প্রতিবেশীরাও এখন আগ বাড়িয়ে কথা বলে।
‘এই শোনো, বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে সোজা বাসায় চলে আসবে। দশটার মধ্যে অবশ্যই বের হতে হবে! কত কিছু এখনও করা বাকি।’
‘তুমি চিন্তা করোনা। তোর টেনশন ফ্রি থাকাটা খুব জরুরী। আল্লাহ ভরসা। আমি যাচ্ছি। তুমি দরজাটা লাগিয়ে দাও।’
নিলু আবার নিজের পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তার দুচোখে অনেক স্বপ্ন, রঙ্গিন জীবনের হাতছানি।
ঢাকা আইডলে নিলু হয়েছে দ্বিতীয় রানারআপ। এতেই বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। সবাই শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, নিলুর প্রশংসা করছে। পাড়া প্রতিবেশিরা আনন্দ করছে। তারা দুজন গর্বিত যে সবাইকে আনন্দ উদযাপনের একটা উপলক্ষ্য করে দিতে পেরেছে। নেওয়াজের ইচ্ছে করছে ব্যান্ডপার্টি নিয়ে সে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। সেই হবে বাদক দলের প্রধান। আসে পাশের সব বাড়িতে মিষ্টি বিতরন করা হয়েছে। বন্ধু বান্ধব আতœীয় স্বজন সবাই এসেছে বাসায়। উৎসব মুখর পরিবেশ। তাদের ছা পোষা জীবনে এমন স্মরনীয় মুহূর্তের জন্য নেওয়াজ মনে মনে নিলুকে ধন্যবাদ জানায়। অফিসের অনেকেই তাকে ফোন করেছে। আগামীকাল তাদের সবাইকে মিষ্টি মুখ করাবে। নিজেকেও নেওয়াজের সেলেব্রিটি মনে হচ্ছে।
নিলুর জীবন এখন আর আগের মতো নেই। সে এখন মহা ব্যস্ত। টাইট তার শিডিউল। আজ এখানে প্রোগাম, কাল টিভি চ্যানেলে, পরশু অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি। রাতে বাসায় ফিরতে লেট হয়। সমস্যা হয়না কারণ তার যাতায়াত এখন গাড়িতে। এমনকি অনেক রাতে বাসায় ফিরতে পারেনা। বিশেষ করে যখন দূরের কোনো গানের প্রোগামে যায়। নেওয়াজ এ সবই মেনে নিয়েছে। মেনে নেওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই। কারণ সে তার বউয়ের সফলতাই চেয়েছিলো। তাকে সর্বদা উৎসাহ আর সমর্থন যুগিয়ে তাকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। নেওয়াজের মনটা অনেক সময় খারাপ হয়। কারণ নিলু তাকে একদমই সময় দিতে পারে না। ওর সঙ্গ থেকে সে পুরোপুরি বঞ্চিত। বাচ্চারদরকে নিয়েই এখন নেওয়াজের সময় কাটে।তাদের কে সঠিকভাবে প্রতিপালনেই তার ব্যস্ততা।
এভাবে আরো বেশ কিছুদিন কেটে যায়। চারদিকে কানাঘুষা, ফিসফাস। মিডিয়াতেও অনেক খবর বেরোয়। হতে পারে সত্যি হতে পারে মিথ্যা। তারপরও নেওয়াজ তার বউয়ের প্রতি আস্থা বিশ্বাস ভালোবাসা রাখে। নিজেকে স্বান্তনা দেয় একজন সেলেব্রিটির হাসব্যান্ড সে। আর সেলেব্রিটিকে নিয়ে মিডিয়া গসিপ থাকবেই। তাদেরকেও বাজার ধরে রাখতে হবে।
নিলু গত এক সপ্তাহ ধরে বাসায় ফিরছে না। মোবাইলেও নেওয়াজ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয় । মাঝে মাঝেই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তার কয়েকটি নাম্বার। নেওয়াজের কাছেও সবকটি নেই। নেওয়াজ ভাবে কতদিন বাচ্চারা তার মাকে মা বলে ডাকতে পারেনা। বাচ্চারা মায়ের অপেক্ষায় থেকে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ে। একজন মানুষের আর কত ধৈর্য থাকে। সেও তো রক্ত মাংসের মানুষ। এবার নিলু বাসায় ফিরে এলে নেওয়াজ তার সাথে এসব ব্যাপারে কথা বলবে। বলাটা জরুরি হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার সকালে নিলু বাসায় ফেরে। সাথে করে নিয়ে এসেছে ডিভোর্স লেটার। নেওয়াজের আর কিছু জিজ্ঞেস করা হয় না।
tanim jubair
all rights reserved