somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারাই হারাই সদা হয় ভয়

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হারানোর ভয় আমাদের সবার ই থাকে। কত্ত কত রকম হারানোর ভয়! হঠাৎ হারানোর কথা ক্যানো? কিছু আউট অফ সিলেবাস জিনিষ নিয়ে পড়ালেখা হচ্ছিলো। সেখান থেকেই হারানো বিষয়ক চিন্তা মাথায় ঢুকলো। জন্মের পর বাবা মার ইচ্ছে আর ধর্মীয় বিধানানুযায়ী মাথার চুল হারালাম। সেই থেকে শুরু।
আমার অবস্থা জোক্সের সেই ছেলেটার মত। যার সব রচনাই গিয়ে ঠ্যাকে সেই কুমীর এর কথায়। শৈশবের কথা আসবেই। প্রথম হারানোর অভিজ্ঞতা তো সেখানেই।
শৈশবে কারো বাসায় বেড়াতে গেলে খুব বেশি লাফালাফি করতাম না আমি। অবশ্য বেড়া-বাড়িতে পিচ্চি থাকলে আর ভুলে সে আমাকে অন্দরমহলে খেলতে ডাকলে তার শিশুজীবনের মতো শিক্ষা হয়ে যেতো। খ্যালনা ছাড়া তেমন কিছুতে আগ্রহী ছিলাম না। সেগুলো নাস্তানাবুদ করতাম এই আর কি!
বাল্যবন্ধু ইফতির কালেকশানে খুব সুন্দর একটা ট্রেন এসেছে। কয়লার ইঞ্জিনে যেমন কমলাটে আলো জ্বলে, সেই খ্যালনার ও সেরকম আলোর ব্যবস্থা। আওয়াজ করে কু ঝিকঝিক। আবার দুই চারখান গাছ আছে, আছে টানেলের সেট আপ। পুরাই জমজমাট অবস্থা। দাম নাকি সেই ৯২ এর আমলে ১০০০ টাকার বেশি। ওর মামা চাচা কেউ দিয়েছে।
বাসায় এসে চিল্লাপাল্লা করে অস্থির আমি। ঐ ট্রেন ই চাই আমার। অবস্থা বেগতিক দেখে আব্বা তখনকার দিনের খ্যালনাপাড়া পিকচার প্লেস আর নিউমার্কেট চষে বেড়ালেন। সবাই হলুদ রঙা সরু আর ছোট ট্রেন বের করে দ্যাখায় আর আমার রাগ আরো বাড়তে থাকে। দোকানদাররা আব্বার সাথে একসুর এরকম ট্রেন এ তল্লাটে নেই। খেয়াল করলাম আব্বা আর দোকানদার চোখ টেপাটিপি করছে। বুঝলাম আব্বা চাচ্ছে আমাকে শান্ত করতে। ঘণ্টাখানেক খুঁজে আমি খুব হয়রান হয়ে নিজেই বললাম এ ফকিরা শহরে পাওয়া যাবে না। ঢাকায় যাওয়া লাগবে। সে যাত্রা বুঝলাম চাইলেই সব জিনিষ পাওয়া যায় না।

সাগর ছিলো সেলিম আঙ্কেলের ছেলে। রুদ্রর ভাইপো। রুদ্র মানে রুদ্র শহীদুল্লাহ। টিভিতে একদিন কোন এক নাটকের শেষে রুদ্রের “ভালো আছি ভালো থেকো” গানটি প্রচার হচ্ছিলো। আম্মা সেই সময় ই আমাকে রুদ্র সম্পর্কে ধারণা দেওয়া ব্যর্থ প্র্যাস চালালো। মোটেও পাত্তা দিলাম না। শুধু মাথায় রয়ে গেলো সাগরের চাচা রুদ্র নাটক গান এসব লেখে। খ্যালার সাথী ছিলাম আমরা। খ্যালোয়াড় হিসেবে সাগর খুব ই বিরক্তিকর। ওয়াইড নো বল করে একাই হারিয়ে দিতো দলে নিলে।
সাগরের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি ক্লাস এইটের পর।
ইস্কুলের প্রথম সপ্তাহের দিকে একটা ছেলে আমার পাশে বসলো। আমি বোকা সোকা পাবলিক। সে বাতবায়ু ত্যাগ করে আমার নামে অপবাদটা দিয়ে দিলো। সেই প্রথম কেউ এভাবে হেয় করলো। খুব ই মেজাজ খারাপ হলেও আমি কিছুই বলিনি। ছেলেটা ন্যাড়া হওয়ার পর সুযোগ বুঝে একদিন মাথায় হাত বুলিয়ে একরম শোধ নিলাম।
এরপর দিন যেতে থাকলো।

কিসের জানি ছুটি হলো।

আম্মা একদিন এসে কাদো কাদো হয়ে বললো, “ঐ যে ঐ ছেলেটা তোর পাশে বসতো ও মারা গেছে। পানিতে ডুবে। আজ মিলাদ।” ওর মা কে স্বান্ত্বনা দিতে আমাকে বাসায় রেখে গেলো ইস্কুলের আম্মা পার্টির সবাই।
স্পষ্ট মনে আছে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো সে দিন...ভেসে যাচ্ছিলো আশপাশ...পাশের একতলা বাড়ির ছাদে বর্ষা আছড়ে পড়ছিলো...ভিজছিলো চড়ুই পেয়ার গাছের ডালে চুপচাপ আমার তাড়া খেয়ে বারান্দায় বসতে না পেরে...
আমার শুধু মনে হচ্ছিলো কিভাবে ঐ ছেলে মা কে ছেড়ে একা একা কবরের ভিতর ভিজছে। কবর ভেসে যায় নি তো?
আম্মা যখন ভুনা খিচুড়ী আনলো ওর মিলাদের, খেতে পারলাম না। শুধু মনে হচ্ছিলো ভেজা মাটি খাচ্ছি কবরের...

আচ্ছা, হারিয়ে গিয়েছি নাকি হারিয়ে যাইনি কোনটা জরুরী খবর?

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×