এবারকার তালেবর স্বয়ং আমি। স্থানঃ কিংবদন্ততীর চাঁদ সদাগরের খুল্লনাদেবীর শহর। কালঃ গ্রীষ্ম। সালঃ ইংরাজি ২০১৪, ৮ই মে। তাহার পূর্বদিন দেশে পৌঁছাইয়াছি। কিয়ৎক্ষণ আগে হলুদ এর আয়োজন হইয়া গিয়াছে। নিজের হলুদের তেহারি ঠিকমতো চাহিতে ও খাহিতে না পারিয়া স্বীয়মনে অনুতাপ করিতেছি। পাশে বসিয়া আছে নব্য নায়েবে জামাই নাঈম ও ভগিনী শেখ উম্মুল খয়ের ফাতেমা। হলুদ পরবর্তী স্নান সারিয়া আসিয়াছি। ঠাট্টার সম্পর্কের আত্মীয়রা বসিয়া থাকিলে যা হয় কি। মার্কিন মুল্লুক ফেরত আসিয়াছি আর চকোলেট আনি নাই তা কি হয়? ব্যাগ হইতে ৬০% ডার্ক চকোলেট বাহির করিয়া নায়েবে জামাই সমুখে ধরিলাম। ভাবিলাম চালাক চতুর এই অতি কচি বয়সে সংসারী ছোকরাটিকে বোকা বানানো যাউক । বেচারা ও বেচারি ব্যাপক সোৎসাহে উহা একটু মুখে দিতেই হাসি হাসি গৌরবর্ণ খোমাখানা পাণ্ডুর বদন হইয়া গেলো। আমি ভিতরে ভিতরে “বোঝ ঠ্যালা” ভাব চাপিয়া বাইরে চিরাচরিৎ বোকা বদনে সমবেদনা জানাইলাম। উহারা অনুরোধ জানাইলো এই বিষ আর কাহাকেও না ভক্ষণ করাইতে।
এমন সময় হঠাৎ খেয়াল করিলাম আমার বাগদানের আংটিখানা যাহা আমার সবেধন নীলমণি শ্বশুরজি গতকল্যই আমাকে পরাইয়াছেন উহা হস্ত হইতে নিখোঁজ হইয়াছে! হৃদপিণ্ডের একখানা স্পন্দনও চামেতালে নিখোঁজ হইয়া গেলো। লোকলজ্জার বিষয় ভাবিয়া খোঁজ খোঁজ রব তুলিতে পারিতেছিনা। নিজে কতক্ষণ হলুদের মঞ্চের চারপাশে ঘুরঘুর করিলাম। টাট্টিখানা কাম বাথরুম এ ঢুঁ মারিলাম। কূলকিনারা করিতে পারিলাম না। কি করিয়াছি সেইটুকুও মনে করিতে পারিলাম না। পায়জামার পকেট চেক করিলাম মিলিলো না। সহজে লাচার হইয়া পড়িলাম। ভরসা হইলো এই চাপা উত্তেজনা আর কারো ঘাড়ে চাপাইয়া দেয়ার জন্য এইবারকারে নায়েবে জামাই, তাহার গুণমুগ্ধ স্ত্রী শেখ উম্মুল খয়ের ফাতেমা আর স্বীয় ভ্রাতাকে পাওয়া গেলো। যদিও আইএসসিতে কেমিস্ট্রি পড়িয়া ধাতুজাত অলংকার দ্রব্যাদির প্রতি আমার তুচ্ছতাচ্ছিল্য বরাবরি অভিজাত লেভেলের তবুও বাগদানের আংটি বিবাহের পূর্বরাত্রে হারাইয়া ফেলা চরম দ্বায়িত্বহীনতার কাজ বুঝিতে পারিতেছিলাম।
দৃশ্যখানা দেখিবার মতো হইলো। ঢাকঢাক গুড় গুড় করিয়া হলুদের মঞ্চের আশে পাশে একবার ভ্রাতা যায়, একবার নায়েবে জামাই অথবা তাহার নবপরিনীতা যায়, ইতি উতি চায় কিন্তু কেহই লাভবান হয় না।
বাঙাল জাতির সমস্যা হইলো... না থাক আর না বলি, আমিও তো উহাদের স্যাম্পল। সুরা কেরাত কোনকিছুই ঠিকমতো আওড়াই নাই সেই বিপদের দিন। তাহারপরও দয়াময়ের মায়াময় রূপ দেখিলাম। “যে জাতি উহার ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের চেষ্টা করে না উহার ভাগ্যে হাসিনা খালেদা সজীব তারেক ই জুটিবে” এই ধর্মীয় বাক্যখানাই আসলে আমাকে সেইদিন পথ দেখাইয়া ছিলো। হঠাৎ কি মনে করিয়া হলুদের পাঞ্জাবীখানা হাতড়াইলাম নিজেই। বাম পকেটে মিলিলো না। ডান পকেটে মিলিয়া গেলো! দয়াময় বড়ই রসময়!
আকর্ণ বিস্তৃত যে হাসি খানা দিয়াছিলাম আজ অবধি সেই ই আমার শেষ আকর্ণ বিস্তৃত হাসি